বৃহস্পতিবার হাসপাতাল থেকে মাদার হাউসের পথে। ছবি: শুভাশিস ভট্টাচার্য।
সাড়ে তিন মাস আগে যখন এসেছিলেন, তখন তাঁর বিবর্ণ চেহারা। গায়ে দুর্গন্ধ, চর্মরোগ, মলিন পোশাক, উস্কোখুস্কো চুল। বৃহস্পতিবার যখন ছুটি পেলেন, তখন অন্য মানুষ। ধোপদুরস্ত চেহারা— পরনে টি-শার্ট, ফুলপ্যান্ট, পায়ে চপ্পল, কামানো গাল, পাট পাট করে আঁচড়ানো চুল। নিজেই খুললেন গাড়ির দরজা। উঠে বসে তুলে দিলেন জানলার কাচ। পাভলভ থেকে মাদার হাউসে অভিমুখে রওনা হলেন রবিনসন স্ট্রিট কঙ্কাল-কাণ্ডের মূল চরিত্র পার্থ দে। চিকিৎসকদের মতে, এখন তিনি পুরো সুস্থ।
এ দিন বেলা সাড়ে ১১টা নাগাদ মাদার হাউসের দুই প্রতিনিধি হাসপাতাল সুপার গণেশ প্রধানের সঙ্গে দেখা করেন। সাইকোমেট্রি বিভাগে তখন মুক্তির অপেক্ষায় পার্থ। হাসপাতাল সূত্রে খবর, ওই প্রতিনিধিদের দেখেই উজ্জ্বল হয়ে ওঠে পার্থর চোখ-মুখ। কিন্তু কান্না চেপে রাখতে পারেননি নার্সরা। এত দিন তাঁরাই আগলে রেখেছিলেন পার্থকে। আবেগপ্রবণ হয়ে যান পার্থও। নার্সদের দিয়ে যান নিজের আঁকা ছবি। হাসপাতালে বসে পার্থ জানান, সম্পত্তির অর্ধেক তিনি দান করবেন মাদার হাউসে। হাসপাতালের নার্স ও মাদার হাউসের সিস্টারদের কাছে আগেই জানিয়েছিলেন, বড় দরকার এক জন সঙ্গীর। বাবা আর দিদির স্মৃতিবিজড়িত রবিনসন স্ট্রিটের বাড়িতে আর ফিরতে চান না। তাঁর কথায়, ‘‘ওই বাড়িটার কথা মনে পড়লেই ভয় করে। মনে হয় বাড়িটা যেন আমাকে গিলে খাবে।’’
১০ জুন রাতে রবিনসন স্ট্রিটের বাড়ি থেকে পার্থর বাবা অরবিন্দ দে-র দগ্ধ দেহ মেলে। পরদিন পুলিশকে দিদি দেবযানীর কঙ্কালের হদিস দেন পার্থ। দীর্ঘ অনাহারে দিদির মৃত্যুর পরে ছ’মাস দেহ আগলে ছিলেন তিনি। পুলিশ জানায়, আদালতের নির্দেশে পার্থকে মানসিক হাসপাতালে পাঠানো হয়।
এ দিন মাদার হাউসের প্রতিনিধিরা যখন পার্থকে নিয়ে বেরোন, ছিলেন শেক্সপিয়র সরণি থানার কনস্টেবল মহীতোষ মুখোপাধ্যায়ও। গাড়ি ছুটল মাদার হাউসের দিকে। সেখানকার প্রতিনিধিরা পার্থর স্থায়ী ঠিকানা-সহ কোনও তথ্যই জানাতে চাননি।