ফাইল চিত্র।
স্থানীয় ইমামদের মাধ্যমে প্রচার চালানো সত্ত্বেও পোলিয়ো টিকাকরণে আগ্রহ দেখাচ্ছেন না মেটিয়াবুরুজ এলাকার বাসিন্দাদের একটি অংশ। করোনার জন্য দু’বছর বন্ধ থাকার পরে গত রবিবার বুথভিত্তিক পোলিয়ো টিকাকরণ কর্মসূচি শুরু করা হয়েছে। সোমবার বাড়ি বাড়ি গিয়ে পোলিয়োর টিকা দিয়ে এসেছেন কলকাতা পুরসভার স্বাস্থ্যকর্মীরা। কিন্তু পুরসভার স্বাস্থ্য বিভাগ সূত্রের খবর, গত দু’দিনে মেটিয়াবুরুজ তথা ১৩৯, ১৪০ ও ১৪১ নম্বর ওয়ার্ডের বেশ কিছু বাসিন্দা সন্তানদের পোলিয়ো খাওয়াতে রাজি হননি। বিষয়টি নিয়ে চিন্তায় পুরকর্তারা। তাঁরা জানান, ওই এলাকার সমস্ত শিশু যাতে পোলিয়োর টিকা পায়, তার জন্য জোরদার প্রচার চালানো হবে। এই উদ্যোগে স্থানীয় ইমামদের আরও বেশি করে যুক্ত করতে চায় পুরসভা।
মেটিয়াবুরুজের ১৩৯, ১৪০ ও ১৪১ নম্বর ওয়ার্ডের বেশ কিছু শিশু টিকাকরণ কর্মসূচিতে নিয়মিত ভাবে অংশগ্রহণ করছে না বলে গত মে মাসে পুরসভার স্বাস্থ্য বিভাগ জানতে পেরে। ওই এলাকার শিশুরা যাতে নিয়মিত ভাবে পোলিয়ো-সহ সব ধরনের টিকা নেয়, তার জন্য মেয়র ফিরহাদ হাকিম, ডেপুটি মেয়র অতীন ঘোষ-সহ পুর স্বাস্থ্য বিভাগের কর্তারা জুনের প্রথম সপ্তাহে মেটিয়াবুরুজ গার্লস স্কুলে স্থানীয় বাসিন্দা ও এলাকার ইমামদের নিয়ে সচেতনতা শিবিরের আয়োজন করেন। কিন্তু, সমস্যা আরও বাড়ে সম্প্রতি মেটিয়াবুরুজ এলাকার নর্দমার জলে পোলিয়োর জীবাণু (ভিডিপিভি, টাইপ-১) মেলায়। সেই ঘটনার পরে রবিবার থেকে শুরু হওয়া পোলিয়ো টিকাকরণ শিবিরে বাড়তি গুরুত্ব দিয়েছিল পুরসভা। ক’টি শিশুকে টিকা দেওয়া হচ্ছে, সে দিকেও নজর ছিল পুর কর্তৃপক্ষের। পুর স্বাস্থ্য বিভাগের সেই নজরদারি এবং বাড়ি বাড়ি গিয়ে পোলিয়ো খাওয়ানোর কর্মসূচি পালন করা সত্ত্বেও মেটিয়াবুরুজের ওই তিনটি ওয়ার্ডের বাসিন্দারা অনেকেই শিশুদের পোলিয়ো খাওয়াননি বলে অভিযোগ।
১৩৯ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মোস্তাক আহমেদ মঙ্গলবার বলেন, ‘‘আমার ওয়ার্ডে ২৩৬টি পরিবারে পোলিয়ো খাওয়ানো নিয়ে সমস্যা রয়েছে। সোমবার পুরসভার কর্মীরা বাড়িতে পোলিয়ো খাওয়াতে গেলেও শিশুরা অনেকেই তা খায়নি।’’ মোস্তাক জানান, ওই সমস্ত পরিবার নানা ধরনের সংস্কারের বশে পোলিয়ো খাওয়াতে চাইছে না। তাই এলাকার ৩৭টি মসজিদের ইমামদের সঙ্গে স্থানীয় বাসিন্দাদের নিয়ে হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপ তৈরি করে এ বিষয়ে প্রচার চালানো হবে।
১৪০ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর আবু মহম্মদ তারিকের কথায়, ‘‘মূলত অজ্ঞতার কারণেই এখানকার কিছু পরিবার পোলিয়ো খাওয়াতে চাইছে না। আমরা স্থানীয় মসজিদের ইমামদের মাধ্যমে প্রচার চালাচ্ছি, যাতে এলাকার সমস্ত শিশুকে পোলিয়ো টিকাকরণ কর্মসূচির আওতায় আনা যায়।’’ ১৪১ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর পূর্বাশা নস্করের দাবি, ‘‘লাগাতার প্রচার চালানোয় আগের তুলনায় পোলিয়ো-ছুটের সংখ্যা অনেকটা কমেছে। স্থানীয় ইমামদের সহায়তায় সমস্ত শিশুকে পোলিয়ো টিকাকরণের আওতায় আনার চেষ্টা করছি।’’ পুর স্বাস্থ্য বিভাগ জানিয়েছে, চলতি সপ্তাহেও পোলিয়ো টিকাকরণ চলবে। ওই বিভাগের এক শীর্ষ কর্তার কথায়, ‘‘চলতি সপ্তাহের পরে বোঝা যাবে, ঠিক কত সংখ্যক শিশু এই কর্মসূচির আওতায় এল।’’
করোনার জন্য গত দু’বছরে টিকাকরণ কর্মসূচি প্রায়ই বিঘ্নিত হয়েছে। ফলে মেটিয়াবুরুজের অনেক শিশুকেই পোলিয়ো খাওয়ানো যায়নি। পুর স্বাস্থ্য বিভাগের এক আধিকারিকের কথায়, ‘‘সম্প্রতি মেটিয়াবুরুজের নর্দমায় পোলিয়োর জীবাণু মেলায় এ বিষয়ে নজরদারি চালাতে বলেছে স্বাস্থ্য দফতর। আমরা প্রতিটি শিশুকে পোলিয়ো টিকাকরণের আওতায় আনতে চাইছি। ওই এলাকায় কোনও শিশু পোলিয়োয় আক্রান্ত কি না, খুঁজছি। এখন সংস্কার দূর করে মেটিয়াবুরুজের সমস্ত শিশুকে টিকাকরণের আওতায় আনাই লক্ষ্য।’’ মেটিয়াবুরুজের একটি মসজিদের ইমাম উমের আহমেদ বলেন, ‘‘এলাকার সমস্ত শিশু যাতে নিয়মিত টিকা নেয়, তার জন্য আমরা নমাজের সময়ে মসজিদে স্থানীয় বাসিন্দাদের ধরে ধরে বোঝাচ্ছি।’’
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, Twitter এবং Instagram পেজ।