থিকথিকে: আর জি কর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের বহির্বিভাগে ডাক্তার দেখাতে রোগী ও তাঁদের পরিজনদের লম্বা লাইন। পাশেই স্ট্রেচারে শুয়ে রোগী। ছবি: সুমন বল্লভ
কেউ পৌঁছেছেন ভোর পাঁচটায়। কেউ তারও আগে! গাছতলায়, গাড়ি রাখার চাতালে বসে-আধশোওয়া হয়ে চলছে অপেক্ষা। কেউ বসে ধুঁকছেন, কেউ বা ছুটছেন জানতে আর কত ক্ষণ বাকি! দিন বদলায়, পালা বদলায়, প্রযুক্তি-নির্ভরতা বাড়ে, কিন্তু আর জি কর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের বহির্বিভাগে প্রতীক্ষার ছবিটা দশকের পর দশক একই থেকে যায় বলে অভিযোগ। সেখানে যে ভিড়ের সামনে পড়তে হয়, তার তুলনা চলে বনগাঁ লোকালের সঙ্গে।
ওই হাসপাতালের অস্থি-র বহির্বিভাগের ভিড়ে ডাক্তার দেখানোর লাইনে দাঁড়িয়ে ছিলেন বনগাঁর অলোক দাস। সকাল সাড়ে দশটায় টিকিট কেটে বিরক্ত অলোকবাবুর প্রশ্ন, ‘‘প্রায় দু’ঘণ্টা ঠায় দাঁড়িয়ে। যেন নড়ছেই না! ডাক্তার কি আদৌ বসেছেন?’’ সর্পিল লাইন চলে গিয়েছে বহু দূর। প্রশ্নটা মুখে মুখে এগিয়ে থামল। উত্তর মিলল, ডাক্তারবাবু এসে গিয়েছেন। প্রায় সব বিভাগেই তখন রোগী দেখে চলেছেন ডাক্তারবাবুরা। ভিন্ জেলা থেকে আসা এক রোগীর আত্মীয়ের প্রশ্ন, ‘‘জেলায় জেলায় হাসপাতাল খুলে কী হবে বলতে পারেন? সেই তো আর জি করে রেফার করে।’’
একটু এগোতেই দেখা মিলল, মলি ইন্দু নামে বছর পঞ্চাশের এক মহিলার। তাঁর আত্মীয়া মঞ্জুরানি দে যকৃতের ক্যানসারে ভুগছেন। মলি বলেন, ‘‘উনি হাঁটতে পারেন না। হুইলচেয়ারেও বসতে পারবেন না। অ্যাম্বুল্যান্সে শুইয়ে ট্রলির জন্য অপেক্ষা করছি।’’ ট্রলি যাঁরা দেন, তাঁদের এক জন বললেন, ‘‘বেলা বাড়লে রোগীর চাপ বাড়ে। তখন ট্রলিতে টান পড়ে।’’
বাবার জন্য ইসিজি পরীক্ষার লাইনে ঘণ্টা দুয়েক দাঁড়িয়ে হতাশ গোসাবার মনোরঞ্জন মণ্ডল। তাঁর কথায়, ‘‘ডাক্তার ইসিজি করার কথা বলার দেড় মাস পরে আজ তারিখ পেয়েছিলাম। কিন্তু ইসিজি হবে কি না, সেটাই বুঝতে পারছি না। কেউ তো কিছু বলছেনও না!’’ মনোরঞ্জনের প্রশ্ন, ‘‘হার্টের রোগীকে ডাক্তার দেখাতে আর কত অপেক্ষা করতে হবে!’’
ইএনটি-র বহির্বিভাগের ঝুলন্ত তারে বিপদ দেখছিলেন অনেকে। সিঁড়ির নীচে লাইনে যাঁরা দাঁড়িয়ে, তাঁদের মাথার উপরে তার। কারও সান্ত্বনা, ‘‘নিশ্চয়ই বিদ্যুৎ সংযোগ নেই ওতে!’’ কয়েক জনের প্রশ্ন, ‘‘বিদ্যুৎ না থাকলেও হাসপাতালে তার কেন ঝুলবে?’’ হাসপাতাল চত্বরে দু’টি প্রধান শৌচালয়। লাইন পড়ে শৌচালয় আর পানীয় জলের সামনেও। চারটি পানীয় জলের কল নষ্ট। রানাঘাটের এক রোগীর প্রশ্ন, ‘‘চত্বর জুড়ে এই ক’টা কল? এত মানুষ, শৌচালয় এত কম! কর্তৃপক্ষ কি চোখ বুজে থাকেন?’’
অন্তর্বিভাগের চিকিৎসকের লেখা রিকুইজ়িশন হাতে হন্তদন্ত হয়ে ঘুরছিলেন বাগুইআটির সুবীর সাহা। তাঁর দাদা সেখানেই ভর্তি। ওষুধ কিনতে ছুটলেন বাইরে। সুবীরবাবুর অভিযোগ, ‘‘প্রতিদিনই ১৫০-২০০ টাকার ওষুধ বাইরে থেকে কিনতে হয়। এই হল ফ্রি পরিষেবা।’’