বৃষ্টিতে, যানজটে আটকে ভোগান্তি সারা দিন

চেন্নাইয়ে অস্ত্রোপচার করিয়ে আসা সুকান্তকে নিয়ে এ দিন বাগদার বাড়িতে ফিরছিলেন পরিজনেরা। বেলঘরিয়া এক্সপ্রেসওয়েতে দুর্গানগরের কাছে একটি ছোট গাড়ির সঙ্গে সংঘর্ষ হয় অ্যাম্বুল্যান্সটির।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৪ জুলাই ২০১৮ ০১:০৪
Share:

অসুস্থ সুকান্ত বিশ্বাসকে অন্য অ্যাম্বুল্যান্সে তোলা হচ্ছে। নিজস্ব চিত্র

একে বেহাল রাস্তা। তার উপরে জোড়া লরি বিকল হওয়ায় সোমবার যানজটের কবলে হাঁসফাঁস করল বেলঘরিয়া এক্সপ্রেসওয়ে এবং যশোর রোড। গাড়ির দীর্ঘ লাইনে আটকে সপ্তাহের প্রথম দিন গোটা বেলা রাস্তাতেই কেটে গেল বহু যাত্রীর। আর সেই সবকে ছাপিয়ে গেল সদ্য চেন্নাই থেকে অস্ত্রোপচার সেরে এ দিনই কলকাতায় ফেরা বাগদার এক বাসিন্দার দুর্ভোগ।

Advertisement

গত মাসে পথ দুর্ঘটনায় সুকান্ত বিশ্বাস নামে বাগদার ওই বাসিন্দার ডান হাত এবং পা মারাত্মক ভাবে জখম হয়। চেন্নাইয়ে অস্ত্রোপচার করিয়ে আসা সুকান্তকে নিয়ে এ দিন বাগদার বাড়িতে ফিরছিলেন পরিজনেরা। বেলঘরিয়া এক্সপ্রেসওয়েতে দুর্গানগরের কাছে একটি ছোট গাড়ির সঙ্গে সংঘর্ষ হয় অ্যাম্বুল্যান্সটির। দুর্ঘটনার জন্য যানজটকে দায়ী করে সুকান্ত বলেন, ‘‘গাড়ির মধ্যে হাতে খুব যন্ত্রণা হচ্ছিল। তাড়াতাড়ি বাড়ি ফিরতে চাইছিলাম। কিন্তু গাড়ি তো নড়ছিলই না। এরই মধ্যে একটি গাড়ি উল্টো দিক থেকে এসে ধাক্কা মারে। আর একটু হলে নীচে পড়ে যাচ্ছিলাম!’’ দুর্ঘটনার জেরে অ্যাম্বুল্যান্স বিকল হওয়ায় অন্য অ্যাম্বুল্যান্স ডেকে সুকান্তকে বাগদা নিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা করা হয়।

ব্যারাকপুর কমিশনারেট সূত্রের খবর, রবিবার রাতে ডানলপের কাছে একটি লরি খারাপ হয়ে যায়। সেটিকে এ দিন সকালে সরানো সম্ভব হয়। তার পিছনে থাকা লরির লাইন বেলঘরিয়া এক্সপ্রেসওয়েতে এসে আটকে যায়। কারণ, তত ক্ষণে বিধাননগর কমিশনারেটের ‘নো এন্ট্রি’ শুরু হয়ে গিয়েছে। এক্সপ্রেসওয়ের যশোর রোডমুখী রাস্তায় তিনটি সারিতে লরি দাঁড়িয়ে পড়ায় ছোট গাড়ি ও বাসের নড়ার জায়গা ছিল না। এরই মধ্যে যশোর রোডে দুই এবং আড়াই নম্বর গেটের কাছে অন্য একটি লরি বিকল হলে এক্সপ্রেসওয়ের দক্ষিণেশ্বরমুখী পথের গতিও থমকে যায়। পুলিশ সূত্রের খবর, সকাল ৮টা থেকে দু’ঘণ্টা দু’টি রাস্তা কার্যত স্তব্ধ হয়ে পড়ে।

Advertisement

এ দিন কাজের জায়গায় পৌঁছতে না পেরে ক্ষোভ উগরেছেন সাধারণ মানুষ। মানসী তরফদার নামে এক জন বললেন, ‘‘দু’ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে রাস্তায় আটকে। কত জন বিমান ধরতে পারল না জানেন!’’ ব্যারাকপুর পুলিশ কমিশনারেটের এক কর্তা বলেন, ‘‘লরি বিকল একটা কারণ। কিন্তু এটাও ঠিক, বেলঘরিয়া এক্সপ্রেসওয়ে এবং যশোর রোডের যা অবস্থা, তাতে গাড়ি টানা যাচ্ছিল না। রাস্তা দ্রুত সারাই নিয়ে পদক্ষেপ করা হচ্ছে।’’

বেহাল রাস্তা এবং যানজটের যুগলবন্দিতে দুর্ভোগের ছবি দক্ষিণেও। সূত্রের খবর, ই এম বাইপাসে প্রবল যানজটের কারণে কয়েক জন যাত্রী সোমবার সকালে উড়ান ধরতে পারেননি। বিমানবন্দরে কর্মরত অফিসারদের কয়েক জনও আটকে পড়েন। ভুবনেশ্বরের একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে এ বছরই ক্লাস শুরু হওয়ার কথা সঞ্জনা দাসের। যাদবপুর থেকে সকাল ৯টা ২০ মিনিট নাগাদ বেরোন ১১টা ৫০-এর উড়ান ধরতে। কিন্তু অজয়নগর থেকে বাইপাসে ওঠার পরেই মুকুন্দপুর পেরিয়ে গাড়ি দাঁড়িয়ে যায়। পথে প্রায় প্রতিটি ট্র্যাফিক সিগন্যালই বন্ধ ছিল বলে সঞ্জনার অভিযোগ। সেখানে হাত দেখিয়ে যান নিয়ন্ত্রণ করছিলেন সার্জেন্টরা। বৃষ্টির মধ্যে খানাখন্দে ভরা রাস্তা দিয়ে ওই যানজট পেরিয়ে তিনি যখন সায়েন্স সিটি-র কাছে পৌঁছন, তত ক্ষণে পৌনে ১১টা বেজে যায়। বুঝতে পারেন, কিছুতেই সময় মতো বিমানবন্দরে পৌঁছতে পারবেন না। তখন ট্যাক্সি থেকেই টিকিট বাতিল করে ট্রেনের টিকিট কাটেন তিনি। এ দিন সন্ধ্যায় বিমানবন্দরের পথে যানজটে আটকে পড়েন সিপিএম নেতা বিমান বসুও। ৭টায় দিল্লির উড়ান ধরার কথা ছিল তাঁর। বিমানবাবু বিমানবন্দরে পৌঁছন ৬টা ৫০ মিনিটে। কোনওক্রমে উড়ান ধরেন।

কলকাতা বিমানবন্দর সূত্রের খবর, বেশ কিছু যাত্রী বৃষ্টিতে আটকে দেরিতে বিমানবন্দর পৌঁছন। বিমান সংস্থাগুলি শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত চেক-ইন কাউন্টার খুলে রেখে সেই যাত্রীদের সাহায্য করেন। কাউন্টার বন্ধ হয়ে যাওয়ার পরেও যাঁরা পৌঁছন, তাঁদের পরের উড়ানে জায়গা করে দেওয়া হয়।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement