—প্রতীকী চিত্র।
সাইবার জালিয়াতি রুখতে এবং সাইবার অপরাধ সম্পর্কে সচেতন হয়ে কর্মী-আধিকারিকেরা যাতে তাঁদের পাসওয়ার্ড সুরক্ষিত রাখেন, সে দিকে বিশেষ জোর দিচ্ছে কলকাতা পুরসভা। ইতিমধ্যেই এই সংক্রান্ত নির্দেশ সব দফতরে পৌঁছে গিয়েছে।
২০১০ সালের অক্টোবরে প্রথম বার পাসওয়ার্ড-নীতি গৃহীত হয়েছিল পুরসভায়। তার পরে অনলাইনে সরকারি কাজের পরিসর বৃদ্ধি পেলেও গৃহীত নীতি পালনে বড় ফাঁক তৈরি হয়েছে বলে পুর প্রশাসন সূত্রের খবর। মূলত কর্মী-আধিকারিকদের একাংশের পাসওয়ার্ড-নীতি পালনে গা-ছাড়া মনোভাবের কারণেই এই ফাঁক দেখা দিয়েছে। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে ক্রমবর্ধমান সাইবার জালিয়াতির পরিপ্রেক্ষিতে কর্মী-আধিকারিকদের ফের পাসওয়ার্ড-নীতি মেনে চলতে সতর্ক করলেন পুর কর্তৃপক্ষ।
পুর প্রশাসনের এক কর্তার কথায়, ‘‘গুরুত্বপূর্ণ কাজ প্রায় সবই এখন অনলাইনে হচ্ছে। পুরসভা নির্দিষ্ট সময় অন্তর একাধিক অ্যাপ আনছে। যেমন, কর্মীদের নিজস্ব কাজের রেকর্ড রাখার জন্য ‘কেএমসি এমপ্লয়ি’ অ্যাপ আনা হয়েছে। তাই সব দিক থেকেই পাসওয়ার্ডের সুরক্ষা মেনে চলার বিষয়টি ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ।’’
‘ন্যাশনাল ক্রাইম রেকর্ডস বুরো’র পরিসংখ্যান বলছে, ২০১৭ সালে পশ্চিমবঙ্গে পুলিশে দায়ের হওয়া সাইবার অপরাধের সংখ্যা ছিল ৫৬৮। ২০২০ সালে তা বেড়ে হয় ৭১২। আবার, সারা দেশে ২০১৭ সালে নথিভুক্ত সাইবার অপরাধের সংখ্যা ছিল ২১,৭৯৬। ২০২১ সালে তা বেড়ে হয়েছে ৫২,৯২৪। যার পরিপ্রেক্ষিতে কেন্দ্র থেকে রাজ্য, সাইবার অপরাধ থেকে বাঁচতে সাধারণ নাগরিকদের পাশাপাশি সরকারি দফতরকেও সতর্ক করা হচ্ছে।
পুরসভা সূত্রের খবর, তাদের নিজস্ব পাসওয়ার্ড-নীতি তৈরির কথাবার্তা প্রথম শুরু হয় ২০০৫-’০৬ সালে। এ ব্যাপারে পুর কর্তৃপক্ষ ২০০৫ সালের অগস্টে প্রস্তাব গ্রহণ করেছিলেন। দীর্ঘ টালবাহানার পরে সেই প্রস্তাব চূড়ান্ত রূপ পায় ২০১০-এর অক্টোবরে। ওই পাসওয়ার্ড-নীতিতে বলা হয়েছিল, প্রত্যেক কর্মীর নিজস্ব অ্যাকাউন্টের পাসওয়ার্ড ঠিক মতো নির্বাচন করা না হলে পুরসভার অনলাইন ব্যবস্থার সুরক্ষা বিপন্ন হতে পারে। তাই সুরক্ষিত পাসওয়ার্ডের পাশাপাশি এক জন কর্মী-আধিকারিকের পাসওয়ার্ড যাতে অন্য কেউ ব্যবহার না করেন, সে ব্যাপারেও স্পষ্ট নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। বলা হয়েছিল, নিজের পাসওয়ার্ড অন্য কাউকে দেওয়ার কারণে পুরসভার অনলাইন সুরক্ষা বিপন্ন হলে বা পুরসভার অনলাইন ব্যবস্থাকে সাইবার জালিয়াতেরা ‘হ্যাক’ করতে সক্ষম হলে সংশ্লিষ্ট কর্মী-আধিকারিককেই সেই ঘটনার জন্য দায়ী করা হবে।
কিন্তু পুর প্রশাসন সূত্রে জানা যাচ্ছে, সেই কড়া বার্তার পরেও পাসওয়ার্ড ‘শেয়ার’ করার প্রবণতা বন্ধ হয়নি। অনেকেই পুর অ্যাকাউন্টের নিজস্ব পাসওয়ার্ড সহকর্মীর সঙ্গে ভাগ করে নেন। পুর প্রশাসনের এক কর্তা জানাচ্ছেন, এই প্রবণতার কারণে কোনও রকম অবাঞ্ছিত ঘটনা ঘটলে যে আধিকারিক পাসওয়ার্ড শেয়ার করেছেন, তাঁকে দায়ী করা হবে। ওই কর্তার কথায়, ‘‘পাসওয়ার্ড নিয়ে গা-ছাড়া মনোভাব বরদাস্ত করা হবে না। কারণ, এর সঙ্গে পুরসভার অনলাইন ব্যবস্থার সুরক্ষার দিকটি জড়িত।’’