ফাইল চিত্র।
এই সে দিনও মেট্রো ছিল সব থেকে ঝঞ্ঝাটহীন যান। সময় মেনে গাড়ি আসত। উঠলেই সাঁ করে পৌঁছে যাওয়া যেত গন্তব্যে। কলকাতাবাসীর গর্ব ছিল মেট্রো।
সেই মেট্রোই এখন যাত্রীদের কাছে কার্যত আতঙ্ক। নিত্যযাত্রীদের অভিযোগ, এখন বনগাঁ লোকালকেও হার মানায় কলকাতার গর্বের যান। মেট্রো কর্তৃপক্ষ প্রযুক্তিগত সমস্যার কথা বললেও, যাত্রীরা কিন্তু মেট্রোর কর্ম সংস্কৃতিকেই দুষছেন। তাঁদের ক্ষোভ, সারা দিনে কত বার মেট্রো ঘড়ির কাঁটা মেনে চলে তা নিয়ে সমীক্ষা করার প্রয়োজন।
ট্রেন সময় মতো না চলার নানা কারণ রয়েছে। তার মধ্যে কয়েকটি ‘ফাঁকি’ যাত্রীদের চোখে ধরা পড়ে যাচ্ছে সহজেই। একটি ট্রেন পর পর চারটি স্টেশনে এক থেকে দেড় মিনিট বেশি দাঁড়িয়ে গেলেই পরের ট্রেনটি বসিয়ে রাখা যায়। এই ‘চালাকিটা’ যাত্রীরা এখন বুঝে গিয়েছেন। অনেক ক্ষেত্রে প্রারম্ভিক স্টেশন থেকেই ট্রেন ছাড়ে মিনিট দুই দেরিতে। তার পরে কোথাও ৩০ সেকেন্ড, কোথাও এক মিনিট সময় ‘খেয়ে নিলেই’ বাঁচানো যায় একটি ট্রেন। আর কেন কোনও স্টেশনে একটি ট্রেন নির্দিষ্ট সময়ের বেশি দাঁড়িয়ে থাকছে সে জন্য কোনও ঘোষণাও হয় না। ট্রেন যে দেরিতে আসছে তা-ও জানানো হয় না যাত্রীদের। অভিযোগ, অনেক ক্ষেত্রে প্ল্যাটফর্মের ঘড়িও ওই সময় বন্ধ করে দেওয়া হয়।
অভিযোগ, সঙ্গে ভোগাচ্ছে মেট্রো স্টেশনের চলমান সিঁড়িগুলিও। আড়াই মাস ধরে দমদমের মতো গুরুত্বপূর্ণ স্টেশনের বেলগাছিয়ার দিকের চলমান সিঁড়িটি অকেজো হয়ে পড়ে রয়েছে। ফলে মাঝের চলমান সিঁড়িটির উপরে চাপ বেড়েছে। আর ওই সিঁড়ির সামনে লাগানো তিনটি স্মার্ট গেটও ধুঁকতে শুরু করেছে। অভিযোগ, গেটগুলি মাঝে মধ্যেই আটকে যাচ্ছে। দমদম রোড থেকে মেট্রো স্টেশনে ঢোকার প্রবেশপথটি দখল হতে হতে যাত্রীদের জন্য পড়ে রয়েছে দু’ফুটেরও কম জায়গা। সেখান দিয়েই কার্যত ধাক্কাধাক্কি করে চলছে নিত্যদিন যাতায়াত।
শুধু দমদম নয়, পার্ক স্ট্রিট ছাড়া অনেক স্টেশনেই মেট্রো পরিষেবার চিত্র অনেকটাই এক। স্মার্ট গেট থেকে শুরু করে লাগেজ স্ক্যানার নিত্য দিনই খারাপ হয়ে পড়ে রয়েছে। চাঁদনি চক স্টেশনের একটি চলমান সিঁড়ি মাঝে মধ্যেই বন্ধ হয়ে থাকছে। পুজোর সময়ে যে কী হবে তা নিয়ে এখনই আতঙ্কে যাত্রীরা।
দীর্ঘ দিনের পুরনো হয়ে যাওয়া রেকগুলি বাতিল না হওয়ায় দরজা বন্ধ হচ্ছে না একবারে। তাতে অযথা সময় নষ্ট হচ্ছে। মেট্রোর ১৪টি পুরনো সাধারণ রেক এখনও এসি করা যায়নি। ফলে গরমে ঘেমে নেয়ে যাত্রা-যন্ত্রণাও বন্ধ হয়নি। রেলমন্ত্রী পীযূষ গয়াল এ নিয়ে বিস্ময় প্রকাশ করেন।
মেট্রো-কর্তৃপক্ষ তাঁদের পুজোর সময়ের পরিষেবা দেওয়া নিয়ে আশাবাদী। এক কর্তার কথায়, ‘‘পুজোয় অতিরিক্ত ট্রেন চালাচ্ছি। যে সব যান্ত্রিক ত্রুটি ছিল সেগুলি ঠিক করে ফেলার কাজ চলছে।’’ সূত্রের খবর, পুজোর বাজার করতেই মেট্রোর যাত্রী সংখ্যা সাড়ে পাঁচ লক্ষেরও বেশি ছাড়িয়ে গিয়েছে। পুজোয় ভিড় আরও বাড়বে। তখন কী ভাবে সামাল দেবে মেট্রো সেটাই এখন দেখার।