Sentenced To Death

Sentenced to Death: ধড়-মাথা আলাদা করে খুন মা-বাবাকে, মৃত্যুদণ্ড ছেলের

মৃতদেহ লোপাটের চেষ্টার অপরাধে ওই যুবককে সাত বছরের সশ্রম কারাদণ্ডও দিয়েছেন তিনি। সেই সঙ্গে ২৫ হাজার টাকা জরিমানা।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ০২ অগস্ট ২০২২ ০৬:০৬
Share:

প্রতীকী ছবি

মা-বাবাকে নৃশংস ভাবে খুনের ঘটনায় দোষী সাব্যস্ত হওয়া ছেলেকে মৃত্যুদণ্ডের নির্দেশ দিলেন আলিপুর আদালতের অতিরিক্ত দায়রা বিচারক চিরঞ্জীব ভট্টাচার্য। এর পাশাপাশি, মৃতদেহ লোপাটের চেষ্টার অপরাধে ওই যুবককে সাত বছরের সশ্রম কারাদণ্ডও দিয়েছেন তিনি। সেই সঙ্গে ২৫ হাজার টাকা জরিমানা। সোমবার বিচারক এই রায় দেন।

Advertisement

আদালত সূত্রের খবর, ঘটনাটি ঘটেছিল ২০১৭ সালের ১৫ জুলাই। ঠাকুরপুকুর থানার তালপুকুর রোডের বাসিন্দা, মা ঊষারানি সরকার (৫৬) ও বাবা পরেশনাথ সরকারকে (৬৫) খুন করে তাঁদেরই ছোট ছেলে শোভন সরকার (৩৫)।

সে দিন সন্ধ্যায় ঊষারানি দোতলার ঘরে পুজো করছিলেন। সেখানেই তাঁর উপরে প্রথমে হামলা চালায় শোভন। ধারালো অস্ত্রের কোপে মায়ের ধড় ও মাথা আলাদা করে দেয় সে। এর পরে একতলার ঘরে আসে শোভন। সেখানে টিভি দেখছিলেন পরেশনাথ।‌ একই কায়দায় ধারালো অস্ত্রের কোপে তাঁরও ধড়-মাথা আলাদা করে দেয় সে। বাবাকে খুন করার পরে দোতলা থেকে মায়ের ধড় ও মাথা একতলার ঘরে নিয়ে আসে শোভন। মৃতদেহ দু’টিকে তোশক ও বিছানার চাদর দিয়ে মুড়ে দড়ি দিয়ে বেঁধে ফেলে। তার পরে সেই ঘরে পাখা চালিয়ে পাশের ঘরে গিয়ে নিশ্চিন্তে ঘুমোয় শোভন। ভোরে উঠে কয়েক জন মজুরকে ডেকে এনে পাঁচিল ঘেরা ওই বাড়ির ভিতরে গর্ত খুঁড়তে বলে সে।

Advertisement

আদালত সূত্রে জানা গিয়েছে, শোভনের খুড়তুতো ভাই সুব্রত সরকার পেশায় অটোচালক। তিনি ওই বাড়িতেই তাঁর অটোটি রাখতেন। পরদিন সকালে সেখানে এসে তিনি দেখেন, কয়েক জন মজুর বাড়ির পিছনের জমিতে গর্ত খোঁড়ার কাজ করছেন। জেঠু ও জেঠিমাকে ডাকাডাকি করেন সুব্রত। কিন্তু বাড়ির সদর দরজা বন্ধ ছিল। কারও কোনও সাড়াশব্দ না-পেয়ে সুব্রত বেরিয়ে আসেন। এর পরে ওই বাড়ি থেকে কিছুটা দূরে, শোভনের বিবাহিত ছোট বোন ও তাঁর স্বামীর বাড়িতে গিয়ে তাঁদের বিষয়টি জানান তিনি। খবর দেওয়া হয় ঠাকুরপুকুর থানায়। তদন্তকারী অফিসার প্রসেনজিৎ নস্কর প্রথমে ওই মজুরদের কাছে গর্ত খোঁড়ার বিষয়ে খোঁজখবর করেন। তাঁরা জানান, বাড়ির মালিকই তাঁদের গর্ত খোঁড়ার নির্দেশ দিয়েছেন। পুলিশ এর পরে বাড়ির দরজা ভেঙে ভিতরে ঢোকে। উদ্ধার হয় ঊষারানি ও পরেশনাথের মৃতদেহ।

দেহ উদ্ধারের সময়ে বাড়িতে ছিল না শোভন। পরে তাকে এলাকা থেকে আটক করা হয়। জেরার মুখে খুনের কথা কবুল করে সে। সে দিনই বিকেলে শোভনকে ওই বাড়িতে নিয়ে আসে পুলিশ। একটি কাটারি ও রক্তমাখা কালো টি-শার্ট উদ্ধার হয় সেখান থেকে। এই ঘটনার ৯০ দিনের মধ্যেই খুন ও মৃতদেহ লোপাটের চেষ্টার ধারায় শোভনকে অভিযুক্ত করে আদালতে চার্জশিট পেশ করে পুলিশ।

তদন্তকারী অফিসার জানিয়েছেন, শোভনের দাদা কর্মসূত্রে দিল্লিতে থাকেন। বিবাহিত ছোট বোন থাকেন ঠাকুরপুকুর থানা এলাকায়। শোভন কোনও কাজকর্ম করত না। সমাজবিরোধীদের সঙ্গে মেলামেশা ছিল তার। যা নিয়ে বাবা-মায়ের সঙ্গে প্রায়ই বচসা হত ওই যুবকের। খুনের ঘটনার কয়েক দিন আগে শোভন জানতে পারে, বাবা-মা তাঁদের সব সম্পত্তি বোন ও দাদার নামে লিখে দিতে চলেছেন। সেই আক্রোশের বশেই তাঁদের সে খুন করে বলে পুলিশকে জানায় শোভন। সরকারি আইনজীবী আকবর আলি মোল্লা বলেন, ‘‘এই মামলায় ১৬ জনের সাক্ষ্য গ্রহণ করা হয়েছে। অভিযুক্তকে হেফাজতে রেখেই বিচার প্রক্রিয়া চালানো হয়েছে।’’

এ দিন মৃত্যুদণ্ড ঘোষণার আগে বিচারপতি শোভনের প্রতিক্রিয়া জানতে চান। কিন্তু শোভন ছিল নিরুত্তাপ। নিজের অপরাধ স্বীকার করলেও ক্ষমা চায়নি সে। পরে বিচারক বলেন, ‘‘নিজের মা-বাবাকে এমন নৃশংস ভাবে খুনের শাস্তি মৃত্যুদণ্ড ছাড়া অন্য কিছু হতে পারে না। বিভিন্ন জনের মতামত শোনার পরেই এই সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছি।’’ উচ্চ আদালতে আবেদনের জন্য এক মাস সময় পাবে শোভন।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement