হুজুগে: কোনও নিষেধ না থাকায় বড়দিনের পার্ক স্ট্রিটে উপচে পড়েছিল ভিড়। ছবি: স্বাতী চক্রবর্তী
হাইকোর্টের নির্দেশে এ বছর পুজোমণ্ডপে দর্শনার্থীদের প্রবেশ নিষিদ্ধ হয়েছিল। তাই দুর্গাপুজোয় সে ভাবে রাস্তায় মানুষের ঢল নামেনি। কিন্তু শীতের উৎসব-পর্বে সেই কড়াকড়ির বালাই নেই। ফলে বড়দিনে সন্ধ্যা নামতেই পার্ক স্ট্রিট এবং সংলগ্ন রাস্তাগুলির দখল নিলেন সাধারণ মানুষ। তবে আগে থেকেই প্রস্তুত থাকায় অবশ্য কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই সেই ভিড় হাল্কা করে দেয় পুলিশ। এমনকি, চার ঘণ্টার মধ্যেই ভিড় নিয়ন্ত্রণ করে গাড়ি চলাচলের জন্য খুলে দেওয়া হয় পার্ক স্ট্রিট। তবে অসচেতন মানুষকে মাস্ক পরাতে বাধ্য করলেও এ দিন দূরত্ব-বিধি রক্ষা করাতে পারেনি পুলিশ।
লালবাজার সূত্রের খবর, করোনা আবহের মধ্যেও এ বার বড়দিনে ভিড় নিয়ে তেমন কড়াকড়ি ছিল না প্রশাসনের তরফে। ফলে সাধারণ মানুষ যথেষ্ট সচেতন হয়েই রাস্তায় নামবেন না কি ঘরবন্দি থাকবেন, তা নিয়ে একটা অনিশ্চয়তা ছিল। বড়দিনের আগের রাতেও পার্ক স্ট্রিট বা সংলগ্ন সেন্ট পল্স ক্যাথিড্রালে অন্য বারের মতো তেমন ভিড় হয়নি। কিন্তু বড়দিনে সেই ছবিটা অবশ্য বদলে যায়। কোনও রকম বিধিনিষেধকে কার্যত তোয়াক্কা না করেই জনজোয়ার নামল শহরের রাস্তায়। তবে ওই দিন পার্ক স্ট্রিটে আসা জনতাকে দূরত্ব-বিধি মানাতে না পারলেও তাঁদের অনেককেই মাস্ক পরতে বাধ্য করে কলকাতা পুলিশ।
শুক্রবার বিকেলের পর থেকে রাস্তায় ক্রমশ ভিড় বাড়তে থাকে। যার জেরে বিকেল ৪টে নাগাদ পার্ক স্ট্রিট দিয়ে গাড়ি চলাচল সম্পূর্ণ বন্ধ করে দেওয়া হয়। সন্ধ্যা ৬টা-সাড়ে ৬টা বাজতে না বাজতেই উৎসাহী জনতার দখলে চলে যায় পার্ক স্ট্রিট। তবে এ বারের বড়দিনে ছোটদের নিয়ে পরিবার বা তরুণ ব্রিগেডের ঢল থাকলেও প্রবীণ-প্রবীণাদের প্রায় দেখাই যায়নি। এক সময়ে পার্ক স্ট্রিট মোড়ের ভিড়ের কারণে চৌরঙ্গি রোড, চাঁদনি চক পর্যন্ত চিত্তরঞ্জন অ্যাভিনিউয়ে গাড়ির লম্বা লাইন পড়ে যায়। সে সময়ে গার্ডরেল দিয়ে রাস্তার দু’পাশে পথচারীদের আটকে দিয়ে রাত ৮টা নাগাদ গাড়ি চলাচলের জন্য খুলে দেওয়া হয় পার্ক স্ট্রিট। তখন পথচারীদের কাউকেই রাস্তায় নামতে দেওয়া হয়নি। এমনকি ফুটপাতেও কাউকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেওয়া হয়নি। এ নিয়ে বার বার মাইকে ঘোষণা করা হয়। একই সঙ্গে মাস্ক পরা এবং দূরত্ব-বিধি বজায় রাখা নিয়েও চলে ঘোষণা।
পূর্ব ঘোষণা মতোই পার্ক স্ট্রিটের মোড়ে অস্থায়ী কন্ট্রোল রুম তৈরি করে নজরদারি চালায় পুলিশ। পার্ক স্ট্রিট মোড়ে কলকাতা পুলিশের যুগ্ম-কমিশনার পদমর্যাদার আধিকারিকদের পাশাপাশি ছিলেন ডিসি পদ মর্যাদার অফিসারেরাও। বড়দিনের ভিড় নিয়ন্ত্রণে শুধু পার্ক স্ট্রিটেই এ দিন ছিলেন পাঁচ জন ডিসি। এ ছাড়াও ওই চত্বরে মোতায়েন ছিলেন প্রায় ১২০০ জন পুলিশকর্মী। এমনকি পার্ক স্ট্রিটে গাড়ি চলাচল শুরু হওয়ার পরে কেউ কেউ পুলিশি নজর এড়িয়ে রাস্তায় নেমে হাঁটার চেষ্টা করলেও তেমন সফল হননি। তবে ওই দিন অ্যালেন পার্ক সাধারণ মানুষের জন্য বন্ধ ছিল।
আরও পড়ুন: মাস্কহীন যাত্রীদের জন্য কড়া নজর অ্যাপ-ক্যাবে
এ দিকে বড়দিনে ভিড় সামলানোর পাশাপাশি পার্ক স্ট্রিটে মোতায়েন পুলিশকর্মীদের বাড়তি দায়িত্ব ছিল অসচেতন জনতাকে মাস্ক পরতে বাধ্য করা। পকেটে বা হাতে মাস্ক নিয়ে সেখানে আসা অনেককেই মাস্ক পরতে বাধ্য করেছেন তাঁরা। তবে ওই দিন হেলমেট ছাড়া কোনও বাইক আরোহীকে সেখানে দেখা যায়নি। ফলে করোনা আবহে একপ্রকার নির্বিঘ্নেই বড়দিনের ভিড় সামলেছে কলকাতা পুলিশ। লালবাজার সূত্রের খবর, ওই দিন শহর জুড়ে অভব্য আচরণের জন্য ৩২৭ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। মাস্ক না পরার জন্য গ্রেফতার হয়েছেন ১৯৪ জন এবং প্রকাশ্যে থুতু ফেলার জন্য ২৯ জনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।