হাজরা রোডে রাস্তা জুড়ে তৈরি হয়েছে পুজো মণ্ডপ। পাশের একচিলতে জায়গা দিয়ে কোনও মতে চলছে যাতায়াত। ছবি: দেবস্মিতা ভট্টাচার্য।
ব্যস্ত রাস্তা জুড়ে দাঁড়িয়ে পুজো মণ্ডপ। সেখানে বাঁশের কাঠামো তৈরির পাশাপাশি জোরকদমে চলছে জলসার মঞ্চ বাঁধার কাজও। যানবাহন চলাচলের জন্য রাস্তার যে কয়েক ফুট জায়গা ছাড়া হয়েছে, সেখান দিয়ে মালবাহী গাড়ি তো দূর, ছোট গাড়িরও যাওয়া দুষ্কর। মণ্ডপের পাশ দিয়ে গন্তব্যে যেতে গাড়ির একটি চাকা কার্যত তুলে দিতে হচ্ছে ফুটপাতে!
এ ভাবেই রাস্তা দখলে অভিযুক্ত দক্ষিণের মনোহরপুকুর রোডের যুবক সমিতির কালীপুজো। উদ্যোক্তাদের যদিও দাবি, রাস্তার উপরে পুজো মণ্ডপ হলেও তাতে যানবাহন চলাচলে তেমন সমস্যা হচ্ছে না। শুধু পুজো শুরুর আগেই নয়, পুজোর দিনেও নিশ্চিন্তে সেখান দিয়ে যানবাহন চলাচল করতে পারবে। ওই পুজোর অন্যতম উদ্যোক্তা চন্দন দাসের কথায়, ‘‘প্রতি বার যেমন গাড়ির জন্য জায়গা ছাড়া হয়, এ বছরও তা-ই করা হয়েছে। যাতায়াতে তেমন কোনও অসুবিধা হওয়ার কথা নয়।’’ স্থানীয় বাসিন্দাদের দাবি অবশ্য ভিন্ন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক বাসিন্দার কথায়, ‘‘দিনে তবু কোনও মতে গাড়ি নিয়ে ঢোকা গেলেও রাতের দিকে তারও উপায় থাকে না। রাস্তা জুড়ে চেয়ার পাতা থাকে। নিরুপায় হয়ে বন্ধু বা অন্য কোনও পরিচিতের বাড়িতে গাড়ি রেখে ফিরতে হয়।’’
রাস্তা দখলের একই অভিযোগ উঠেছে হাজরা রোডেও। মাত্র ২০০ মিটার দূরত্বের মধ্যেই জোরকদমে চলছে হাজরা যুবক সমিতি এবং হাজরা বারোয়ারি কালীপুজোর মণ্ডপের নির্মাণ। একটু দূরে হাজরা বেলতলা মোড়ে আরও একটি মণ্ডপ তৈরি চলছে। ফলে, গোটা রাস্তাটাই কার্যত চলে গিয়েছে এই তিনটি মণ্ডপের দখলে। পাশে অল্প কিছুটা জায়গা ফাঁকা রাখা হলেও যাতায়াতের জো নেই। কারণ, সেখানেও বাঁশ ও মণ্ডপ তৈরির অন্যান্য সরঞ্জাম ছড়িয়ে-ছিটিয়ে পড়ে। হাজরা যুবক সমিতির উদ্যোক্তা সুজিতকুমার ঘোষ যদিও রাস্তা আটকানোর অভিযোগ মানতে নারাজ। তাঁর কথায়, ‘‘আদালতের নিয়ম মেনেই পুজো করছি। সেই ভাবে রাস্তাও ছাড়া আছে। নিয়ম মতো এটা যে হেতু ছোট রাস্তা, তাই বাইকে ছাড় দেওয়ার কথা। কিন্তু আমরা গাড়ি যাতায়াতের জায়গাও রেখেছি।’’ একই দাবি হাজরা বারোয়ারির উদ্যোক্তাদেরও।
উত্তরের রাজা রামমোহন রায় সরণিতেও দেখা গেল রাস্তা ‘দখলের’ একই ছবি। সেখানে রাস্তার দু’ধারে মণ্ডপ থেকে শুরু করে মেলা পর্যন্ত বসে গিয়েছে। যার রেশ পড়তে শুরু করেছে পুজোর দু’দিন আগে থেকেই। দিনেও এই রাস্তায় গাড়ির লম্বা লাইন চোখে পড়ছে। নিত্যযাত্রীদের কথায়, ‘‘দিনে তা-ও গাড়ি নিয়ে যাতায়াত করা যাচ্ছে। পুজো থেকে বিসর্জন পর্যন্ত ক’দিন তারও উপায় থাকে না। দীর্ঘ পথ ঘুরে ঘুরে গন্তব্যে পৌঁছতে হয়।’’
তবে, পুজোকে কেন্দ্র করে রাস্তা দখলের এই অভিযোগ নতুন নয়। বছরের পর বছর ধরে চলা এই ‘রোগ’ সারাতে পুলিশের নজর রয়েছে বলেও বার বার দাবি করা হয় লালবাজারের তরফে। কিন্তু পুলিশি নজরদারির পরেও বিধি ভাঙার এই ‘প্রবণতা’ যে কমানো যায়নি, তারই প্রমাণ মিলছে শহরের বিভিন্ন প্রান্ত ঘুরে। কোথাও রাস্তার দুই-তৃতীয়াংশ আটকে মণ্ডপ তৈরি হয়েছে। কোথাও আবার সেটুকু ছাড়ও দেওয়া হয়নি। তবে রাস্তা আটকে মণ্ডপ তৈরির পরেও পুজোর অনুমতি কী ভাবে মিলছে, সেই প্রশ্ন তুলছেন শহরের সচেতন নাগরিকদের একাংশ। লালবাজারের কর্তাদের যদিও দাবি, পুজো কমিটিগুলির সঙ্গে বৈঠকে প্রয়োজনীয় নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এক পুলিশকর্তার কথায়, ‘‘রাস্তা যাতে কোনও ভাবে আটকানো না হয়, তা দেখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে স্থানীয় থানাগুলিকে। গাড়ি যাতায়াতে যাতে বাধা না থাকে, তা-ও দেখতে বলা হয়েছে।’’