জনজোয়ার: বৃষ্টির আগে নিউ মার্কেটে কেনাকাটার ভিড়। রবিবার। ছবি: বিশ্বনাথ বণিক
পুজোর বাকি এক মাসের সামান্য কম। তার উপরে মাসের প্রথম রবিবার। ফলে, পুজোর কেনাকাটায় বাড়তি উৎসাহ থাকাই স্বাভাবিক। সে কারণেই ভাদ্রের ভ্যাপসা গরমকে হেলায় উড়িয়ে বেলা গড়াতেই শহরের শপিং মল এবং গড়িয়াহাট, নিউ মার্কেট চত্বরের ভিড় জনসমুদ্রের চেহারা নিল। তবে আধ ঘণ্টার তুমুল বৃষ্টি বাধা হয় ধর্মতলা চত্বরে কেনাকাটায়। সেই জলভরা মেঘ সরলেও ফের পথের কাঁটা হয় সন্ধ্যার ভারত-পাকিস্তান টি-২০ যুদ্ধ। যার সৌজন্যে সন্ধ্যার পর অনেকটাই হালকা হয়ে যায় ভিড়।
গত মাসের শেষ রবিবার মন ভার করেছিল ব্যবসায়ীদের। তবে সেপ্টেম্বরের প্রথম রবিবারে বাজারমুখী ক্রেতার ঢল হাসি ফোটাল নিউ মার্কেট, গড়িয়াহাট, হাতিবাগানের পাশাপাশি শপিং মলের বিক্রেতাদের মুখেও। গড়িয়াহাট, নিউ মার্কেটের একাধিক দোকানদারকে দেখা গেল, ক্রেতার চাহিদা সামলাতে ব্যস্ত। গড়িয়াহাটের ফুটপাতের ব্যবসায়ী স্বপন সাহা বললেন, ‘‘পুজোর আগে ক’সপ্তাহ এ ভাবেই চলুক। আর কিছু চাই না। গত দু’বছর যা নাকানি-চোবানি খেয়েছি!’’ ভিড় ঠেলে দোকানে ঘুরছিলেন লেক গার্ডেন্সের বাসিন্দা গীতা ভট্টাচার্য। তাঁর কথায়, ‘‘গত দু’বছর তো ছেলেমেয়েরা বাজার করতে বেরোতে দেয়নি। সব এসেছে অনলাইনে। পুজোর আগে এই যে ঘুরে ঘুরে কেনাকাটার মজা, এটা কি অনলাইনে হয়!’’
বেলা গড়াতেই ভিড় জমে উঠেছিল নিউ মার্কেটে। তবে দুপুরের পর খানিক ক্ষণের বৃষ্টি সেই ভিড় হালকা করে দেয়। বৃষ্টি কমতেই অবশ্য পুরনো চেহারায় ফিরে আসে নিউ মার্কেট। জামাকাপড়ের দোকানের পাশাপাশি এ দিন ভিড় ছিল ধর্মতলা চত্বরের খাবারের দোকানগুলিতেও। নিউ মার্কেটের ফুটপাতে দাঁড়িয়ে চিৎকারে সতীর্থদের টক্কর দিয়ে ক্রেতা সামলাচ্ছিলেন পোশাক ব্যবসায়ী আলম শেখ। তারই ফাঁকে এক ক্রেতাকে লক্ষ্য করে আলমের উক্তি, ‘‘দিদি, একটা জিনিস কিনতে এত সময় নেবেন না। বৃষ্টির পরে একটু লোকজন আসছেন, দাঁড়ানোর জায়গা না পেলে তাঁরা অন্যত্র চলে যাবেন। এত খুঁতখুঁতে হলে পুজোর পরে আসুন, অনেক সময় দিতে পারব।’’
বাজারে ভিড়ের প্রভাব পড়ে রাস্তাতেও। গড়িয়াহাট এবং নিউ মার্কেট সংলগ্ন রাস্তার ভিড় সামলাতে কার্যত নাজেহাল হতে হয় পুলিশকর্মীদের। দুপুরের দিকে পরিস্থিতি কিছুটা সামলানো গেলেও বিকেলে গড়িয়াহাট, নিউ মার্কেটে গাড়ি রাখার জন্য দীর্ঘ ক্ষণ অপেক্ষা করতে হয়। ভিড় নামে মূল রাস্তাতেও। যানজট ঠেলে ফিরতি পথে নাকাল হন মানুষ। নিউ মার্কেটে কর্তব্যরত এক পুলিশকর্মী বলেন, ‘‘এখানে গাড়ি রাখার জায়গা বলতে তো রাস্তা! সেখানে আর ক’টা গাড়ি রাখা যায়! এখনই এই ভিড়, পুজোর আগে যে কী হবে!’’ এ দিন নিউ মার্কেট এবং গড়িয়াহাটের ভিড় সামলাতে পুলিশকে দড়ির সাহায্য নিতেও দেখা গিয়েছে।
শহরের শপিং মলগুলিতেও এ দিন বিকেলের পর থেকে ঠাসাঠাসি ভিড় দেখা গিয়েছিল। কসবা, পার্ক সার্কাস, প্রিন্স আনোয়ার শাহ রোডের শপিং মলের একই রকম ছবি। প্রিন্স আনোয়ার শাহ রোডের শপিং মলে ভিড়ের চাপে এমন হয় যে, গাড়ি পার্কিংয়ের জায়গা নেই বলে বোর্ড টাঙিয়ে দেন মল কর্তৃপক্ষ। ভিড়ের কথা মেনে নিয়েছেন সেখানকার জেনারেল ম্যানেজার দীপ বিশ্বাস।
শ্যামবাজার থেকে বান্ধবীর সঙ্গে পুজোর কেনাকাটা করতে বেরিয়েছিলেন অনুভব চক্রবর্তী। ঘুরতে ঘুরতেই বান্ধবীকে বলে উঠলেন, ‘‘আগেই বলছি, যা কেনাকাটা করবে ছ’টা পর্যন্ত! তার পরে আমি নেই। ভারত-পাকিস্তান ম্যাচ মিস করতে পারব না।’’ যা শুনে মনে পড়ল নিউ মার্কেটের এক ব্যবসায়ীর আক্ষেপ, ‘‘এখানেই বৃষ্টি হতে হল! তার উপর খেলা। সন্ধ্যার বাজারটা পুরো মাটি করে দিল।’’
অর্থাৎ, মাসের প্রথম রবিবাসরীয় সন্ধ্যায় বাইশ গজের বাইরে ক্রেতার জন্য খানিকটা হলেও হাপিত্যেশ করে কাটালেন ব্যবসায়ীরা।