বিমানবন্দরে যাত্রীদের বিশাল লাইন। বুধবার। নিজস্ব চিত্র
বিমানবন্দরে ভিড় দেখে ভয় পেয়ে যাচ্ছেন উড়ান সংস্থার কর্তারাও। বুধবার দীর্ঘ সর্পিল লাইন পেরিয়ে বোর্ডিং গেটের কাছে পৌঁছনোর আগেই বিমানের দরজা বন্ধ হয়ে যাওয়ায় উড়ান ধরতে পারেননি বেশ কয়েক জন যাত্রী। টার্মিনালের ভিতরে থেকেও উড়ান ধরতে না পারার এই ঘটনায় ক্ষোভ ছড়িয়েছে তাঁদের মধ্যে। উড়ান সংস্থার কর্তাদের চিন্তা, এখন প্রায় সব স্কুলেই পরীক্ষা চলছে। গরমের ছুটি পড়েনি। এখনই যদি এই অবস্থা হয়, তা হলে কয়েক সপ্তাহের মধ্যে যাত্রী-সংখ্যা আরও বাড়লে কী হবে? বিমানবন্দর সূত্রের খবর, গত ডিসেম্বর-জানুয়ারিতে এক দিনে সর্বোচ্চ যাত্রী-সংখ্যা দাঁড়িয়েছিল ৩৩ হাজারের কাছাকাছি। কিন্তু ইদানীং সংখ্যাটা কমে ২৯ হাজারে পৌঁছেছে।
তা হলে এত লাইন কেন? বিমানবন্দরের কর্মীরা জানাচ্ছেন, লাইন পড়ছে শুধুমাত্র নিরাপত্তা পরীক্ষার জায়গায়। যেখানে হাত ব্যাগ এক্স-রে করিয়ে যাত্রীদের দেহ তল্লাশি করা হয়। কলকাতা বিমানবন্দরের অধিকর্তা কৌশিক ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘কেন বুধবার এত লাইন হল, আমরাও বুঝতে পারছি না। কিন্তু সমস্যার সমাধান তো করতে হবে। তাই উড়ান সংস্থার কর্তা এবং নিরাপত্তা সংস্থার কর্তাদের নিয়ে খুব তাড়াতাড়ি বিশেষ বৈঠকে বসা হবে।’’ বিমানবন্দর সূত্রে অবশ্য খবর, এ দিন সেখানে নিরাপত্তা অডিট ছিল। সেই কারণেও তল্লাশিতে এমন দেরি হয়ে থাকতে পারে।
লাইন হচ্ছে মূলত ডোমেস্টিক টার্মিনালে। সেখানে চারটি ‘সিকিওরিটি হোল্ড এরিয়া’ (এসএইচএ) বা নিরাপত্তা বেষ্টনী রয়েছে। চারটি নিরাপত্তা বেষ্টনীতে মোট ১০টি এক্স-রে মেশিন বসানো হয়েছে। প্রতিটি মেশিনের জন্য দু’টি করে পুরুষদের এবং একটি করে মহিলাদের দেহ তল্লাশির বুথ রয়েছে।উড়ান সংস্থাগুলির কর্তাদের একাংশের মতে, নিরাপত্তা বেষ্টনীতে আরও এক্স-রে মেশিন বসানো দরকার। তা হলে তাড়াতাড়ি তল্লাশির কাজ শেষ করা যাবে। কিন্তু সে ক্ষেত্রে সমস্যা হল, তল্লাশির দায়িত্বে থাকা সিআইএসএফ-এর লোকবল সীমিত। তাই নতুন মেশিন আনলেও এখনই সমস্যার সুরাহা হবে না।
একটি উড়ান সংস্থার এক কর্তার অভিযোগ, ‘‘নিরাপত্তাকর্মীরা সময় নিয়ে ধীরেসুস্থে তল্লাশির কাজ চালাচ্ছেন। এখন আরও কড়াকড়ি করা হচ্ছে। প্রত্যেক যাত্রীকে কোমরের বেল্ট পর্যন্ত খুলতে হচ্ছে। কিন্তু তাতেও এতটা দেরি হওয়ার কথা নয়।’’উড়ান সংস্থাগুলির কর্তাদের আরও অভিযোগ, যে যাত্রীদের এত ক্ষণ লাইনে দাঁড়িয়ে থাকতে হচ্ছে, তাঁরা উড়ান ধরতে না পারলে ক্ষোভ উগরে দিচ্ছেন উড়ান সংস্থার কর্মীদের উপরেই। এক কর্তার কথায়, ‘‘উর্দি পরা নিরাপত্তা
অফিসারদের উপরে চিৎকার করার সাহস যাত্রীদের নেই। আমরাও যখন সিআইএসএফ-কে তল্লাশির কাজ তাড়াতাড়ি শেষ করার জন্য বলি, তখন শুনতে হয়, নিরাপত্তা নিয়ে আপস করা যাবে না।’’
সমাধান হিসেবে একটি প্রস্তাব উঠে এসেছে— যাত্রীদের এ বার আড়াই থেকে তিন ঘণ্টা আগে বিমানবন্দরে পৌঁছে যেতে অনুরোধ করা হতে পারে। কিন্তু সেটাও যে পাকাপাকি সমাধান নয়, তা বিলক্ষণ জানেন কর্তারা।