Pathan Utsav

দীর্ঘ গরমের ছুটিতে কি পিছিয়ে গেল পড়ুয়ারা? সরকারি স্কুলগুলিতে শুরু হয়েছে ‘পঠন উৎসব’

গ্রীষ্মকালীন দীর্ঘ ছুটির পরে পড়ুয়াদের লেখাপড়ার কী অবস্থা, তা খতিয়ে দেখতে সরকারি, সরকারি সাহায্যপ্রাপ্ত ও সরকার-পোষিত প্রাথমিক স্কুলগুলিতে শুরু হয়েছে ‘পঠন উৎসব’।

Advertisement

আর্যভট্ট খান

কলকাতা শেষ আপডেট: ২৬ জুন ২০২৩ ০৫:৪৫
Share:

প্রতিনিধিত্বমূলক ছবি।

সরল বাক্য পড়তে গিয়েও কি অসুবিধা হচ্ছে প্রথম শ্রেণির পড়ুয়াদের? কোনও একটি শব্দ বলে দিলে তা দিয়ে কি বাক্য গঠন করতে পারছে তারা? অথবা, অচেনা কোনও লেখা থেকে পড়তে দিলে কত বার হোঁচট খাচ্ছে ওই পড়ুয়ারা?

Advertisement

গ্রীষ্মকালীন দীর্ঘ ছুটির পরে পড়ুয়াদের লেখাপড়ার কী অবস্থা, তা খতিয়ে দেখতে সরকারি, সরকারি সাহায্যপ্রাপ্ত ও সরকার-পোষিত প্রাথমিক স্কুলগুলিতে শুরু হয়েছে ‘পঠন উৎসব’। প্রাথমিকের শিক্ষকেরা জানান, দেড় মাসের ছুটিতে পড়ুয়াদের কেউ কেউ লেখাপড়ায় কিছুটা পিছিয়ে গিয়েছে। স্কুলে শেখা কোনও কোনও বিষয় ভুলে গিয়েছে তারা। কোনও একটি শব্দ দিয়ে যৌগিক বাক্য গঠন করতে বললে কেউ কেউ তা পারছে, কেউ কেউ পারছে না। আবার অচেনা কবিতা বা গল্প পাঠ করতে দিলেও আটকে যাচ্ছে অনেকে। স্কুলগুলির সূত্রে জানা গেল, পড়ুয়াদের সামনে ল্যাপটপ খুলে দিয়ে তা থেকে সংবাদ পাঠের আয়োজনও করা হয়েছিল, যাতে তারা বিষয়টিতে উৎসাহ পায়।

কোভিডের সময়ে দু’বছরের উপরে স্কুল বন্ধ থাকায় সব থেকে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল প্রাথমিকের পড়ুয়ারা। এমনটাই মনে করছেন শিক্ষকদের বড় অংশ। সেই সঙ্কটকাল কাটিয়ে স্কুল হচ্ছে গত এক বছর ধরে। করোনার সময়ে শিক্ষণের ক্ষেত্রে যে ফাঁক তৈরি হয়েছিল পড়ুয়াদের মধ্যে, তা কতটা ভরাট হল, তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। বেশ কিছু সমীক্ষার রিপোর্ট থেকে জানা যাচ্ছে, দ্বিতীয় শ্রেণির পড়ুয়ারা প্রথম শ্রেণির বাংলা পাঠ্যবই পড়তে গিয়েও আটকে যাচ্ছে। আবার চতুর্থ শ্রেণির পড়ুয়ারা দ্বিতীয় শ্রেণির বই পড়তে পারছে না, এমনও দেখা গিয়েছে। শিক্ষকদের মতে, করোনা পরিস্থিতিতে লেখাপড়ায় যে ফাঁক তৈরি হয়েছিল, তার কতটা ভরাট হয়েছে, সেটা জানা দরকার। সেই সঙ্গে গরমের ছুটিতে তারা আরও কতটা পিছিয়ে গেল, তা-ও বুঝে নেওয়া জরুরি। ‘পঠন উৎসব’-এর আয়োজন সেই উদ্দেশ্যেই।

Advertisement

বেহালার ‘ভোলানাথ হালদার স্মৃতি গভর্নমেন্ট স্পনসর্ড ফ্রি প্রাইমারি স্কুল’-এর প্রধান শিক্ষিকা বর্ণালী সেনগুপ্ত জানালেন, পঠন উৎসবে স্কুলের পড়ুয়াদের ‘বর্ণ কার্ড’ দেওয়া হচ্ছে। সেই কার্ডে লেখা থাকছে কোনও একটি শব্দ। যা দিয়ে বাক্য গঠন করতে বলা হচ্ছে। বর্ণালী ব‌ললেন, ‘‘প্রথম শ্রেণিকে সরল বাক্য এবং পঞ্চম শ্রেণিকে যৌগিক বাক্য গঠন করতে বলা হয়েছে। অনেকে পেরেছে। তবে লম্বা ছুটিতে কারও কারও মান কিছুটা নিম্নমুখী। আগামী দু’মাসের মধ্যে ওই পড়ুয়াদের এই খামতি পূরণ করে দিতে হবে।’’

কুঁদঘাট এলাকার ‘সুখরঞ্জন বিদ্যামন্দির (রিকগনাইজ়ড) ফ্রি প্রাইমারি স্কুল’-এর প্রধান শিক্ষক সমীর মণ্ডল বললেন, ‘‘পড়ুয়াদের পড়াশোনার কী হাল, তা নিয়মিতই আমাদের স্কুলে খতিয়ে দেখা হয়। তবে প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদ আলাদা করে পঠন উৎসব করছে। এই উৎসবে নানা রকম বর্ণ কার্ড, চার্ট, মডেলের মাধ্যমে পড়ুয়াদের পরীক্ষা নেওয়া হচ্ছে। এতে পড়ুয়ারা উৎসাহও পাচ্ছে খুব।’’ সরশুনার ‘চিলড্রেন’স ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশন জুনিয়র বেসিক স্কুল’-এর প্রধান শিক্ষিকা মিঠু চৌধুরী দে বললেন, ‘‘এই পঠন উৎসবে আমাদের স্কুলে দেখা গেল, অনেক পড়ুয়াই ভাল ফল করেছে। কিন্তু কিছু পড়ুয়ার মধ্যে শেখায় ফাঁক রয়েছে। সেটা মেটাতে হবে।’’

শিক্ষা দফতরের এক কর্তা বললেন, ‘‘একটি বেসরকারি সংস্থার উদ্যোগে বাসের মধ্যে তৈরি চলমান শিক্ষাকেন্দ্র পাড়ায় পাড়ায় ঘুরছে। সেই বাসে বসে পড়ুয়ারা পাঠ্য বইয়ের পাশাপাশি অন্যান্য বইও পড়তে পারছে। এ ছাড়া, শিক্ষকেরাও খোঁজ নিচ্ছেন, দীর্ঘ ছুটিতে পড়ুয়ারা কেমন পড়াশোনা করছে। এই পঠন উৎসবের ফলাফল বিশ্লেষণ করে শিক্ষকদের উপযুক্ত ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement