ফুটপাত মোড়া কংক্রিটে, হাঁসফাঁস অবস্থা সবুজের!

ফুটপাতে কংক্রিট করা বা পেভার ব্লক বসানোর বিষয়টি কতটা যৌক্তিক, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলে দিয়েছে কলকাতা হাইকোর্টের সাম্প্রতিক একটি রায়। প্রশ্ন উঠেছে, ফুটপাতের সৌন্দর্যায়ন করতে গিয়ে কি বিপন্ন হতে বসেছে শহরের প্রাণবায়ু?

Advertisement

দেবাশিস ঘড়াই

কলকাতা শেষ আপডেট: ০৮ অগস্ট ২০১৯ ০১:৪০
Share:

সল্টলেকের ফুটপাতে কেটে ফেলা হচ্ছে হেলে পড়া গাছ। ছবি: স্নেহাশিস ভট্টাচার্য

নির্দিষ্ট সময় অন্তর শহরের ফুটপাতে কংক্রিট বা সৌন্দর্যায়ন করতে পেভার ব্লক বসায় কলকাতা পুরসভা। দরপত্র আহ্বান করে সেই কাজ হয়। শুধুমাত্র গত দু’সপ্তাহের পরিসংখ্যান ধরলে দেখা যাচ্ছে, কম পক্ষে দশ বার এ রকম দরপত্র আহ্বান করেছে পুরসভা।

Advertisement

অথচ ফুটপাতে কংক্রিট করা বা পেভার ব্লক বসানোর বিষয়টি কতটা যৌক্তিক, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলে দিয়েছে কলকাতা হাইকোর্টের সাম্প্রতিক একটি রায়। প্রশ্ন উঠেছে, ফুটপাতের সৌন্দর্যায়ন করতে গিয়ে কি বিপন্ন হতে বসেছে শহরের প্রাণবায়ু? কারণ, পরিবেশবিদদের অনেকেই জানাচ্ছেন, কংক্রিট এবং পেভার ব্লক আসলে আয়ু কমিয়ে দিচ্ছে ফুটপাত ও গাছেদের। শহুরে ফুটপাতের সবুজায়ন নিয়ে কেন্দ্রীয় নগরোন্নয়ন মন্ত্রকের অধীনস্থ ‘টাউন অ্যান্ড কান্ট্রি প্ল্যানিং অর্গানাইজেশন’-এর ‘আর্বান গ্রিনিং গাইডলাইন্স, ২০১৪’ রয়েছে। পরিবেশবিদদের দাবি, সেখানে ফুটপাতে গাছ বসানোর ক্ষেত্রে যে স্পষ্ট নির্দেশিকা রয়েছে, তা-ও মানা হচ্ছে না। ওই নির্দেশিকায় রয়েছে, গাছের গোড়া থেকে বর্গাকারে ১.২৫ মিটার বাই ১.২৫ মিটার খোলা রাখতে হবে, যাতে জল-বাতাস প্রবেশের জায়গা থাকে। সেই সঙ্গে ভবিষ্যতে গাছ বসানোর জন্য ফুটপাতের একাংশে মাটি রাখতে হবে।

প্রসঙ্গত, একটি মামলার প্রেক্ষিতে কলকাতা হাইকোর্ট নির্দেশ দিয়েছে, গাছের গোড়ায় কোনও নির্মাণ থাকলে বা বেদি থাকলে কলকাতা পুরসভাকে তা ভাঙতে হবে। পুরসভা সেই কাজ শুরুও করেছে। তবে শহরের ফুটপাতের সার্বিক চিত্র বলছে, সবুজের ঠাঁই নেই এখানে। পুরসভার এক উদ্ভিদবিদ বলেন, ‘‘আসলে যে সব ঠিকাদারি সংস্থা ফুটপাত মেরামতি বা পেভার ব্লক বসানোর কাজ করে, তারা এ সব নির্দেশিকার বিষয়ে জানেই না। কারণ, পুরসভার তরফে তাদের বলা হয় না। সে কারণেই সারাতে গিয়ে পুরোটাই কংক্রিটে মুড়ে দিয়ে চলে যায় তারা।’’

Advertisement

অথচ বিশেষজ্ঞ ও পরিবেশবিদের একাংশ জানাচ্ছেন, কলকাতার মতো পুরনো শহরে যেখানে গাছ বসানোর জন্য জায়গা খুঁজে পাওয়া দুষ্কর, সেখানে ফুটপাতকেও কাজে লাগাতে হবে। শিবপুরের ‘ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অব ইঞ্জিনিয়ারিং সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি’-র আর্কিটেকচার, টাউন অ্যান্ড রিজিয়োনাল প্ল্যানিং বিভাগের শিক্ষক সৌমেন মিত্র বলেন, ‘‘শহরে গাছ বসানোর ক্ষেত্রে একটি মাস্টার প্ল্যান দরকার। এলাকাভিত্তিক প্রয়োজন নির্ভর গাছ বসাতে হবে।’’ যে স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার দায়ের করা জনস্বার্থ মামলার প্রেক্ষিতে হাইকোর্টের ওই রায়, সেই সংস্থার তরফে পরিবেশকর্মী বনানী কক্কর বলেন, ‘‘ফুটপাতে গাছ বসানোর জায়গা রাখার জন্য পুরসভায় আমরা আবেদন করব।’’

পুর কর্তৃপক্ষের বক্তব্য, পার্ক স্ট্রিট, থিয়েটার রোড-সহ অনেক জায়গায় গাছ বসানোর জন্য ফুটপাতের একাংশ ফাঁকা রাখা হচ্ছে। এক পুর কর্তার কথায়, ‘‘নতুন করে অনেক ফুটপাত করছি আমরা, সে সব জায়গায় গাছ বসানোর ব্যবস্থা রাখা হচ্ছে। পুরনো ফুটপাত যখন সারানোর প্রয়োজন হবে, তখন সেখানেও এই নিয়ম মানা হবে।’’

কিন্তু সে অংশ আর কতটুকু! শহরের ফুটপাতের বেশির ভাগেই তো কংক্রিটের দাপট ও পেভার ব্লকের বিরামহীন সৌন্দর্যায়ন!

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement