জড়তা ভেঙে প্রাক্‌ ইদের উৎসবে মাতল আবাসন

৭০-৮০ জনের পাতে ঠান্ডা লেবুর শরবত তুলে দিতে অত বরফ জমানো নিয়েও দুশ্চিন্তা ছিল! শিলচর থেকে এসে এখন এই আবাসনবাসী প্রৌঢ়া রমা চক্রবর্তী এগিয়ে এসে বললেন, ‘‘আমার ফ্রিজটা আছে কী করতে!’’

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ০৩ জুন ২০১৯ ২৩:২০
Share:

প্রতীকী ছবি।

এত লোকের জন্য চিকেন চাঁপ রান্নার হাঁড়ি কোথায় মিলবে? এগিয়ে এলেন আবাসনের বাসিন্দা অনসূয়া বন্দ্যোপাধ্যায় পাল। কমিউনিটি হলে ইফতার শুরুর আগে তাঁর একতলার ফ্ল্যাটেই সদ্য বাজার করা মাংস, ফলটল রাখা হয়েছিল। মাংস ধুয়ে যিনি রাঁধবেন, তাঁর বাড়িতে হাঁড়িসুদ্ধ পৌঁছে দিলেন অনসূয়া।

Advertisement

৭০-৮০ জনের পাতে ঠান্ডা লেবুর শরবত তুলে দিতে অত বরফ জমানো নিয়েও দুশ্চিন্তা ছিল! শিলচর থেকে এসে এখন এই আবাসনবাসী প্রৌঢ়া রমা চক্রবর্তী এগিয়ে এসে বললেন, ‘‘আমার ফ্রিজটা আছে কী করতে!’’ সকলে মিলে বাজার করা হয়েছিল হইহই করে। রন্ধনপটিয়সী উম্মে সালেহা বেগম সকলের জন্য চিকেন চাঁপ আর ফিরনি তৈরির ভার কাঁধে তুলে নিলেন।

ঘটনাস্থল, দক্ষিণ কলকাতার অজয়নগরের একটি আবাসন। পুজো বা বড়দিনে নিয়মিত উৎসবে মেতে উঠলেও রমজান সন্ধ্যায় এমন অভিজ্ঞতা আগে হয়নি সেখানে। ওই তল্লাটের কয়েকটি মুসলমান পরিবারের কারও কারও চাপা ইচ্ছে ছিল, রোজার মাসে একসঙ্গে আনন্দে মাতার। বাংলা সাহিত্যের কলেজশিক্ষিকা-সমাজকর্মী আফরোজা খাতুন তাই এগিয়ে এলেন।

Advertisement

কাজটা খুব সোজা ছিল না। আবাসন চত্বরে অনেকেরই ইফতারের পরম্পরা নিয়ে বিশেষ ধারণা নেই। আবাসিকদের কমিটির ভিতরেও ধন্দ ছিল কারও কারও। আফরোজা বলেন, ‘‘ব্যক্তিগত ভাবে ধর্মাচরণের খুঁটিনাটি মানার বিষয়ে আমি সে ভাবে থাকি না! কিন্তু সামাজিক বন্ধনের জায়গাটা কী করে অস্বীকার করব? তাই কমিউনিটি হলটা ভাড়া দিয়ে বুক করেই সকলকে আহ্বান জানালাম।’’

ইফতারের এই আসরটি প্রাক্ ইদ উৎসব হিসেবেই দেখেছেন আয়োজকেরা। অনুষ্ঠানের কয়েক দিন আগে নোটিস দেখে কমবেশি চাঁদা দিয়ে স্রেফ উৎসবে শামিল হওয়ার আনন্দেই এগিয়ে এসেছেন অনেকে। মনজুরল হক, আয়েশা খাতুনদের মতো কয়েক জন রোজাদার ছাড়া বাকি অনেকেই এসেছিলেন উৎসবের টানে। শনিবারের সন্ধ্যায় আবাসনের বাসিন্দারা ছাড়া গড়িয়াবাসী সমাজকর্মী সুমন সেনগুপ্ত, চিকিৎসক সাত্যকি হালদার, সাহিত্য পত্রিকা সংগঠক দেবাশিস আইচ, লেখক-কলেজশিক্ষক শামিম আহমেদরাও মিশে গেলেন সেই উৎসবে। সান্ধ্য জমায়েত সাংস্কৃতিক আসরের চেহারা নিল। রূপান্তরকামী নারী-বাচিকশিল্পী অনুরাগ মৈত্রী আবৃত্তি করলেন। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসের শিক্ষিকা মেরুনা মুর্মু, কলেজছাত্রী ঐশী নিশাত হক, লীনা ভট্টাচার্য, আয়েশা খাতুনেরা গানে গানে ভরিয়ে তুললেন গোটা সন্ধ্যা। বাঙালির আর পাঁচটা অনুষ্ঠানের মতো দক্ষিণ হস্তের কাজটাও বাদ পড়েনি। ফল, ভাজাভুজি, ছোলা, শরবতে উপবাসভঙ্গের পরে বিরিয়ানি-চাঁপ-ফিরনিতে নৈশভোজ পর্ব।

কলকাতার অনেক পাড়ায় এখনও ভিন্‌ ধর্মীদের সহাবস্থানে জড়তা চোখে পড়ে। তবে মেলামেশার তাগিদটাও বাড়ছে। আবাসনের আয়োজকদের ইচ্ছে, পরের বার আরও অনেককে সঙ্গে নিয়ে এমন অনুষ্ঠান করার!

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement