ফাইল ছবি
‘রেফার’ রোগ থেকে এখনও মুক্ত হয়নি সরকারি হাসপাতাল। যদিও সেই রোগ সারাতে মাসকয়েক আগেই কড়া পদক্ষেপের কথা ঘোষণা করেছিল স্বাস্থ্য দফতর। কিন্তু সেই ‘রোগ’ যে নিজের জায়গাতেই আছে, ফের তার প্রমাণ মিলল। সোমবার গভীর রাত থেকে চারটি সরকারি হাসপাতালে হন্যে হয়ে ঘুরে মঙ্গলবার ভোরে পঞ্চম হাসপাতালের জরুরি বিভাগের পর্যবেক্ষণ ওয়ার্ডে গিয়ে ঠাঁই পেলেন হৃদ্রোগে আক্রান্ত বৃদ্ধ। ওই চারটি হাসপাতালের দু’টিই আবার মেডিক্যাল কলেজ।
গোসাবার কচুখালির বাসিন্দা রঘুনন্দন মণ্ডল প্রাথমিকের অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক। সোমবার রাতে তিনি হৃদ্রোগে আক্রান্ত হন। তাঁর ছেলে রামমোহন মণ্ডল জানাচ্ছেন, তড়িঘড়ি বৃদ্ধকে ক্যানিং মহকুমা হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। কিন্তু সেখান থেকে রঘুনন্দনবাবুকে শহরের হাসপাতালে রেফার করা হয়। সেখান থেকে রাতেই বৃদ্ধকে নিয়ে পরিজনেরা এমআর বাঙুর হাসপাতালে যান। সেখানেও শয্যা মেলে না। তার পরে ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল ও নীলরতন সরকার মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে গেলেও ভর্তি নেওয়া হয়নি বলে দাবি রামমোহনের। তিনি বলেন, “কোথাও শয্যা না পেয়ে শেষে কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে আসি। সেখানে জরুরি ওয়ার্ডে রাখা হয়েছে। আমাদের দিয়ে ঝুঁকিপত্রেও সই করিয়ে নেওয়া হয়েছে।” সূত্রের খবর, রাত সাড়ে তিনটে নাগাদ কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পৌঁছন ওই রোগী। প্রথমে শয্যা না থাকার কথা বলা হলেও পরিজনদের অনুরোধে জরুরি বিভাগের চিকিৎসকেরা সেখানকার পর্যবেক্ষণ ওয়ার্ডে ব্যবস্থা করেন।
মাসকয়েক আগে স্বাস্থ্য দফতর নির্দেশিকা জারি করে জানিয়েছিল, কোনও রোগীকে রেফার করা হলে তিনি অন্যত্র শয্যা না-পাওয়া পর্যন্ত আগের হাসপাতালের সুপারকে রোগীকে ভর্তির দায়িত্ব নিতে হবে। শয্যা না থাকলেও রোগীকে স্থিতিশীল করে তবেই অন্যত্র রেফার করতে হবে। সেখানে ভর্তিও সুনিশ্চিত করতে হবে। কিন্তু এই ঘটনায় এটা স্পষ্ট যে, রঘুনন্দনবাবুকে এক হাসপাতাল থেকে আর একটিতে রেফার করা হলেও, কোনও কর্তৃপক্ষই রোগীকে পরের হাসপাতালে ভর্তির দায়িত্ব নেননি।
দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক মুক্তিসাধন মাইতি বলেন, “ক্যানিং মহকুমা হাসপাতালের সিসিইউ-তে ১২টি শয্যা রয়েছে। প্রতিটিতে রোগী রয়েছেন। সেখানে হৃদ্রোগের কোনও চিকিৎসকও নেই। তাই ভর্তি করা যায়নি বলেই প্রাথমিক ভাবে জানতে পেরেছি।” ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের অধ্যক্ষ অজয় রায়ের কথায়, “কেন ওই রোগীকে রেফার করা হয়েছিল, তা দেখা হবে।” বাকি দুই হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ অবশ্য বিষয়টি নিয়ে মুখে কুলুপ এঁটেছেন।
তবে স্বাস্থ্য দফতরের এক শীর্ষ কর্তার কথায়, “রেফার বন্ধ করতে বিভিন্ন নির্দেশিকা দেওয়া রয়েছে। একান্ত রেফার করতে হলেও, তার পদ্ধতি বলা রয়েছে। তার পরেও কেন এমনটা হয়েছে, সেটা অবশ্যই দেখা হবে।’’ ওই বৃদ্ধের পরিজনেরা বলছেন, “কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে তা-ও একটা ব্যবস্থা হল। কিন্তু সেখানেও না পেলে কোথায় যেতাম? এমন ভোগান্তি হবে ভাবিনি।”