Govt Office

Pension Delay: দফতরে ঘুরেই মাস পার, উত্তর নেই পেনশন-প্রশ্নের

সকলের একটাই বক্তব্য, মৃতের পরিবারের পাশে দাঁড়াতে যে রাজ্যে ‘সমব্যথী’র মতো প্রকল্প চলে, সেখানে সদ্য স্বজনহারা এই পরিবারগুলির কাজ পড়ে থাকে কী করে?

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ০৭ জুলাই ২০২১ ০৬:০৫
Share:

প্রতীকী চিত্র।

কখনও জানানো হচ্ছে, লকডাউন চলছে। কখনও বলা হচ্ছে, কর্মীরা অফিসে আসছেন না। কোনও দিন কোনও এক কর্মীর করোনায় আক্রান্ত হওয়ার কথা জানিয়ে সরাসরি উপভোক্তাকে আসতে বারণ করা হচ্ছে। কোনও দিন আবার বলা হচ্ছে, “এক গুরুত্বপূর্ণ কর্তা ছুটিতে আছেন। তিনি না ফেরা পর্যন্ত কাজ হবে না!”

Advertisement

অভিযোগ, গত কয়েক মাসে শহর-শহরতলির বহু সরকারি দফতরে এমন পরিস্থিতি চলছে। যার জেরে সব চেয়ে সমস্যায় পড়েছেন সদ্য করোনায় বা অন্য কোনও কারণে মৃত সরকারি কর্মী বা অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মীর পরিজনেরা। দফতর ঘুরে ঘুরে জুতোর সুখতলা ক্ষইয়ে ফেললেও পেনশন বন্ধ হবে কবে, কবে চালু হবে পারিবারিক পেনশন— সেই প্রশ্নের উত্তর পাচ্ছেন না তাঁরা। সকলের একটাই বক্তব্য, মৃতের পরিবারের পাশে দাঁড়াতে যে রাজ্যে ‘সমব্যথী’র মতো প্রকল্প চলে, সেখানে সদ্য স্বজনহারা এই পরিবারগুলির কাজ পড়ে থাকে কী করে?

গত ১৫ মার্চ হৃদ্‌রোগে মারা গিয়েছেন মানিকতলার বাসিন্দা, কলকাতা রাষ্ট্রীয় পরিবহণ নিগমের (সিএসটিসি) অবসরপ্রাপ্ত কর্মী অমরকুমার দাস। তিনি বিয়ে করেননি। অবিবাহিত বোনের সঙ্গে থাকতেন। অমরবাবুর পেনশনের টাকাতেই সংসার চলত ভাই-বোনের। দাদার মৃত্যুর পরে তাঁর অ্যাকাউন্ট থেকে টাকা তুলতে গেলে ওই মহিলাকে জানানো হয়, অমরবাবু যে দফতরে চাকরি করতেন, সেখানে তাঁর পেনশন বন্ধ করার জন্য আবেদন করতে হবে। সেই আবেদন পেয়ে ওই দফতর ‘নো অবজেকশন’ চিঠি লিখে দেবে। সেটা ব্যাঙ্কে দেখালেই অমরবাবুর অ্যাকাউন্ট বন্ধ করে সঞ্চিত টাকা তাঁর বোনকে দেওয়া হবে।

Advertisement

গত মার্চেই বেলঘরিয়ার নীলগঞ্জ রোডে সিএসটিসি-র অফিসে যান অমরবাবুর বোন। কিন্তু অভিযোগ, সেখানকার পেনশন অফিসার গৌতম বিশ্বাস প্রয়োজনীয় নথিপত্র নিয়ে জানান, ভোট না মিটলে কিছু করা সম্ভব নয়। ভোট মেটার পরে গৌতমবাবু জানান, অফিসের এক কর্তা ছুটিতে। তিনি না ফেরা পর্যন্ত কিছু হবে না। অমরবাবুর বোনের অভিযোগ, এর কিছু দিন পরে ওই অফিসার জানান, তাঁর করোনা হয়েছে। মহিলা বলেন, “চার মাস ধরে ধার করে সংসার চালাচ্ছি। এর পরে কী করব জানি না।’’

একই রকম অভিযোগ সিআইটি রোডের বাসিন্দা, খাদ্য দফতরের অবসরপ্রাপ্ত কর্মী সুমন ঘোষালের পরিবারের। স্বামীর মৃত্যুর পরে পাঁচ মাসেরও বেশি কেটে গেলেও পারিবারিক পেনশন চালু করা যায়নি বলে অভিযোগ স্ত্রী কবিতাদেবীর। কাশীপুরের বাসিন্দা, শ্রম দফতরের অবসরপ্রাপ্ত কর্মী সুনীতা সরকারের মৃত্যুর পরে তাঁর প্রতিবেশীরা হিমশিম খাচ্ছেন মৃতার রেশন কার্ড জমা করে ডেথ সার্টিফিকেট পেতে। অবিবাহিত ওই বৃদ্ধার পরিবার বলতে শুধু বিশেষ ভাবে সক্ষম এক ভাই। সুনীতাদেবীর এক প্রতিবেশী বলেন, “নিয়ম হয়েছে, রেশন কার্ড জমা দিলে রেশন অফিস থেকে একটা স্লিপ দেওয়া হবে। সেটি নিয়ে গিয়ে দেখালে মিউনিসিপ্যালিটি থেকে ডেথ সার্টিফিকেট দেওয়া হবে। কিন্তু রেশন কার্ডই জমা করা যাচ্ছে না।’’ কেন? ওই প্রতিবেশীর অভিযোগ, কার্ডে রেশন ডিলার ও কেরোসিন ডিলারের স্ট্যাম্প মেরে আনতে বলা হয়েছে। কিন্তু ডিলারেরা স্ট্যাম্প দিতে টালবাহানা করছেন।

সিএসটিসি-র ওই অবসরপ্রাপ্ত কর্মীর ঘটনা শুনে দ্রুত সাহায্যের আশ্বাস দিয়েছিলেন রাজ্যের পরিবহণ সচিব রাজেশ সিংহ। মঙ্গলবার পরিবহণ দফতরে ওই পরিবারটির সঙ্গে দেখা করেন তিনি। দফতরের এক যুগ্ম-অধিকর্তার কাছে তাঁদের পাঠানো হয়। সেখানেই সমস্যার সমাধান হয়। অমরবাবুর পরিজনেরা প্রয়োজনীয় নথি নিয়ে গিয়েছেন বলে খবর।

তবে অন্য সরকারি দফতরের ক্ষেত্রে এমন দীর্ঘসূত্রতার অভিযোগ প্রসঙ্গে প্রশাসনের এক কর্তা বলেন, “এমন হওয়ার কথা নয়। এক সময়ে কম কর্মী নিয়ে কাজ চালানো হলেও কোনও সরকারি দফতর বন্ধ রাখা হয়নি। দ্রুত বিষয়টি দেখা হবে।”

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement