Coromandel Express accident

পুরী থেকে গাড়ি ভাড়া ৫০ হাজার! এখনও হাহাকার তৎকাল টিকিটের

দক্ষিণ ভারতের কিছু জায়গা থেকে গত কয়েক দিনে ঘুরপথে ট্রেন চললেও বাঙালির প্রিয় পুরী থেকে রেল পরিষেবা একেবারে আটকে গিয়েছিল গত কয়েক দিন। সেই সুযোগে যথেচ্ছ ভাড়া হাঁকা হয়েছে সর্বত্র।

Advertisement

নীলোৎপল বিশ্বাস

কলকাতা শেষ আপডেট: ০৭ জুন ২০২৩ ০৬:৪৯
Share:

পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে আরও কিছু দিন লাগবে। —ফাইল চিত্র।

কলকাতামুখী বাসে হঠাৎ হানা ওড়িশার পরিবহণ দফতরের ইনস্পেক্টরদের। যাত্রীদের এক- এক জনের কাছে গিয়ে তাঁরা জানতে চাইছেন, কত করে ভাড়া নেওয়া হয়েছে? যাত্রীদের দাবি, আসনপিছু কারও থেকে ভাড়া চাওয়া হয়েছে তিন হাজার, কারও থেকে পাঁচ হাজার! এমনও যাত্রী রয়েছেন, কলকাতার বাবুঘাট পর্যন্ত পৌঁছে দিতে যাঁর থেকে বাস ভাড়া বাবদ নেওয়া হয়েছে মাথাপিছু সাড়ে সাত হাজার টাকা! অসুস্থ বাবাকে নিয়ে দ্রুত বাড়ি ফেরার আশায় বাধ্য হয়ে সেই টাকাই গুনতে হয়েছে তাঁকে।

Advertisement

কিন্তু ভাড়া যেখানে এক হাজার থেকে ১২০০ টাকা, সেখানে এত টাকা নেওয়া হচ্ছে কেন? কন্ডাক্টরকে ডেকে কড়া ভাষায় ভর্ৎসনা করে দ্রুত টাকা ফেরতের নির্দেশ দিলেন সংশ্লিষ্ট ইনস্পেক্টর। এর পরে তিনি ওই বাসের জরিমানা করেছেন ২০,৫০০ টাকা! ওড়িশা পরিবহণ দফতর এই ঘটনার ভিডিয়ো সমাজমাধ্যমে দিয়ে দাবি করেছে, ভয়াবহ রেল দুর্ঘটনার পরে একাধিক কলকাতাগামী বাসের বিরুদ্ধে এমনই পদক্ষেপ করা হয়েছে। যদিও ভুক্তভোগীদের দাবি, হাতে গোনা কয়েকটি বাসের বিরুদ্ধে এমন পদক্ষেপ করা হলেও ওড়িশার পাশাপাশি দক্ষিণ ভারতের নানা জায়গায় গাড়ি ভাড়া নিয়ে এমনই কালোবাজারি চলছে। পরিস্থিতি জটিল হয়ে রয়েছে পুরী, মুন্নার, তিরুপতির মতো ভ্রমণ স্থানগুলিতে।

দক্ষিণ ভারতের কিছু জায়গা থেকে গত কয়েক দিনে ঘুরপথে ট্রেন চললেও বাঙালির প্রিয় পুরী থেকে রেল পরিষেবা একেবারে আটকে গিয়েছিল গত কয়েক দিন। অভিযোগ, সেই সুযোগে যথেচ্ছ ভাড়া হাঁকা হয়েছে সর্বত্র। কলকাতাগামী বেসরকারি বাস ভাড়া চেয়েছে আসনপিছু তিন-চার হাজার টাকা করে। ব্যক্তিগত ভাবে গাড়ি ভাড়া করতে গিয়ে শুনতে হয়েছে, চার যাত্রীকে কলকাতা পৌঁছে দিতে ভাড়া লাগবে ৩৫-৩৬ হাজার টাকা! সাত জন যাত্রী যেতে পারেন, এমন গাড়ির ভাড়া ৫২-৬০ হাজার টাকা! একই রকম পরিস্থিতি বিমানের টিকিটেরও। পুরী বা দক্ষিণ ভারতের যে কোনও প্রচলিত জায়গা থেকে কলকাতাগামী বিমানের ভাড়া বাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে প্রায় দ্বিগুণ। সব চেয়ে কম ভাড়া ১৩-১৪ হাজার টাকা।

Advertisement

এই পরিস্থিতিতে ওড়িশা সরকারের উদ্যোগে কিছু বাস চালু করার কথা ঘোষণা করলেও ভোগান্তির তেমন বদল হয়নি। ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, বিনামূল্যের ওই সরকারি বাসে এখন রীতিমতো বাদুড়ঝোলা পরিস্থিতি। উঠতে পারলেও বসার জায়গাটুকু পর্যন্ত নেই। মঙ্গলবার ওই সরকারি বাসের অপেক্ষায় থাকা অনেকে জানাচ্ছেন, তাঁদের আগে লাইনে রয়েছেন অন্তত ৩০০ জন! মধ্যমগ্রামের বাসিন্দা রঞ্জিত সর্দার বললেন, ‘‘কাল রাত থেকে পুরী বাসস্ট্যান্ডে বসে আছি। একটা বাসেও উঠতে পারিনি। বয়স্ক কয়েক জন সঙ্গে রয়েছেন, তাঁদের নিয়ে এ ভাবে কি যাওয়া যায়?’’ কিন্তু হোটেল ছেড়ে বাসস্ট্যান্ডে কেন? কলকাতা বিমানবন্দর এলাকার বাসিন্দা তমালিকা ঘোষ বললেন, ‘‘শনিবার ফেরার ট্রেন ছিল আমাদের। বাতিল হয়েছে। হোটেলে কথা বলতে গেলে জানানো হয়, অতিরিক্ত সময়ের জন্য প্রতিদিন দু’হাজার টাকা করে লাগবে। ১২০০ টাকার হোটেলের অতিরিক্ত সময়ের দাম দু’হাজার!’’ একই অভিযোগ বেশ কয়েক জন ভুক্তভোগীর। তাঁরাও জানাচ্ছেন, দুর্ঘটনার পরে যখনই ট্রেন বাতিল শুরু হয়েছে, তখন থেকেই চলছে ‘ঝোপ বুঝে কোপ’ মারা।

সোমবার রাত থেকে ট্রেন চলাচল শুরু হলেও ভোগান্তির শেষ হয়নি এখনও। তিরুপতি থেকে সদ্য কলকাতায় ফেরা সীমা রায় বললেন, ‘‘আমাদের শুক্রবার রাতের ট্রেন বাতিল হয়েছিল। কোনও মতে সোমবার মধ্যরাতে কলকাতায় ফিরেছি। যাঁদের আগামী বুধ-বৃহস্পতিবারের টিকিট রয়েছে, তাঁদের সমস্যা হওয়ার কথা নয়। কারণ, সংরক্ষিত আসন পেয়ে যাবেন। কিন্তু গত শুক্র থেকে সোমবারের মধ্যে যাঁদের টিকিট ছিল, তাঁদের ট্রেন বাতিল হওয়ায় ভরসা সেই তৎকাল টিকিট। নতুন করে ট্রেন চালু হওয়ার পরে যত মানুষ তৎকালে টিকিট কাটতে যাচ্ছেন, তত সংখ্যায় তৎকাল টিকিট কোথায়?’’ পুরীতে আটকে থাকা আর এক যাত্রী বললেন, ‘‘ফলকনামা এক্সপ্রেস, ধৌলি, শালিমার-চেন্নাই এক্সপ্রেস তো বটেই, পুরী-শিয়ালদহ দুরন্ত এক্সপ্রেসের মতো ২১টা ট্রেন এখনও পর্যন্ত বাতিল। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে আরও কিছু দিন লাগবে।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement