গতিহারা: মিছিলের জেরে থমকে যানবাহন। মঙ্গলবার, রেড রোডে। ছবি: সুমন বল্লভ
একেই প্রবল গরমে নাজেহাল অবস্থা শহরবাসীর। তার উপরে কাজের দিনে বিশাল মিছিলের জেরে রাস্তায় তীব্র যানজট। দুইয়ে মিলে জেরবার হতে হল সাধারণ মানুষকে।
পয়গম্বরকে নিয়ে বিতর্কিত মন্তব্যের জেরে বিজেপি-র সাসপেন্ড হওয়া মুখপাত্র নূপুর শর্মাকে গ্রেফতারের দাবিতে মঙ্গলবার রানি রাসমণি অ্যাভিনিউয়ে প্রতিবাদ সমাবেশের ডাক দিয়েছিল ‘সারা বাংলা সংখ্যালঘু যুব ফেডারেশন’। যার জন্য এ দিন সকাল থেকেই ধর্মতলার টিপু সুলতান মসজিদের সামনে এসে জড়ো হতে থাকেন বিভিন্ন জেলা থেকে গাড়ি নিয়ে আসা আন্দোলনকারীরা। বেলা ১২টার পরে গাড়ির সংখ্যা ক্রমেই বাড়তে থাকায় সেগুলি রেড রোডের পাশে ময়দানে রাখার ব্যবস্থা করা হয়। হাওড়া ও শিয়ালদহ স্টেশন থেকেও আন্দোলনকারীরা মিছিল করে এসে ধর্মতলায় জড়ো হন।
এ দিন বেলা ১১টার পর থেকেই ভিড়ের বহর দেখে টিপু সুলতান মসজিদের চারপাশে ব্যারিকেড বসিয়ে দেয় পুলিশ। ভিড়ের চাপে অবরুদ্ধ হয়ে পড়ে ওই মসজিদ লাগোয়া চিত্তরঞ্জন অ্যাভিনিউ ও বেন্টিঙ্ক স্ট্রিট-সহ বিভিন্ন রাস্তা। পুলিশ আন্দোলনকারীদের রাস্তা থেকে সরে যেতে অনুরোধ করলেও লাভ হয়নি। যার ফলে চিত্তরঞ্জন অ্যাভিনিউয়ে সার দিয়ে দাঁড়িয়ে যায় গাড়ি। যানজটের জেরে শ্যামবাজার থেকে ধর্মতলা পর্যন্ত চিত্তরঞ্জন অ্যাভিনিউ দুপুর ১টা থেকে ২টো পর্যন্ত প্রায় এক ঘণ্টা পুরোপুরি অবরুদ্ধ হয়ে ছিল। একই অবস্থা হয় ধর্মতলা লাগোয়া বিভিন্ন রাস্তায়। রেড রোড, মেয়ো রোড, জওহরলাল নেহরু রোড, এস এন ব্যানার্জি রোড, লেনিন সরণি-সহ বিভিন্ন রাস্তা দীর্ঘক্ষণ অবরুদ্ধ হয়ে থাকে। ওই সময়ে হাওড়া থেকে ধর্মতলামুখী যানবাহনও আটকে পড়ে রাস্তায়। এর পাশাপাশি, দক্ষিণ থেকে উত্তর বা উত্তর থেকে দক্ষিণ কলকাতায় যেতে গিয়েও আটকে পড়েন অসংখ্য মানুষ।
এ দিন একটু বেলা হতেই মিছিল করে ধর্মতলার টিপু সুলতান মসজিদ থেকে রানি রাসমণি অ্যাভিনিউয়ের প্রতিবাদ সভাস্থলে যেতে শুরু করেন আন্দোলনকারীরা। সেই সময়ে ধর্মতলার ডোরিনা ক্রসিং দীর্ঘক্ষণ অবরুদ্ধ থাকায় বিভিন্ন দিক থেকে আসা যানবাহন দাঁড়িয়ে যায়। তীব্র গরম থেকে রেহাই পেতে অনেকেই বাস থেকে নেমে হাঁটতে শুরু করেন। চাঁদনি চক মেট্রো স্টেশনের কাছে দীর্ঘক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকা এক ট্যাক্সিচালকের কথায়, ‘‘শ্যামবাজার থেকে চাঁদনি চক আসতেই এক ঘণ্টা লেগে গেল। গাড়ি না চলায় গরমে খুব কষ্ট হচ্ছে।’’ গরমে বসে থাকতে না পেরে স্কুলপড়ুয়া সন্তানকে নিয়ে মায়েরাও অনেকে বাস থেকে নেমে পড়তে বাধ্য হন। বছর দশেকের ছেলেকে নিয়ে বাসে দক্ষিণ কলকাতা থেকে শ্যামবাজারে যাচ্ছিলেন শ্যামা বন্দ্যোপাধ্যায়। চাঁদনি চকের কাছে রাস্তায় নেমে তিনি বলেন, ‘‘একেই এত গরম। তার উপরে যানজট। বাস থেকে নেমে এখন মেট্রোয় যাব।’’
রানি রাসমণি অ্যাভিনিউয়ের প্রতিবাদ সমাবেশ দুপুর তিনটে নাগাদ শেষ হয়। যানজটের রেশ অবশ্য তার পরেও বেশ কিছু ক্ষণ ছিল। যানজটের প্রভাব ছড়িয়ে পড়েছিল উত্তর, মধ্য ও দক্ষিণ কলকাতার বিস্তীর্ণ অংশেও। রেড রোডেও দীর্ঘক্ষণ সার দিয়ে গাড়ি দাঁড়িয়ে ছিল। সেই যানজট পৌঁছে যায় খিদিরপুর পর্যন্ত। তীব্র গরমে মিছিল সামলাতে পুলিশকেও হিমশিম খেতে হয়েছে।
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, Twitter এবং Instagram পেজ।