বিপন্মুক্ত: যমুনা দাস
সংসারের হাল ধরতে তাঁর ভরসা সেলাই মেশিন। কিন্তু পিঠ, কোমরের যন্ত্রণায় বসে কাজ করা প্রায় বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়েছিল। ক্রমশ সেই যন্ত্রণা এমন পর্যায়ে পৌঁছেছিল যে, ঠিক মতো হাঁটাচলা করতেও পারতেন না ৪২ বছরের বধূ। হাসপাতালে আসতেই দেখা গেল, তাঁর মেরুদণ্ডের ডিস্কে সমস্যা রয়েছে। কোনও কাটাছেঁড়া না করে, স্রেফ রেডিয়ো ফ্রিকোয়েন্সি তরঙ্গের মাধ্যমে সমস্যা দূর করে ওই রোগীকে স্বাভাবিক জীবনে ফেরাল এসএসকেএম হাসপাতাল।
চিকিৎসকদের দাবি, রাজ্য তথা দেশে এই প্রথম কোনও সরকারি হাসপাতালে বিনামূল্যে এমন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে রোগীকে সুস্থ করা হল। সম্প্রতি স্বাস্থ্য দফতরের তরফে নতুন রেডিয়ো ফ্রিকোয়েন্সি অ্যাবলেশন (আরএফএ) যন্ত্র পেয়েছে এসএসকেএম হাসপাতাল। ওই যন্ত্র রোগীদের বিভিন্ন যন্ত্রণা উপশমের কাজে ব্যবহারও করা শুরু হয়েছে। ওই রোগী, লিলুয়ার ভট্টনগরের বাসিন্দা যমুনা দাস বলেন, ‘‘আবার হাঁটতে, বসতে পারব, তা ভাবতেই পারিনি। এখন আবার নিজে থেকেই সব করছি। কোনও সমস্যা হচ্ছে না।’’ বুধবার তাঁকে হাসপাতাল থেকে ছুটি দেওয়া হয়েছে। বাড়ির কাছেই একটি কারখানায় কাপড় সেলাইয়ের কাজ করেন যমুনা। গত চার বছর ধরে পিঠ ও কোমরের যন্ত্রণায় ভুগছিলেন। তিনি জানান, স্থানীয় চিকিৎসকের কাছে গিয়ে দেখানোর পরে ওষুধ চালু করলেও কোনও উপকার হয়নি। বরং ক্রমশ যন্ত্রণা বাড়তে থাকে। একটা সময়ে এমন অবস্থা হয় যে কয়েক পা হাঁটলেই তীব্র যন্ত্রণায় বসে পড়তে হচ্ছিল যমুনাকে।
দিন কয়েক আগে তিনি আসেন পিজি-র ফিজ়িক্যাল মেডিসিন অ্যান্ড রিহ্যাবিলিটেশন (পিএমআর) বিভাগে। সেখানে চিকিৎসকেরা কিছু পরীক্ষা করে দেখেন, যমুনার মেরুদণ্ডের চার ও পাঁচ নম্বর ‘লাম্বার কশেরুকা’-র মাঝে যে ডিস্ক (জেলির মত অংশ) রয়েছে, সেখানেই আসল সমস্যাটি তৈরি হয়েছে। সেখানকার স্নায়ু ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে যন্ত্রণার বার্তা পৌঁছচ্ছে মস্তিষ্কে। চিকিৎসার পরিভাষায় সেটিকে বলা হল, ‘ডিস্কোজেনিক পেন’। পিএমআর-এর বিভাগীয় প্রধান চিকিৎসক রাজেশ প্রামাণিক বলেন, ‘‘সাধারণত অস্ত্রোপচার করে ওই ডিস্কের সমস্যার অংশটি কেটে বাদ দেওয়া হয়। সে ক্ষেত্রে পরবর্তী সময়ে সমস্যার আশঙ্কা থেকে যায়। কিন্তু আমরা সিদ্ধান্ত নিই, কোনও কাটাছেঁড়া না করেই ডিস্কের সমস্যাটি দূর করা হবে।’’
সেই মতো যমুনার ‘বাইঅ্যাকুপ্লাস্টি’ করার সিদ্ধান্ত নেন চিকিৎসকেরা। অর্থাৎ ‘সি-আর্ম’ যন্ত্রের দ্বারা নজর রেখে রেডিয়ো ফ্রিকোয়েন্সি অ্যাবলেশন (আরএফএ) যন্ত্রের মাধ্যমে ‘প্রোব’ প্রবেশ করানো হয় ওই ডিস্কের মধ্যে। এর পরে তাপের মাধ্যমে ডিস্কের যে অংশে সমস্যা হচ্ছে, সেই জায়গাটি শুকিয়ে দেওয়া হয়। চিকিৎসকেরা জানাচ্ছেন, তাপের মাধ্যমে ডিস্কের ভিতরের স্নায়ুগুলিকে পুড়িয়ে দেওয়ার সময়ে সতর্ক থাকতে হয়, যাতে বাইরের স্নায়ুগুলি কোনও ভাবেই ক্ষতিগ্রস্ত না হয়। তা হলে রোগী পক্ষাঘাতে আক্রান্ত হতে পারেন। দিল্লিতে এক বেসরকারি হাসপাতালে ‘বাইঅ্যাকুপ্লাস্টি’ প্রক্রিয়া হয়। খরচ হয় প্রায় তিন লক্ষ টাকা। রাজেশ বলেন, ‘‘এখনও পর্যন্ত দেশের কোনও সরকারি হাসপাতালে এই প্রক্রিয়া করা হয়নি। এ রাজ্যে সরকারি স্তরে বিনামূল্যে যে চিকিৎসা ব্যবস্থা রয়েছে, তাতে এই পরিষেবা পিজিতে প্রথম দেওয়া হল। আগামী দিনে আরও রোগীর ক্ষেত্রে এটি কাজে লাগবে।’’