লোকারণ্য: পুজোর আর বাকি এক সপ্তাহ। উপচে পড়া ভিড় নিউ মার্কেট চত্বরে। রবিবার। ছবি: স্বাতী চক্রবর্তী।
পুজো শুরুর আগে বাকি আর একটা রবিবার। পুজো শপিংয়ের ‘স্লগ ওভার’ কার্যত শুরু হয়েছে গিয়েছে বলা চলে। আর এই ‘স্লগ ওভারে’ চুটিয়ে কেনাকাটা করল আমজনতা। রবিবার দুপুরের পর থেকে রোদের তেজ যত কমেছে, ততই শহরের বিভিন্ন কেনাকাটার জায়গা চলে গিয়েছে জনতার দখলে। কার্যত পা ফেলার জায়গা ছিল না নিউ মার্কেট, গড়িয়াহাট থেকে শুরু করে শহরের বিভিন্ন শপিং মলগুলিতে। ভিড় সামলাতে ছিল অতিরিক্ত পুলিশও। তবে দুপুরের এক পশলা বৃষ্টিতে কিছুটা হলেও তাল কেটেছে এ দিনের কেনাকাটায়।
কলকাতা হাইকোর্টের রায়ে শুক্রবারই স্পষ্ট হয়েছিল দেওয়াল লিখন। এ বছরও পুজো মণ্ডপ দর্শকশূন্য রাখার নির্দেশ দিয়েছে আদালত। এই রায়ে পুজোর আনন্দ যে বেশ কিছুটা ফিকে হয়েছে, তা বলার অপেক্ষা রাখে না। তবে তার রেশ যে পুজোর কেনাকাটায় বিন্দুমাত্র প্রভাব ফেলেনি, তারই প্রমাণ মিলল এ দিন শহরের বাজারগুলি ঘুরে। সকালের দিকে কিছুটা ফাঁকা থাকলেও দুপুর গড়িয়ে বিকেল হতেই সেগুলি চলে যায় ক্রেতাদের দখলে। দুপুরে বৃষ্টির সময়ে আবার অনেকে ভিড় জমান রেস্তরাঁয়। বৃষ্টি কমতেই ফের রাস্তায় নামে মানুষের ঢল।
মুখে হাসি ব্যবসায়ীদেরও। নিউ মার্কেটের ব্যবসায়ী সেলিম আহমেদ বলেন, ‘‘দুপুরে ভেবেছিলাম রবিবারের বাজারটা বুঝি মাটি হল! কিন্তু বৃষ্টি তেমন না হওয়ায় রক্ষা পাওয়া গিয়েছে। পুজোর আগে ক’দিন এমন ব্যবসা হলে এ বছর কিছুটা রক্ষা পাওয়া যাবে।’’ একই ছবি ছিল হাতিবাগান ও গড়িয়াহাট এলাকায়। ছোট-বড় সব দোকানেই ছিল ক্রেতাদের লম্বা লাইন। গাড়ির লম্বা সারি দেখা গিয়েছে গড়িয়াহাট, নিউ মার্কেট, বিভিন্ন শপিং মল চত্বরে। এ দিন গড়িয়াহাটে বান্ধবীদের সঙ্গে কেনাকাটা করতে আসা অন্বেষা ভট্টাচার্যের কথায়, ‘‘আর তো মাত্র এক সপ্তাহ। এখন কেনাকাটা না করলে তো আর করাই হবে না। দুপুর দুপুর এসেছিলাম একটু ফাঁকা হবে ভেবে। কিন্তু তা আর হল কোথায়! সব জায়গাতেই তো দেখছি লম্বা লাইন।’’ দক্ষিণ কলকাতার একটি শপিং মলের জেনারেল ম্যানেজার দীপ বিশ্বাস বললেন, ‘‘শনিবার ছুটি থাকায় প্রচুর লোকজন এসেছিলেন। আজও একই চিত্র। লোকের সংখ্যা আজ এক লক্ষ ছাড়িয়ে গেলেও অবাক হব না।’’
শেষ মুহূর্তের কেনাকাটার ভিড় প্রিন্স আনোয়ার শাহ রোডের একটি শপিং মলে। রবিবার। নিজস্ব চিত্র।
এ দিন ভিড় নিয়ন্ত্রণে বেগ পেতে হয়েছে পুলিশকেও। কোথাও লাঠি হাতে, আবার কোথাও দড়ি ফেলে ভিড় নিয়ন্ত্রণ করতে হয়েছে। গড়িয়াহাট মোড়ের পাশাপাশি নিউ মার্কেট চত্বরেও রাস্তার দু’পাশে গাড়ির লম্বা সারি নিয়ন্ত্রণে লাঠি হাতে অতিরিক্ত পুলিশকর্মী মোতায়েন করা হয়েছিল দুপুরের পর থেকেই।
নিউ মার্কেটে যান নিয়ন্ত্রণে ব্যস্ত এক পুলিশকর্মী বললেন, ‘‘শনিবারও ভাল ভিড় হয়েছিল। তবে আজ গাড়ির যা চাপ, তা শনিবারের ভিড়কেও ছাপিয়ে যাবে মনে হচ্ছে।’’
এ দিন ভিড়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে চোখে পড়েছে অসচেতনতার ছবিও। কাউকে বিনা মাস্কে, কাউকে আবার মাস্ক থুতনিতে নামিয়ে ভিড়ের মধ্যে দেদার ঘুরতে দেখা গেল। সামনে দিয়ে জনতার বড় অংশ বিনা মাস্কে ঘুরে বেড়ালেও নীরব দর্শকের ভূমিকায় থাকলেন পুলিশকর্মীদের একাংশ। তাঁদের নিস্পৃহ মনোভাব নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন এ দিন বাজার করতেআসা অনেকেই।