আবেদন: বারুইপুর ডাকঘরে আধার সংশোধনের লাইন। নিজস্ব চিত্র
আধার কার্ড সংশোধনের জন্য অপেক্ষা করতে হচ্ছে দিনের পর দিন। এই মুহূর্তে সেই কাজে গেলে ছ'মাস বাদে পড়ছে তারিখ। বারুইপুর ডাকঘর আধার কার্ড সংশোধন করতে আসা মানুষের অভিযোগ তেমনই।
বেশ কিছু দিন ধরেই সেখানে আধার কার্ড সংশোধন এবং নতুন কার্ড তৈরির কাজ চলছে। অভিযোগ, সেই কাজে ডাকঘরে গেলে একটি কাগজে নাম লিখে কুপন দেওয়া হচ্ছে। কবে সংশোধনের কাজ হবে তা-ও লিখে দেওয়া হচ্ছে সেখানে। ফেব্রুয়ারিতে কুপন সংগ্রহ করলে সংশোধনের তারিখ পড়ছে অগস্টে! কার্ড সংশোধনের কাজে শুক্রবারই ডাকঘরে গিয়েছিলেন ধপধপির বাসিন্দা সিরাজুল শেখ। কাগজে নাম লিখে নিয়ে তাঁকে ৫ অগস্ট আবার আসতে বলা হয়েছে। এ দিন সংশোধনের লাইনে দাঁড়িয়ে সুভাষগ্রামের নিহাররঞ্জন সরকার বলেন, “তিন মাস আগে কুপন নিয়েছিলাম। আজ সংশোধনের তারিখ পড়েছিল। কয়েক ঘণ্টা হয়ে গেল লাইনেই দাঁড়িয়ে আছি। এখনও ডাক আসেনি।”
বারুইপুর ডাকঘর সূত্রের খবর, প্রতি দিনই সংশোধনের কাজ হচ্ছে। তবে একসঙ্গে এত মানুষ কার্ড সংশোধনে আসছেন যে বাধ্য হয়ে দিনে ১০০টি করে নাম লেখা হচ্ছে। বাকিদের পরদিন আসতে বলা হচ্ছে। এ ভাবে এগোতে গিয়ে আগামী ছ'মাস ভর্তি হয়ে গিয়েছে। এখন কেউ সংশোধনে এলে তাঁকে ছ’মাস অপেক্ষা করতেই হবে।
এই পরিস্থিতিতে একাধিক কেন্দ্রে কার্ড সংশোধন করানোর দাবি তুলছেন সাধারণ মানুষ। সূত্রের খবর, কিছু ব্যাঙ্কের শাখায় কার্ড সংশোধনের কাজ হচ্ছে। কিন্তু সেখানে অতিরিক্ত টাকা চাওয়ার অভিযোগ শোনা যাচ্ছিল। তাই বেশির ভাগ মানুষ সংশোধনের কাজে ডাকঘরে যাচ্ছেন।
হঠাৎ করে আধার কার্ড সংশোধনে এত ভিড় কেন? ডাকঘরের এক আধিকারিক জানাচ্ছেন, এনআরসি, সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন নিয়ে হইচই শুরু হতেই এ কাজের হিড়িক বেড়েছে। অনেকেই আশঙ্কা করছেন, কার্ডে সব তথ্য ঠিক না থাকলে সমস্যা হতে পারে। তাই তড়িঘড়ি সংশোধনের লাইনে দাঁড়াচ্ছেন। আর যাঁদের এখনও কার্ড নেই, তাঁরাও দ্রুত নতুন কার্ড করিয়ে নিতে চাইছেন।
ওই আধিকারিক আরও জানান, বহু মানুষ ভুল ধারণা নিয়ে সংশোধন করাতে আসছেন। যেমন, অনেক মহিলা কার্ডে বাবার নামের জায়গায় স্বামীর নাম ঢোকাতে চাইছেন। অনেকে উল্টোটাও দাবি করছেন। এমন কিছু বিষয় সংশোধন করতে চাইছেন, যেটার আদৌ দরকার নেই। এতে ভিড় আরও বাড়ছে।
মহকুমা প্রশাসনের এক কর্তা বলেন, “আধার কার্ড নিয়ে আমাদের কাছে তথ্য নেই। কী হচ্ছে, কী ভাবে হচ্ছে ―এ সব বলতে পারব না। গোটা বিষয়টি কেন্দ্রীয় সরকার করছে। রাজ্য সরকারের ভূমিকা নেই। ফলে জেলা বা মহকুমা প্রশাসন জড়িত নয়।”
এই হয়রানির শেষ কোথায়? আধার কার্ড সংশোধনের সঙ্গে যুক্ত বারুইপুর ডাকঘরের অন্য এক আধিকারিক বলেন, “চেষ্টা করা হচ্ছে সুষ্ঠু ভাবে পরিষেবা দিতে। ধৈর্য ধরতে হবে। সবার কাজই সময়ে হবে।”