মাটির নীচের জল তোলা এখনও চলছে

মাস ছয়েক আগেই কলকাতা পুরসভার মাসিক অধিবেশনে শহরে পানীয় জলের সরবরাহে ভূগর্ভস্থ নলকূপের ব্যবহারে উদ্বেগ প্রকাশ করেছিলেন মেয়র ফিরহাদ হাকিম।

Advertisement

মেহবুব কাদের চৌধুরী

কলকাতা শেষ আপডেট: ১৪ ডিসেম্বর ২০১৯ ০২:৫০
Share:

এখানেই কাজ চলছে গভীর নলকূপের। নিজস্ব চিত্র

পরিবেশ বাঁচাতে মাটির নীচ থেকে জল তোলা নিষিদ্ধ হয়েছে বহু আগেই। তাই ভূগর্ভস্থ নলকূপ থেকে বিপদের আশঙ্কার কথা বারবার বলছেন পরিবেশবিদেরা। শহরে নতুন করে গভীর নলকূপ বসানোর সিদ্ধান্ততে বছর চারেক আগে বিরতি টেনেছে কলকাতা পুরসভা। তবু সেই কাজই অবাধে চলছে কলকাতা পুর এলাকায়।

Advertisement

সম্প্রতি পুরসভার ১০৯ নম্বর ওয়ার্ড এলাকার বাঘা যতীন স্টেশনের কাছে গভীর নলকূপ বসানো হয়েছে। অথচ মাস ছয়েক আগেই কলকাতা পুরসভার মাসিক অধিবেশনে শহরে পানীয় জলের সরবরাহে ভূগর্ভস্থ নলকূপের ব্যবহারে উদ্বেগ প্রকাশ করেছিলেন মেয়র ফিরহাদ হাকিম। পুর অধিবেশনে বাম কাউন্সিলর দেবাশিস মুখোপাধ্যায়ের একটি প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেছিলেন, ‘‘কলকাতায় গভীর নলকূপের সংখ্যা ৩৬৯। উত্তরের তুলনায় দক্ষিণে গভীর নলকূপের সংখ্যাটা বেশি।’’ মেয়র এও জানিয়েছিলেন, বাসিন্দারা এখনও গভীর নলকূপের জল খাচ্ছেন সেটা অবশ্যই উদ্বেগের।

এ দিকে, কলকাতা পুরসভার বাঘা যতীন স্টেশন সংলগ্ন এলাকায় গভীর নলকূপ বসানোর কথা জানিয়েছেন স্থানীয় বাসিন্দাদের একটি অংশ। বাসিন্দাদের অনেকেরই দাবি, ‘‘এলাকায় গভীর নলকূপ বসানো হলেও তার স্বাদ মোটেই ভাল নয়। কিন্তু ওই এলাকায় গঙ্গার পরিস্রুত পানীয় জল না পাওয়া যাওয়ায় বাধ্য হয়ে ওই জল খেতে হচ্ছে।’’ কলকাতা পুরসভার বামফ্রন্টের চিফ হুইপ চয়ন ভট্টাচার্যের অভিযোগ, ‘‘দক্ষিণ কলকাতার যাদবপুর, টালিগঞ্জ-সহ বিস্তীর্ণ অংশে অবাধে গভীর নলকূপের ব্যবহার চলছে। বাঘা যতীনেও একই অবস্থা। অথচ বাঘা যতীন থেকে সামান্য দূরত্বে সোনারপুর। যেখানে গভীর নলকূপ খনন করে পানীয় জলে আর্সেনিক ইতিমধ্যেই মিলেছে।’’ তাঁর দাবি, ‘‘মানুষের স্বাস্থ্যের কথা ভেবে দ্রুত দক্ষিণ কলকাতার বিস্তীর্ণ এলাকায় পুরসভা পরিস্রুত জল সরবরাহের পরিমাণ বাড়ানোর দিকে মনোযোগ দিক।’’

Advertisement

আরও পড়ুন: ঠাকুমার গলা কেটে খুন করছে মায়ের প্রেমিক, চোখের সামনে দেখছে নাতনি!

রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে মাটির নীচের জলস্তর অতি দ্রুত নেমে যাওয়ার কারণে গত তিন বছরে রাজ্যের তিরিশটি ব্লককে ‘বিপজ্জনক’ ঘোষণা করেছে সেন্ট্রাল গ্রাউন্ড ওয়াটার বোর্ড। ‘আংশিক বিপজ্জনক’ ব্লকের সংখ্যা ৪২। অথচ তিন বছরের বেশি আগে রাজ্যে মাত্র একটি ব্লকে ‘বিপজ্জনক’ পরিস্থিতি ছিল। সরকারি সমীক্ষায় মাটির নীচের সঞ্চিত জলের পরিমাণের মাপকাঠিতে বিভিন্ন এলাকাকে ‘বিপজ্জনক’, ‘আংশিক বিপজ্জনক’ হিসাবে চিহ্নিত করা হয়। রাজ্যভিত্তিক ‘গ্রাউন্ড ওয়াটার রিসোর্স এস্টিমেশন কমিশন’-এর থেকে তথ্য নিয়ে প্রতি দু’বছর অন্তর গোটা দেশের ভূগর্ভস্থ জলস্তরের রিপোর্ট তৈরি করে সেন্ট্রাল গ্রাউন্ড ওয়াটার বোর্ড। পরিবেশ নিয়ে কাজ করা একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার কর্ণধার তথা অধ্যাপক আক্রামুল হকের আশঙ্কা, ‘‘রাজ্য জুড়ে মাটির নীচের জলস্তর হুহু করে কমছে। খাস কলকাতায় যে ভাবে নলকূপের ব্যবহার হচ্ছে, তাতে ভবিষ্যতে এ শহরে ভূগর্ভস্থ জলসঙ্কট দেখা দিতে দেরি নেই। পাশাপাশি বাড়বে জলদূষণও।’’

কেন নতুন করে গভীর নলকূপ খনন করছে পুরসভা? উত্তরে স্থানীয় বরো চেয়ারম্যান সুশান্ত ঘোষ বলেন, ‘‘১০৯ নম্বর ওয়ার্ডে পরিস্রুত পানীয় জলের সমস্যা রয়েছে। যার জন্য ওই এলাকায় এখনও ভূগর্ভস্থ নলকূপের প্রয়োজন রয়েছে। আনন্দপুরে বুস্টার পাম্পিং স্টেশনের কাজ চলছে। ওই স্টেশনের কাজ শেষ হলে ধাপা জলপ্রকল্প থেকে জল আনানো যাবে। তবেই সেই বুস্টার পাম্পিং স্টেশনের মাধ্যমে পানীয় জল বাঘা যতীন, যাদবপুর, টালিগঞ্জে পাঠানো সম্ভব হবে। তবেই ওই এলাকায় গভীর নলকূপের ব্যবহার বন্ধ করা যাবে।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement