জনজোয়ার: বছরের শেষ দিনে ইকো পার্কে উপচে পড়া ভিড়। কারও কারও মুখে মাস্কের বালাই নেই। ছবি: স্নেহাশিস ভট্টাচার্য
বছর শেষের দিনে ইকো পার্কে ভিড় হল ঠিকই, তবে অন্যান্য বারের তুলনায় বেশ কিছুটা কম। আদালতের নির্দেশ এবং করোনা-বিধি যাতে সকলে মেনে চলেন, তার জন্য প্রশাসনের প্রচেষ্টাতেও হয়তো খামতি ছিল না। কিন্তু বড়দিনের মতো এ দিনও দেখা গেল, এক শ্রেণির মানুষ বিধি মেনে চলার কোনও চেষ্টাই করছেন না। মাস্ক খুলে এবং দূরত্ব-বিধি উড়িয়ে ঘুরে বেড়ালেন তাঁদের অনেকেই। হিডকো এবং বিধাননগর পুলিশ দিনভর যৌথ ভাবে ইকো পার্কের গেট থেকে শুরু করে সংলগ্ন এলাকায় নজরদারি চালিয়েছে। সচেতনতামূলক প্রচার চালানোর পাশাপাশি মাস্কও বিতরণ করেছে তারা।
প্রশাসন সূত্রের খবর, দর্শকদের অধিকাংশ মোটের উপরে বিধি মানলেও একটি বড় অংশকে কোনও মতেই বাগে আনা যায়নি। প্রশাসনিক কর্তাদের বক্তব্য, দিনভর পুলিশ এবং হিডকো-র কর্মীরা চেষ্টা করেছেন। কিন্তু মানুষ নিজেরা সচেতন না হলে কিছুই করা সম্ভব নয়।
এ দিন বাইরে বেরোনো মানুষের একটি অংশকে দেখে মনে হয়েছে, করোনা বলে বোধহয় আর কিছুই নেই। কারও যুক্তি, মাস্ক পরলে নাকি দম নিতে পারেন না। কারও মাস্ক ঢোকানো পকেটে, কারও বা থুতনিতে। মাস্ক পরেননি কে? প্রশ্ন শুনে অনেকে একগাল হেসে মাস্ক পরে নিয়েছেন। কেউ কেউ আবার ভ্রুক্ষেপও করেননি।
তবে বড়দিনের তুলনায় এ দিন ইকো পার্কে শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখার বিধি অনেকটাই বেশি
মানতে দেখা গিয়েছে লোকজনকে। এ দিন সন্ধ্যায় ইকো পার্কে পরিদর্শনে যান হিডকো-র চেয়ারম্যান দেবাশিস সেন। তিনি জানান, বড়দিন ও বছর শেষের এই সময়ে ভিড় বেশি হবে ধরে নিয়েই বিশেষ নজরদারি চালানো হচ্ছে। আদালতের নির্দেশ পাওয়ার পরে বিষয়টি নিয়ে বৈঠক করেছেন তাঁরা। সকলে যাতে নিয়ম মেনে চলেন, সে দিকে নজর রাখতে বলা হয়েছে।
ইকো পার্ক ছাড়াও সল্টলেকের বিভিন্ন বিনোদন পার্ক, রেস্তরাঁ ও শপিং মলে এ দিন ভিড় জমিয়েছিলেন মানুষ। তবে অন্যান্য বছরের তুলনায় সর্বত্রই দিনের বেলায় ভিড় কিছুটা কম ছিল।
রাতের দিকে অবশ্য ছবিটা বদলে যায়। সময় যত গড়িয়েছে, ততই বেশি করে বাড়ি থেকে বেরিয়ে পড়েছেন মানুষ। ভিড় জমেছে সল্টলেক, লেক টাউন ও নিউ টাউনের বিভিন্ন জায়গায়। লেক টাউনের সার্ভিস রোডে পুলিশ সতর্কতার প্রচার চালিয়েছে। বিতরণ করা হয়েছে মাস্ক। সিসি ক্যামেরায় চলেছে নজরদারি। যদিও স্থানীয় বাসিন্দাদের একাংশের কথায়, কয়েক হাজার মানুষ সার্ভিস রোডে জড়ো হলে কোনও ভাবেই দূরত্ব বজায় রাখা সম্ভব নয়। এ দিন সন্ধ্যার পরে বিধি ভাঙার সেই ছবিই দেখা যায়। রাত যত মধ্যরাতের দিকে এগিয়েছে, বর্ষবরণের অনুষ্ঠানে মানুষের ভিড়ও ততই গাঢ় হয়েছে।
বিধাননগর পুলিশের দাবি, রাতে মত্ত গাড়িচালক এবং বেপরোয়া বাইক আরোহীদের রুখতে বাড়ানো হয়েছিল টহলদারি। পাশাপাশি, ইভটিজ়িং-এর মতো ঘটনার মোকাবিলায় পথে নামানো হয়েছিল মহিলা পুলিশ বাহিনীকে। রাতে নজরদারি আরও বাড়ানো হয়। পুলিশের এক কর্তা জানান, আদালতের নির্দেশ এবং করোনা-বিধি যাতে ঠিকমতো পালিত হয়, সে দিকে বিশেষ জোর দেওয়া হয়েছিল। সেই সঙ্গে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি যাতে ঠিক থাকে, তারও ব্যবস্থা করা হয়েছিল। কিন্তু তাতেও শেষরক্ষা হল কি? প্রশ্নটা রয়েই গেল।