পাশে: মহরমের দিনে বদরতলা খানকাহ শরিফে ইফতারের সামগ্রী পৌঁছে দেন পুজো কমিটির সদস্যরা। রবিবার, নাদিয়ালে। নিজস্ব চিত্র
এ এক অন্য মহরম। পথে নেই তাজিয়া, নেই লাঠিখেলা। করোনা-কালে ছোঁয়া এড়াতে এ বার মহরমে পথে নেমে শোভাযাত্রার অনুমতি দেয়নি পুলিশ। কিন্তু তাতে কী! মুসলিমদের শোকপালনের এই দিনে বন্দর এলাকার নাদিয়ালে তাঁদের পাশে এসে দাঁড়ালেন এলাকার বিভিন্ন পুজো কমিটির সদস্যেরা। রবিবার মহরমের দিনে রোজা রাখা মানুষগুলোর জন্য ইফতারের খাওয়াদাওয়ার ব্যবস্থা করে আরও এক বার হিন্দু-মুসলিম সম্প্রীতির নির্দশন রাখল নাদিয়াল।
এ দিন দুপুর দুপুরই নাদিয়ালের বিভিন্ন মুসলিম মহল্লায় রোজা ভাঙার ইফতারের সামগ্রী সঙ্গে নিয়ে পৌঁছে গিয়েছিলেন নীহার রায়, বীরবল গিরি, সুরজিৎ অধিকারীরা। মহরমের পড়ন্ত বেলায় বদরতলার আয়েশা-আঞ্জুম-মিনহাজদের বাড়িতে বাড়িতে বিলি করছিলেন খেজুর, মিষ্টি, তেলেভাজা। সেই সঙ্গে জলের বোতলও। বদরতলার একটি দুর্গাপুজো কমিটির সম্পাদক বীরবল বলেন, ‘‘আমাদের দেশে হিন্দু-মুসলিম সম্পর্ক বরাবরই অটুট ছিল। কিন্তু এখন সেই বন্ধনে ছেদ ঘটাতে চাইছেন অনেকে। তাই এখন আমাদের সকলেরই একজোট হওয়ার সময়।’’ কিছুটা দূরে গাড়ি নিয়ে দাঁড়িয়ে এই সম্প্রীতির দৃশ্য দেখতে দেখতে নাদিয়াল থানার ওসি ময়ূখময় রায়ের প্রতিক্রিয়া, ‘‘করোনা-কালে মহরমে দিনে এই সম্প্রীতির ছবি একটা বড় প্রাপ্তি তো বটেই।’’
তবে শুধু এ দিনই নয়। মাসখানেক আগে বকরি-ইদের দিনে এলাকার শান্তিশৃঙ্খলা বজায় রাখতে পুজো কমিটির সদস্যেরা মোটরবাইক নিয়ে স্বেছাসেবকের কাজ করেছিলেন। দু’টি সম্প্রদায়ের মধ্যে সদ্ভাব বজায় রাখতে এ ভাবেই তাঁর নিরন্তর প্রয়াস চালিয়ে যাচ্ছেন বলে মনে করছেন স্থানীয় একটি পুজো কমিটির সম্পাদক রুদ্রেন্দু পাল। পেশায় স্কুলশিক্ষক রুদ্রেন্দুর কথায়, ‘‘ধর্ম যে যার, কিন্তু উৎসব সকলের। জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে প্রত্যেক উৎসবেরই একটা মানবিক দিক আছে। মহরম মুসলিমদের শোকপালনের দিন হলেও আমাদেরও তাঁদের প্রতি কিছু কর্তব্য আছে। তাই তাঁদের পাশে দাঁড়ানোটা আমাদের কর্তব্য বলে মনে করি।’’ এলাকার বিধায়ক আব্দুল খালেক মোল্লা আবার বলছেন, ‘‘এই করোনা পরিস্থিতির মধ্যেও মহরমের দিনটিকে স্মরণীয় রাখতে এলাকার হিন্দুরা যে ভাবে এগিয়ে এসেছেন, তাকে কুর্নিশ জানাতেই হয়।’’
স্থানীয় সূত্রের খবর, অতীতে ওই এলাকায় দুই সম্প্রদায়ের মধ্যে সদ্ভাব ছিল না। সেই তিক্ত অভিজ্ঞতাকে দূরে সরিয়ে রাখতে বছর কয়েক আগে নাদিয়াল থানার উদ্যোগে দুই সম্প্রদায়ের মানুষদের নিয়েই তৈরি হয় ‘পিস কমিটি’। সেই কমিটির যুগ্ম সম্পাদক মহম্মদ ওয়ারিশ বলেন, ‘‘ইদুজ্জোহা ও মহরম উপলক্ষে এলাকার হিন্দুরা যে ভাবে পাশে দাঁড়ালেন, তা ভুলব না। এ বারের দুর্গাপুজোয় নাদিয়ালের প্রতিটি পুজোমণ্ডপে পাড়ার মুসলিম যুবকেরা স্বেছাসেবক হিসেবে থাকবেন। মণ্ডপে শান্তি বজায় রাখতেই সেখানে থাকবেন ওঁরা।’’