ভিড়ভাট্টা: চলছে কেনাকাটা। রবিবার, গড়িয়াহাটে। নিজস্ব চিত্র
প্রবল গুঁতোগুঁতির মধ্যে এক জায়গায় পায়ের গতি সামান্য কম। লেডিজ ব্যাগ হাতে এক ব্যক্তি চেঁচাচ্ছেন, ‘‘বাগড়ি...। বাগড়ি...!’’ থেমে বলছেন, ‘‘এক দর। সময় কম।’’ কাছে গিয়ে বোঝা গেল, বাগড়ির পোড়া মার্কেটের সঙ্গে কোনও সম্পর্ক নেই। স্রেফ বিক্রির জন্য লোক ডাকতে তিনি ওই ভাবে চেঁচিয়ে চলেছেন!
ধর্মতলা মার্কেট থেকে বেরোনোর সময়ে এই অভিজ্ঞতা ছাড়া রবিবারের পুজোর বাজারে শহরের জোড়া বিপর্যয়ের কোনও প্রভাব চোখে পড়ল না। সকলেই যেন উৎসবের মেজাজে! গড়িয়াহাটে কেনাকাটিতে ব্যস্ত মিত্র পরিবারের কয়েক জন বলছিলেন, ‘‘মাঝেরহাট ব্রিজ ভাঙার পরে আলিপুর রোড ধরে এ দিকে আসাই বিপদ হয়ে গিয়েছে। কেনাকাটি তো হল। ঠাকুর দেখব কী করে!’’ ওই পর্যন্তই! বিশেষ পণ্য সংস্থার হয়ে ধর্মতলায় ঢাক বাজাতে বাজাতে হেঁটে চলা লোকের দল, গড়িয়াহাট মার্কেটে বাঁশ দিয়ে ঘেরা ‘শপিং কোর্ট’ যেন ভুলিয়ে দিয়েছে গত এক মাসের জোড়া বিপর্যয়।
বিয়ের পরে প্রথম পুজোর কেনাকাটা করতে স্বামীর সঙ্গে ধর্মতলায় এসেছেন মধ্যমগ্রামের স্নেহা ভট্টাচার্য রায়। বললেন, ‘‘বিপদ হয়। সে সব ভুলে উৎসবও হয়। এটাই জীবন।’’ স্বামী, রক্তিম রায় বললেন, ‘‘ওঁদের জন্য খারাপ লাগছে। তবে উৎসব থেমে থাকার নয়।’’
গড়িয়াহাট মোড়ের এই ভিড়ের সঙ্গে এ দিন ছিল একটি রাজনৈতিক দলের মিছিল। একটি শাড়ির দোকানে দাঁড়িয়ে মধ্যবয়স্কা মালতী হাজরা বললেন, ‘‘শাড়ি এখন শুধু পুজোতেই হয়।’’ ঢাকাই গায়ে ফেলে পাশে দাঁড়ানো মেয়ের তখন কথা বলার সময় নেই। ধর্মতলার একাংশ আবার অবরুদ্ধ জুতো প্রস্তুতকারী সংস্থায় ঢোকার ভিড়ে। লিন্ডসে স্ট্রিট হয়ে সেই ভিড় গিয়েছে হার্ডফোর্ড লেন পর্যন্ত। এই ভিড়ে খুশি ব্যবসায়ীরা। গড়িয়াহাট ইন্দিরা হকার্স ইউনিয়নের প্রেসিডেন্ট অভিজিৎ সাহা বলেন, ‘‘বিক্রি ভালই হল। দুর্ঘটনার প্রভাব পড়েনি।’’ এসপ্ল্যানেড বাজারের ব্যবসায়ীদের তরফে রজত হাজরা বলেন, ‘‘বাঙালির কাছে সবার উপরে উৎসব।’’
তখনও ভাসছে সেই ঢাকের তাল। পুজো এসে গিয়েছে...!