ঝোপ বুঝে কোপ সোনাপাড়ায়

বৌবাজারের বিপর্যয়ের পরে ঘর খুঁজতে হিমশিম খেতে হচ্ছে ক্ষুদ্র গয়না ব্যবসায়ীদের। ঘর ভাড়া দেওয়ার জন্য রীতিমতো মোটা টাকা হাঁকছেন বৌবাজার লাগোয়া বাসিন্দারা।

Advertisement

মেহবুব কাদের চৌধুরী

কলকাতা শেষ আপডেট: ১৩ সেপ্টেম্বর ২০১৯ ০৩:০১
Share:

এই পোস্টারে ছেয়ে গিয়েছে বি বি গাঙ্গুলি স্ট্রিট। নিজস্ব চিত্র

ছোট্ট টেবিলপিছু ‘ঘরভাড়া’ চলছে! রীতিমতো দরদাম করে।

Advertisement

বৌবাজারের বিপর্যয়ের পরে ঘর খুঁজতে হিমশিম খেতে হচ্ছে ক্ষুদ্র গয়না ব্যবসায়ীদের। ঘর ভাড়া দেওয়ার জন্য রীতিমতো মোটা টাকা হাঁকছেন বৌবাজার লাগোয়া বাসিন্দারা। এরই মধ্যে বৌবাজার জুড়ে একটি পোস্টারকে কেন্দ্র করে যথেষ্ট চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে। বি বি গাঙ্গুলি স্ট্রিটের দু’পাশ জুড়ে পোস্টার। যেখানে লেখা রয়েছে, ‘সোনার কাজের জন্য ঘর ভাড়া পাওয়া যায়’। যোগাযোগের জন্য নীচে একটি মোবাইল নম্বরও লেখা রয়েছে। ওই নম্বরে ফোন করা হলে মোবাইলের ও প্রান্ত থেকে এক মধ্যবয়সি ব্যক্তি প্রথমেই বলেন, ‘‘এখানে কোনও ঘর ভাড়া দেওয়া হয় না। টেবিলপিছু ভাড়া দেওয়া হয়। ফোনে কথা নয়। সাক্ষাতে কথা বলতে হবে।’’ ওই ব্যক্তির কথায়, ‘‘আমার নিজেরও গয়নার ব্যবসা রয়েছে। শ্রদ্ধানন্দ পার্কের কাছে আমার একটি ছোট কারখানা রয়েছে। বর্তমানে ব্যবসা মন্দা চলছে। তাই এই বিজ্ঞাপন দিয়েছি।’’ মোবাইলে ভাড়ার পরিমাণ জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বলেন, ‘‘সব কিছু ফোনে হয় না। কাছে এসে কথা বলুন। তবে আমার এখানে থাকতে হলে কমপক্ষে দু’বছরের জন্য ভাড়া নিতে হবে।’’

বৌবাজারে ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রোর কাজের জেরে দুর্গা পিতুরি লেন, সেকরাপাড়া লেনে একের পর এক বাড়ি ভেঙে পড়েছে। একাধিক বাড়ি বিপজ্জনক অবস্থায় রয়েছে। দুর্গা পিতুরি লেন, সেকরাপাড়া লেন ও গৌর দে লেনের অধিকাংশ বাড়ি এখন কার্যত তালাবন্ধ। ওই সমস্ত বাড়িতে প্রায় ছ’শোর বেশি গয়না তৈরির ছোট ছোট কারখানা ছিল। এক চিলতে ঘরে গয়না তৈরির কাজে মগ্ন থাকতেন প্রায় দু’হাজার কারিগর। বৃহস্পতিবার সকাল থেকে ১৪/১ই দুর্গা পিতুরি লেনের হেলে যাওয়া বাড়ির অদূরে দাঁড়িয়েছিলেন উত্তম পাত্র, গণেশচন্দ্র শীদের মতো স্বর্ণ ব্যবসায়ীরা। উত্তমবাবুর কথায়, ‘‘দু’সপ্তাহ ধরে গয়না তৈরির কাজ বন্ধ। এখন আমাদের ভবিষ্যৎ চরম অন্ধকারে। এরই মধ্যে ঘর খুঁজতে গিয়ে হিমশিম খেতে হচ্ছে। ঘর ভাড়ার জন্য বি বি গাঙ্গুলি স্ট্রিটে বিজ্ঞাপন দেখে ফোন করলে অবাক হতে হচ্ছে। পাশাপাশি দালালেরা আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করে উত্ত্যক্ত করছেন।’’ একই অভিমত গণেশচন্দ্রবাবুর। তাঁর কথায়, ‘‘গয়না তৈরির কাজের জন্য এক চিলতে ঘরের জন্য লক্ষ লক্ষ টাকা দরদাম চলছে। এত টাকা আমরা কোথায় পাব? ছোট্ট ঘরের জন্য এখানকার ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা কতটা হেনস্থা হচ্ছেন, তা বি বি গাঙ্গুলি স্ট্রিটের দু’ধারের বিজ্ঞাপনে দেওয়া নম্বরে ফোন করলেই টের পাওয়া যাবে।’’

Advertisement

বৌবাজারের বিপর্যয়ের পরে ঘরের হদিস দিতে এক শ্রেণির দালাল, বিভিন্ন ধরনের বিজ্ঞাপন যে ভাবে এলাকায় ছেয়ে গিয়েছে, তাতে ক্ষুব্ধ বঙ্গীয় স্বর্ণশিল্পী সমিতির (বৌবাজার শাখা) সম্পাদক সুব্রত কর। এ প্রসঙ্গে সুব্রতবাবু বলেন, ‘‘ঘর ভাড়া খুঁজে দিতে এখন বৌবাজার জুড়ে ঘোলা জলে মাছ ধরার কারবার চলছে। নানা ধরনের পোস্টার দেওয়া থেকে শুরু করে দোকানদারদের সঙ্গে যোগাযোগ করছেন দালালেরা। আমরা শীঘ্রই বিষয়টি নিয়ে লালবাজারে অভিযোগ দায়ের করব।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement