howrah station

Howrah Station: বেহাত হাওড়া স্টেশন চত্বর, যাত্রী-ভোগান্তির শেষ কবে

হাওড়ার দায়িত্বে থাকা কেএমডিএ-র এক পদস্থ কর্তা বলেন, ‘‘হাওড়ায় আমাদের এলাকা রক্ষণাবেক্ষণ করার মতো পরিকাঠামো বা লোকবল নেই।’’

Advertisement

দেবাশিস দাশ

কলকাতা শেষ আপডেট: ১৮ এপ্রিল ২০২২ ০৭:০৪
Share:

দখল: হাওড়া স্টেশন সংলগ্ন বাসস্ট্যান্ডের পাশের ফুটপাতে হকারদের কারণে হাঁটার জো নেই। ছবি: দীপঙ্কর মজুমদার

বাসে উঠতে যাত্রীদের লাইন দেওয়ার কথা যে বাস বে-তে, সেখানেই গড়ে উঠেছে ঘর-গৃহস্থালি। সেখানেই ধোয়া জামাকাপড় শুকোচ্ছে বেমালুম। দীর্ঘদিন পরিষ্কার না-করায় বাসস্ট্যান্ডের শৌচাগারের বন্ধ হয়ে যাওয়া নিকাশিনালা টপকে প্রস্রাব গড়িয়ে পড়ছে রাস্তায়। উপায় না-থাকায় তার উপর দিয়েই হেঁটে বাসস্ট্যান্ডে ঢুকতে হচ্ছে যাত্রীদের। কিন্তু বাসস্ট্যান্ডে পৌঁছে দাঁড়াবেন কোথায়? সব ফুটপাত, বাস বে-ই তো চলে গিয়েছে দখলদারদের হাতে। তাই চড়া রোদে ওই পরিবেশের মধ্যে রাস্তায় দাঁড়িয়ে বাসের জন্য অপেক্ষা করাটাই যেন ভবিতব্য হয়ে দাঁড়িয়েছে যাত্রীদের।

Advertisement

যে জায়গাটিকে বলা হয় হাওড়ার প্রবেশপথ, সেই হাওড়া স্টেশন চত্বর ও হাওড়া সেতু সংলগ্ন কলকাতা বাসস্ট্যান্ড চত্বরের এটাই হল বর্তমান ছবি। চরম প্রশাসনিক অবহেলায় দিনের পর দিন রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে হাওড়া স্টেশনের মতো গুরুত্বপূর্ণ একটি স্টেশনের বাইরের চত্বরটি কার্যত নরকের রূপ নিয়েছে বলে অভিযোগ। স্থানীয় সূত্রের খবর, কোভিড পরিস্থিতির পরে গত ছ’মাসে হাওড়া স্টেশন চত্বর, কলকাতা-হাওড়া বাসস্ট্যান্ড চত্বরে হকারদের ডালার (অস্থায়ী চৌকি) সংখ্যা দ্বিগুণেরও বেশি হয়ে গিয়েছে। অভিযোগ, প্রভাবশালী রাজনৈতিক নেতাদের মদতে এলাকার তোলাবাজদের দাপটে হকাররাজ ফের জাঁকিয়ে বসেছে গোটা এলাকায়। ডালার রেট বেড়ে গিয়ে হয়েছে দিনপ্রতি ২০০-৩০০ টাকা। বেদখল হওয়া বাসস্ট্যান্ডগুলিতে হকারদের গুমটির চাল এতটাই রাস্তার ওপর ঝুঁকে এসেছে যে বাস বে তে বাস ঢোকাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে বাসচালকদের। পুলিশের দাবি, এ সব দেখেও করার কিছু নেই। কারণ ব্যবস্থা নিলেই রাজনৈতিক ‘দাদা’দের ফোন এসে থমকে দিচ্ছে সব কিছুই।

হাওড়া স্টেশন চত্বর বা কলকাতা-হাওড়া বাসস্ট্যান্ড চত্বরে ডালা বসিয়ে তোলাবাজি কোনও নতুন ঘটনা নয়। হাওড়া সাবওয়ের ভিতরে বসা বেআইনি বাজার যেমন গত ৩০ বছরেও তোলা যায়নি, তেমনই হকারদের ডালা বসিয়ে তোলাবাজদের আয়ের পথও বন্ধ করা যায়নি। শুধু হয়রানি বেড়েছে সাধারণ মানুষের। চুরি হয়ে যাওয়া ফুটপাত আর যত্রতত্র বসা গুমটির আধিক্যে গোটা স্টেশন, বাসস্ট্যান্ড চত্বরে হাঁটাচলা করাই দায় হয়ে উঠেছে পথচারীদের।

Advertisement

কিন্তু কেন এই অবস্থা?

হাওড়া সিটি পুলিশের ট্র্যাফিক দফতরের এক পদস্থ কর্তা বলেন, ‘‘রাজনৈতিক হস্তক্ষেপের কারণেই হাওড়া স্টেশন চত্বর জুড়ে চলা অরাজকতা বন্ধ করা যাচ্ছে না। সব সরকারি দফতর, বিশেষ করে হাওড়া জেলা প্রশাসন, পুলিশ, হাওড়া পুরসভা, কেএমডিএ, রেল ব্যবস্থা না নিলে পরিস্থিতির উন্নতি সম্ভব নয়।’’

অভিযোগ, স্টেশন চত্বর বাদে হাওড়া সেতু থেকে বঙ্কিম সেতু পর্যন্ত গোটা চত্বরটির কার্যত ভাগের মা অবস্থা হয়ে রয়েছে। কারণ প্রায় এক বর্গ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে থাকা এই জায়গাটিতে জমি রয়েছে রেলের, কেএমডিএ-র এবং হাওড়া পুরসভার। এর মধ্যে কলকাতা বাসস্ট্যান্ড বা হাওড়ার দিকে স্থানীয় ও দূরপাল্লার বাসস্ট্যান্ডের মত সিংহভাগ জমির মালিক কেএমডিএ। এমনকি, হাওড়া সাবওয়ের জমিও কেএমডিএ-র বলে ওই দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে।

কিন্তু কেএমডিএ কেন ওই গুরুত্বর্পূণ জায়গার রক্ষণাবেক্ষণ করে না? হাওড়ার দায়িত্বে থাকা কেএমডিএ-র এক পদস্থ কর্তা বলেন, ‘‘হাওড়ায় আমাদের এলাকা রক্ষণাবেক্ষণ করার মতো পরিকাঠামো বা লোকবল নেই। সদর দফতর থেকে টাকা এলে রক্ষণাবেক্ষণ করা হয়। তবে সম্প্রতি কেএমডিএ-র সদর দফতর থেকে পদস্থ অফিসারেরা এসে গোটা এলাকা পরিদর্শন করেছেন। একটা পরিকল্পনা তৈরি করে শীঘ্রই বাসস্ট্যান্ড, রাস্তাঘাট সংস্কারে নামা হবে।’’

এ ব্যাপারে হাওড়া পুরসভার চেয়ারপার্সন সুজয় চক্রবর্তী বলেন, ‘‘ওই এলাকার উন্নয়নে যদি সমস্ত দফতর মিলে বসে কোনও সমন্বয় বৈঠক করা যায়, তাতে আমরা সব সময়ে রাজি। পুরসভার থেকে সাহায্য চাইলে আমরা সব সময়েই দিয়ে থাকি।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement