সব হারিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েছেন বাসিন্দারা। মঙ্গলবার, তপসিয়ায়। ছবি: স্বাতী চক্রবর্তী
মেয়ে কাশ্মীরা খাতুনের বিয়ে হয়েছে গত রবিবার। আগামী রবিবার তাঁকে শ্বশুরবাড়িতে পাঠানোর কথা। তার আগেই আগুনের গ্রাসে সব খোয়ালেন মা আনোয়ারা বিবি। তপসিয়ার দাতাবাবা মাজার বস্তিতে নিজের পোড়া ঘরের সামনে দাঁড়িয়ে কাঁদতে কাঁদতে আনোয়ারা বললেন, ‘‘অল্প অল্প করে টাকা জমিয়ে মেয়ের জন্য সোনার গয়না বানিয়েছিলাম। ওই গয়না পরিয়েই ওকে শ্বশুরবাড়ি পাঠাতাম। আগুনে সব শেষ। কিছুই বার করে আনতে পারিনি। মেয়ের বিয়ের জন্য বস্তির সকলে মিলে ২০ হাজার টাকা দিয়েছিলেন। সেই টাকাও খোয়া গিয়েছে।’’
পোড়া বস্তির সামনে দাঁড়িয়ে অঝোরে কাঁদছিলেন নাজিয়া বেগম। তাঁর ছেলে শারীরিক প্রতিবন্ধী। আগুন লাগার পরে কোনও মতে ছেলেকে নিয়ে বেরিয়ে আসেন। কিন্তু ছেলের প্রতিবন্ধীর কার্ড বা অন্য কোনও কাগজপত্র নিয়ে আসতে পারেননি। আগুনে ঘরের সব জিনিসপত্রের সঙ্গে সে সবও পুড়ে গিয়েছে।
শুধু আনোয়ারা বিবি বা নাজিয়া বেগম নন, তাঁদের মতো অনেকেরই চোখে-মুখে সর্বস্ব খোয়ানোর যন্ত্রণা। শাকিলা বিবি নামে বস্তির আর এক বাসিন্দা জানান, ছেলেদের নিয়ে ঘরে শুয়ে ছিলেন। হঠাৎ বোমা বিস্ফোরণের মতো কান ফাটানো আওয়াজ শুনতে পান। বাইরে বেরিয়ে দেখেন, তাঁদের পাশের ঝুপড়িটাই দাউ দাউ করে জ্বলছে। কোনও মতে শিশু দু’টিকে ঘর থেকে বাইরে বার করে আনতে পেরেছিলেন তিনি। শাকিলা বললেন, ‘‘আমার একটি চায়ের দোকান ছিল। সেই দোকানও পুড়ে গিয়েছে। এখন নতুন করে দোকান আর ঘর কী ভাবে করব?’’
নানা রকম শারীরিক অসুস্থতার কারণে ভাল করে হাঁটতে পারেন না ওই বস্তির বাসিন্দা, ৮০ বছরের রাধা দাস। তাঁর কথায়, ‘‘সকলেই ছোটাছুটি করছিল। অশক্ত শরীরে কী করে বেরোব, বুঝতে পারছিলাম না। এক পড়শি আমাকে হাত ধরে বার করে আনেন। কোনও মতে ঘর থেকে বেরিয়ে আসি।’’ রাধাদেবী জানান, ওই বস্তির বাসিন্দা, আট মাসের অন্তঃসত্ত্বা এক মহিলাও বেরোতে পারছিলেন না। তিনিও প্রতিবেশীদের সাহায্যে কোনও রকমে বেরিয়ে আসেন।
আরও পড়ুন: সংক্রমিত স্টেশন মাস্টার, বিকল্পের খোঁজ
সাবিনা লস্কর নামে বস্তির আর এক বাসিন্দা জানান, প্রচুর ধার-দেনা করে ওই বস্তিতে দিন কয়েক আগে এসে উঠেছিলেন তিনি। এ দিনের আগুনে সব পুড়ে গিয়েছে। পোড়া বস্তির সামনে দাঁড়িয়ে চোখের জল বাঁধ মানছিল না তাঁর।
এ দিন সন্ধ্যার মুখে বাসিন্দারা অনেকেই ধ্বংসস্তূপে হাজির হয়েছিলেন, পোড়া জিনিসের মধ্যে কিছু অবশিষ্ট আছে কি না, তা খুঁজে দেখতে। অনেকেই ছাইয়ের স্তূপ থেকে বার করে আনছিলেন পোড়া বাসনপত্র। গয়নাগাঁটি যদি কিছু বেঁচে গিয়ে থাকে, সেই আশায় ছাই হাতড়ে হাতড়ে দেখছিলেন অনেকে। তাঁদের অধিকাংশই অবশ্য হতাশ হয়ে ফিরে আসেন।