নিরুপায়: ভাঙার কাজের মধ্যেই টালা সেতু হেঁটে পেরোচ্ছে একদল স্কুলপড়ুয়া। শনিবার। ছবি: সুমন বল্লভ
টালা সেতু ভাঙা শুরু হতেই শনিবার সকাল থেকে থমকে যায় উত্তর কলকাতা ও উত্তর শহরতলির যান চলাচল। আশঙ্কা ছিল, সপ্তাহের প্রথম দিন সোমবার থেকে ভোগান্তিতে পড়বেন মানুষ। কিন্তু সপ্তাহের শেষ দিন থেকেই শুরু হয়ে গেল যান-যন্ত্রণা। তবে লালবাজারের দাবি, দুপুরের পর থেকে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে।
তবে দুপুর পর্যন্ত কাউকে তিনটি বাসস্টপ পেরোতে অনেকটা পথ ঘুরতে হয়েছে। কারও আবার ২০ মিনিটের দূরত্ব পেরোতে লেগেছে ৪৫ মিনিট! লালবাজার সূত্রের খবর, শনিবার সকাল থেকে বাগবাজার, চিৎপুর লকগেট উড়ালপুল হয়ে বিটি রোডে ডানলপমুখী বাস, মিনিবাসগুলি পাঠানো হয়েছে। পাশের কাশীপুর সেতু দিয়েও কিছু বাস উত্তরে কাশীপুর রোডে পাঠানো হয়। যাত্রীদের অভিযোগ, চিৎপুর লকগেট উড়ালপুল থেকে নেমে বিটি রোডের মুখে গাড়ির গতি আটকাচ্ছে। ওই সিগন্যালে আটকে থাকা টবিন রোডের বাসিন্দা শ্যামাপদ জানা বলেন, ‘‘বেলা ১২টা নাগাদ উড়ালপুল থেকে নেমেও বিটি রোডে উঠতে ২০ মিনিট ওই সিগন্যালে দাঁড়াতে হয়েছে।’’
একই ভোগান্তির দৃশ্য কাশীপুর রোড ও খগেন চ্যাটার্জি রোডে। যদিও ওই দুই রাস্তা দিয়ে এ দিন উভয়মুখী গাড়ি চলেছে। তা সত্ত্বেও দমদম-চিড়িয়ামোড় থেকে ডান দিকে বেঁকে ওই দুই রাস্তা ধরে বাগবাজার পৌঁছতে লেগেছে এক ঘণ্টা। এ দিনও রেল ইয়ার্ড থেকে বেরোনো ছোট ও মাঝারি পণ্যবাহী গাড়ি রাস্তার দু’দিকে দাঁড়িয়ে থাকায় গাড়ির গতি শ্লথ হয়েছে বলে অভিযোগ বাসচালক ও যাত্রীদের।
কোন পথে কত সময়
• সিঁথির মোড় থেকে চিড়িয়ামোড় (বি টি রোড) ৪৫ মিনিট
• চিড়িয়ামোড়-পাইকপাড়া-বেলগাছিয়া সেতু
আর জি কর রোড হয়ে শ্যামবাজার ৪০ মিনিট
• বাগবাজার (গিরিশ অ্যাভিনিউ)-লকগেট
উড়ালপুল হয়ে বি টি রোড ২৫ মিনিট
• চিড়িয়ামোড়-খগেন চ্যাটার্জি রোড-
কাশীপুর সেতু হয়ে বাগবাজার ৪৫ মিনিট
• নাগেরবাজার থেকে বেলগাছিয়া
(যশোর রোড ধরে) ৪৫ মিনিট
(দিনের ব্যস্ত সময়ে)
পুজোর আগে থেকে টালা সেতুতে বাস চলাচল নিয়ন্ত্রণ করা হয়েছিল। তখন থেকেই বিটি রোডের দক্ষিণমুখী যানবাহন রাজা মণীন্দ্র রোড, ইন্দ্র বিশ্বাস রোড, বেলগাছিয়া রোড, আর জি কর রোড হয়ে শ্যামবাজার যাচ্ছে। এ দিনও তা-ই হয়েছে। তবে বাসে চিড়িয়ামোড় থেকে আর জি কর হাসপাতাল পৌঁছতে অনেক সময় লাগছে বলে অভিযোগ। বেলঘরিয়ার বাসিন্দা সোমনাথ কর্মকার ২০১ নম্বর রুটের বাসে ছিলেন। তাঁর কথায়, ‘‘পাইকপাড়ায় ঢুকেই বাস ২৫ মিনিট দাঁড়িয়ে রইল। বাধ্য হয়ে হেঁটে সেতু পেরিয়ে শ্যামবাজারে অফিসে যাচ্ছি।’’ সেতুর কাছাকাছি গন্তব্য হওয়ায় অনেকেই এ দিন হেঁটে সেতু পেরোলেন। মধ্যমগ্রামের বাসিন্দা, কলকাতা পুরসভার ১ নম্বর বরো অফিসের কর্মী ঝর্না সাহার অফিস সেতু থেকে নেমেই। চক্ররেলে চেপে টালায় নেমে হেঁটে সেতুতে উঠতে গিয়ে দেখেন, গার্ড রেল বসানো। তা-ও সেতু দিয়েই হেঁটে তিনি অফিসে যান।
সেতু সংলগ্ন পাইকপাড়া, চিড়িয়ামোড়, ঘোষবাগান, বাগবাজার, কাশীপুর এলাকার বাসিন্দাদের আশঙ্কা, হাঁটার বিকল্প রাস্তা না হলে শ্যামবাজার বা চিড়িয়ামোড় এলাকার স্কুল, ব্যাঙ্ক, ডাকঘর, বরো অফিস, রেশনের দোকান, বাজারে যাওয়ার মতো নিত্যদিনের কাজে নাজেহাল হতে হবে। যেমন, এ দিন সাইকেলে টালা সেতুর মুখে নেমে পড়তে হয় আদর্শ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণির পড়ুয়া অভিষেক সিংহকে। সাইকেল নিয়ে হেঁটে সেতুর মাঝামাঝি স্কুলে পৌঁছয় সে। প্রথম দিন পুলিশ সেতুর ফুটপাত দিয়ে হাঁটতে নিষেধ করেনি। কিন্তু পরে যখন সেতু হাঁটার যোগ্য থাকবে না, তখন কী হবে? সেটাই প্রশ্ন সংলগ্ন এলাকার বাসিন্দাদের।
টালা সেতুর সামনে এ দিন দেখা গেল, বাগবাজারের দিকে সেতুর অ্যাপ্রোচ রোডে পরপর দাঁড় করানো জেসিবি মেশিন। ওই যন্ত্র দিয়ে অ্যাপ্রোচ রোড থেকে পিচের স্তর তোলা হচ্ছে। ‘ইমার্জেন্সি ওয়ার্ক ফর টালা ব্রিজ’ বোর্ড লাগানো একাধিক ট্রাক দাঁড় করানো রয়েছে। সূত্রের খবর, ট্রাকে করে কাশীপুরের সরকারি জমিতে ওই পিচ ফেলা হবে। সেতু তৈরির সময়ে গর্ত ভরাট করতে তা কাজে লাগানো হবে।