দুর্গা পিতুরি লেনে মেট্রোর কাজের জন্য ঘিরে রাখা জায়গা। সোমবার। নিজস্ব চিত্র।
কোথা দিয়ে পেরিয়ে গিয়েছে দু’বছর। বৌবাজারের দুর্গা পিতুরি লেন এবং সেকরাপাড়া লেনে ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রোর সুড়ঙ্গ খোঁড়ার সময়ে ভেঙে পড়া বাড়ির বাসিন্দারা ফিরতে পারেননি ঘরে। কবে পুরনো পাড়ায়, চেনা গলিতে আবার ফিরবেন, সেই দিকেই এখন তাকিয়ে তাঁরা।
২০১৯-এর ৩১ অগস্টের সন্ধ্যাটা স্পষ্ট মনে পড়ে ১৩এ, দুর্গা পিতুরি লেনের বাসিন্দা জয়ন্ত শীলের। জয়ন্তবাবু জানান, সন্ধ্যায় একতলার ঘরের দেওয়ালে লম্বা ও গভীর ফাটল দেখে চমকে গিয়েছিলেন। সঙ্গে সঙ্গে পাড়ায় কাজ করা মেট্রোকর্মীদের বিষয়টি জানান তিনি।
জয়ন্তবাবু জানান, রাত বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বাড়ির অন্য দেওয়ালগুলিতেও ফাটল ধরতে শুরু করে। তাঁরা তড়িঘড়ি হোটেলে চলে যান। জয়ন্তবাবু বলেন, “সেই যে ঘর ছাড়লাম, তার পরে আর ঘরে ঢুকতে পারিনি। পরের দিন দেখি, দোতলা বাড়িটার পিছনের অংশ মাটিতে মিশে গিয়েছে। নিরাপত্তার কারণে ঘরে ঢুকতেই দেওয়া হয়নি। বাড়ির একতলায় ছাপাখানা ছিল, সেই ঘরটা ভগ্নস্তূপে পরিণত হয়।’’ জয়ন্তবাবুরা এখন ভাড়া আছেন ফুলবাগানের একটি বাড়িতে। সেই বাড়ির ভাড়া অবশ্য মেটাচ্ছেন মেট্রো কর্তৃপক্ষই।
শুধু জয়ন্তবাবু নন। বৌবাজারের দুর্গা পিতুরি লেনের সোনাক্ষী সরকার বা সেকরাপাড়া লেনের আশিস সেনের অবস্থাও একই। সোনাক্ষী এখন বেলেঘাটার বারোয়ারিতলায় ভাড়া থাকেন। তিনি বলেন, “এক রাতের মধ্যে গৃহহারা হলাম। কবে বাড়ি ফিরে পাব, সেই আশায় আছি। বাড়ি ভেঙে পড়ায় ব্যবসায় প্রচুর ক্ষতি হয়েছে আমাদের।’’ আশিসবাবু ভাড়া থাকেন কেশবচন্দ্র সেন স্ট্রিটে। তাঁর কথায়, “মেট্রো কর্তৃপক্ষ আশ্বাস দিয়েছিলেন, দেড় বছরের মধ্যে ফিরে যেতে পারব। কিন্তু বাড়ি তৈরিই শুরু হল না।”
তবে জয়ন্তবাবুরা জানাচ্ছেন, জুলাই মাসে মেট্রোকর্তারা তাঁদের সঙ্গে আলোচনায় বসেছিলেন। তাঁরা জানিয়েছেন, বাসিন্দাদের বাড়ির যেমন নকশা ছিল, সেই নকশা অনুযায়ী বাড়ি তৈরি করে দেওয়া হবে। বাড়ির একটি নকশা দেখানোও হয়েছে। যদিও সোনাক্ষীর প্রশ্ন, “আমাদের অনেকের বাড়িই ছিল বহু পুরনো। সেই নকশা মেনে কি বাড়ি তৈরি করা সম্ভব হবে? বাড়িগুলি যেমন গা-ঘেঁষাঘেঁষি করে ছিল, তেমন ভাবেই সেগুলি তৈরি হবে কি না, সেটাও স্পষ্ট নয়।”
মেট্রোর এক কর্তা অবশ্য জানান, ওই এলাকায় যে যন্ত্রটি সুড়ঙ্গ খননের কাজ করছিল, সেটিকে এখনও মাটির উপরে তোলা যায়নি। চলতি বছরেই সেটিকে মাটির উপরে তোলার কাজ শেষ হবে। তার পরেই হবে বাড়ি তৈরির কাজ। ওই কর্তা বলেন, “ভেঙে পড়া বাড়িগুলির বাসিন্দাদের সঙ্গে কয়েক দফায় আলোচনা করেছি। বাড়ির নকশা অনুমোদন ও আনুষঙ্গিক কাজের জন্য পুরসভার সঙ্গে কথা চলছে। যেমন বাড়ি ছিল, সেই নকশা অনুযায়ী বাড়ি তৈরি হবে। কেউ যদি অন্য কোনও নকশা চান, সেটা সম্ভব কি না তা-ও খতিয়ে দেখা হবে।”