প্রতীকী ছবি।
করোনাকালে কেউ হারিয়েছে নিজের মাকে, কেউ বা পরিবারের একমাত্র উপার্জনশীল বাবাকে। সহায়-সম্বলহীন ওই সমস্ত পড়ুয়ার পাশে দাঁড়ালেন মধ্যমগ্রামের একটি স্কুলের শিক্ষকেরা। প্রধান শিক্ষক আশুতোষ ঘোষ জানিয়েছেন, তাঁদের স্কুলের আট জন পড়ুয়ার মা অথবা বাবা এ বছর করোনায় মারা গিয়েছেন। ওই পড়ুয়াদের পড়াশোনার যাবতীয় দায়ভার নিয়েছে স্কুল।
এ বছর করোনায় মাকে হারিয়েছে মধ্যমগ্রাম হাইস্কুলের দশম শ্রেণির ছাত্র শুভঙ্কর বসু। সম্প্রতি স্কুল থেকে খাদ্যসামগ্রী নিতে এসেছিলেন শুভঙ্করের বাবা দীপঙ্করবাবু। তিনি পেশায় গাড়িচালক। বললেন, “আমার স্ত্রী শুক্লা গত ৩০ জুন করোনায় মারা যায়। অনেক চেষ্টা করেও বাঁচাতে পারিনি। ছেলেকে শুক্লাই পড়াত। ও চলে যাওয়ার পরে চোখে অন্ধকার দেখছিলাম। মনে হচ্ছিল, ছেলের পড়াশোনা হয়তো আর হবেই না। কিন্তু স্কুল আমাদের পাশে এসে দাঁড়িয়েছে। ওর পড়াশোনার সব দায়িত্ব ওরাই নিচ্ছে। এখন অনেকটা স্বস্তি পাচ্ছি।” আশুতোষবাবু বললেন, ‘‘করোনায় এক পড়ুয়ার বাবা মারা গিয়েছেন। তিনিই ছিলেন সংসারের একমাত্র রোজগেরে। ওই ছাত্রের পড়ানোর খরচের পাশাপাশি যত দিন সম্ভব ওকে খাদ্যসামগ্রীও সরবরাহ করব আমরা।’’
স্কুলের শিক্ষকেরা জানালেন, সরকারের তরফে প্রতি মাসে পড়ুয়াদের মিড-ডে মিলের সামগ্রী দেওয়া হয়। তবে শুধু সরকারি সাহায্যের উপরে নির্ভর না করে তাঁরা নিজেদের উদ্যোগেও নবম থেকে দ্বাদশ শ্রেণির সেই সমস্ত দরিদ্র পড়ুয়াকে সাহায্য করছেন, যারা করোনায় মা অথবা বাবাকে হারিয়েছে। সম্প্রতি ওই পড়ুয়াদের দেওয়া হয়েছে সর্ষের তেল, ডাল, চিনি, সুজি, বিস্কুট, আলু, পেঁয়াজ, গুঁড়ো দুধের প্যাকেট, সাবান ও মাস্ক। আশুতোষবাবু জানান, করোনার কারণে পড়ুয়াদের স্কুলে আসতে নিষেধ করা হয়েছে। তাই তাদের পরিবর্তে অভিভাবকেরা স্কুলে এসে খাদ্যসামগ্রী নিয়ে গিয়েছেন।
ঠিক একই ভাবে আর্থিক ভাবে পিছিয়ে থাকা ছাত্রীদের পাশে এসে দাঁড়িয়েছেন বেলঘরিয়ার দেশপ্রিয় বালিকা বিদ্যা নিকেতন উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষিকা ও শিক্ষাকর্মীরাও। শর্মিষ্ঠা দত্ত নামে ওই স্কুলের এক শিক্ষিকা জানালেন, ছাত্রীদের সঙ্গে কথা বলে তাঁরা জানতে পেরেছেন, অনেকের বাড়িতেই খাবারের যথেষ্ট জোগান নেই। অতিমারির কারণে অনেকের পরিবারের রোজগারও প্রায় শূন্য। সেই কারণেই গত জুন মাস থেকে ছাত্রীদের জন্য তাঁরা শুরু করেছেন ‘সাথে আছি’ প্রকল্প। শিক্ষক-শিক্ষিকা ও শিক্ষাকর্মীরা ব্যক্তিগত উদ্যোগে নবম থেকে দ্বাদশ শ্রেণির প্রায় ২০০ জন পড়ুয়ার অভিভাবকদের হাতে তুলে দিয়েছেন এক দিস্তা কাগজ, পেন, জ্যামিতি বক্স, দরকারি বই এবং নানা খাদ্যসামগ্রী। জুলাই মাসেও প্রায় ২০০ জন দরিদ্র অভিভাবকের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে পড়াশোনার সামগ্রী, চাল ,ডাল, আটা, মুড়ি, বিস্কুট। সঙ্গে মাস্ক ও সাবানও। শিক্ষক-শিক্ষিকারা জানাচ্ছেন, নবম থেকে দ্বাদশ শ্রেণির পড়ুয়াদের মিড-ডে মিল দেওয়া হয় না। তাই আর্থিক ভাবে পিছিয়ে পড়া ওই ছাত্রীদের খাদ্যসামগ্রী দেওয়া হল।