Coronavirus in Kolkata

হাসপাতালের নামেই ভয়, ব্লাড ব্যাঙ্কও  ‘অচ্ছুত’

দু’-একটি সংগঠন আগে থেকে ‘ডেট রেজিস্ট্রি’ করেও করোনার প্রকোপ বাড়তেই অন্য ব্লাড ব্যাঙ্কের সঙ্গে যোগাযোগ করে পুরনো ‘বুকিং’ বাতিল করেছে।

Advertisement

চন্দন বিশ্বাস

কলকাতা শেষ আপডেট: ২০ মে ২০২১ ০৬:০৮
Share:

—ফাইল চিত্র।

করোনা হাসপাতালের নামেই ভয়! যার জেরে রক্তদান শিবির থেকে আপাতত ‘অচ্ছুত’ ওই হাসপাতাল চত্বরে থাকা ব্লাড ব্যাঙ্ক। অতিমারির এই সময়ে বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন রক্তদান শিবিরের আয়োজনে এগিয়ে এলেও হাসপাতালের নাম শুনেই পিছিয়ে যাচ্ছে। অনেকে আবার শিবিরের প্রস্তুতি বাতিল করে অন্য ব্লাড ব্যাঙ্কের সঙ্গে যোগাযোগ করছে। এই অবস্থায় দিন দিনই রক্তের সঙ্কট তীব্রতর হচ্ছে এম আর বাঙুর হাসপাতালের ব্লাড ব্যাঙ্কে।

Advertisement

গত বছরই এম আর বাঙুরকে পুরোদস্তুর কোভিড হাসপাতালে পরিণত করেছিল রাজ্য স্বাস্থ্য দফতর। কোভিডে আক্রান্ত না-হলে এখন সেখানে ভর্তি হওয়া যায় না। ওই হাসপাতাল চত্বরেই রয়েছে ব্লাড ব্যাঙ্ক। কিন্তু এম আর বাঙুর কোভিড হাসপাতাল হওয়ায় সেই ব্লাড ব্যাঙ্কও এখন বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের কাছে ‘অচ্ছুত’। সংক্রমণের ভয়ে ওই ব্লাড ব্যাঙ্কের কর্মীদের মাধ্যমে রক্তদান শিবির করতে রাজি হচ্ছে না তারা। গত ১ মে শেষ বার রক্তদান শিবিরে অংশ নিয়েছিল ওই ব্লাড ব্যাঙ্ক।

দু’-একটি সংগঠন আগে থেকে ‘ডেট রেজিস্ট্রি’ করেও করোনার প্রকোপ বাড়তেই অন্য ব্লাড ব্যাঙ্কের সঙ্গে যোগাযোগ করে পুরনো ‘বুকিং’ বাতিল করেছে। গত দেড় মাসে মাত্র দু’টি শিবির থেকে রক্ত সংগ্রহ করতে পেরেছে এম আর বাঙুর ব্লাড ব্যাঙ্ক। জানুয়ারি থেকে ধরলে ওই সংখ্যাটা মাত্র ২৪। এই অবস্থায় রক্তের সঙ্কটের কথা জানিয়ে বিভিন্ন সংগঠনের সঙ্গে যোগাযোগ করে তাদের বোঝানোর চেষ্টা চলছে। রক্তদানের সঙ্গে যুক্ত এক ব্যক্তি বললেন, ‘‘আসলে অনেকেই সংক্রমণের ভয় পাচ্ছেন। ভাবছেন, ওখান থেকে কর্মীরা রক্ত নিতে এলে তাঁদের থেকে সংক্রমণ ছড়াতে পারে।’’

Advertisement

এম আর বাঙুরের ব্লাড ব্যাঙ্ক সূত্রে জানা গিয়েছে, করোনা হাসপাতাল বলে সেখানে রক্তের চাহিদাও অনেক বেশি। বিভিন্ন সময়ে আক্রান্তদের অনেককেই রক্ত দিতে হচ্ছে। এমনিতেই করোনার কারণে রক্তদান শিবিরের সংখ্যা কমেছে। অন্য ব্লাড ব্যাঙ্কগুলি সপ্তাহে বেশ কয়েকটি শিবির থেকে রক্ত নিতে পারলেও এম আর বাঙুরের ঝুলি কার্যত শূন্যই থাকছে।

অন্য কয়েকটি ব্লাড ব্যাঙ্কে খোঁজ নিয়ে জানা গেল, প্রতি সপ্তাহেই কোনও না কোনও শিবির থেকে তারা রক্ত সংগ্রহ করছে। যেমন, এন আর এসের ব্লাড ব্যাঙ্ক। শিবিরের সংখ্যা কমলেও প্রতি সপ্তাহেই কিছু পরিমাণ রক্ত সংগ্রহ চলছে। গত রবিবার মোট পাঁচটি শিবির থেকে রক্ত সংগ্রহ করেছে ওই ব্লাড ব্যাঙ্ক। প্রায় একই তথ্য পাওয়া গেল কলকাতা মেডিক্যাল কলেজের ব্লাড ব্যাঙ্ক থেকেও। শিবিরের সংখ্যা কমলেও রক্ত সংগ্রহের কাজ থেমে যায়নি।

এম আর বাঙুর ব্লাড ব্যাঙ্কের এক কর্মী বললেন, ‘‘আমরা কেউই আপাতত করোনায় আক্রান্ত নই। তা ছাড়া, রক্তদান শিবিরে যাওয়ার আগে আমরা নিজেদের করোনা পরীক্ষা করিয়ে নিই। কিন্তু এখন আতঙ্কের বশে কোনও ক্লাব বা সংগঠন রক্তদান শিবিরে আমাদের ডাকছে না। তারা শহরের অন্যান্য ব্লাড ব্যাঙ্কের সঙ্গে যোগাযোগ করছে। কোনও কোনও সংগঠন সরাসরিই জানিয়ে দিচ্ছে যে, তারা আমাদের থেকে সংক্রমণ ছড়ানোর ভয় পাচ্ছে।’’

এম আর বাঙুর ব্লাড ব্যাঙ্কের মেডিক্যাল অফিসার ইন-চার্জ, চিকিৎসক কৃষ্ণকান্ত বারুই বললেন, ‘‘বর্তমানে আমাদের ব্লাড ব্যাঙ্কে রক্তের তীব্র সঙ্কট চলছে। দিন দিন যা বাড়ছে। আমরা বিভিন্ন সংগঠনের সঙ্গে যোগাযোগ করছি। কিন্তু করোনা হাসপাতাল চত্বরে ব্লাড ব্যাঙ্ক হওয়ায় আপাতত অনেকেই আমাদের এড়িয়ে যেতে চাইছে।’’

রক্তদান আন্দোলনে যুক্ত সমাজকর্মী অচিন্ত্য লাহা বলেন, ‘‘সাধারণ মানুষের পাশাপাশি বিভিন্ন সংগঠনেরও এগিয়ে আসা উচিত। প্রতিটি ব্লাড ব্যাঙ্কই এই সময়ে বিভিন্ন রকম সতর্কতা অবলম্বন করে রক্তদান শিবিরের আয়োজন করছে। এম আর বাঙুরও ব্যতিক্রম নয়। তাই ভয় না-পেয়ে রক্তদান করাই এখন কর্তব্য।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement