প্রতীকী ছবি।
লকডাউন আংশিক উঠলেও স্কুল এখনও বন্ধ। এই অবস্থায় অনলাইনে পড়াশোনা চালু রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে শিক্ষা দফতর। তাই চলছে অনলাইন ক্লাস। কিন্তু সেই ক্লাসের ঝক্কি সামাল দিতে গিয়ে নাজেহাল হচ্ছেন অভিভাবকেরা।
সমস্যা বেড়েছে চতুর্থ দফা লকডাউনের শেষ দিক থেকে অনেক অফিস ও দোকানপাট খুলে যাওয়ায়। অনেক পড়ুয়াই মা-বাবার মোবাইল বা ল্যাপটপে অনলাইন ক্লাস করত। এখন মা-বাবারা মোবাইল বা ল্যাপটপ নিয়ে কাজে গেলে কী ভাবে তারা ক্লাস করবে, সেই চিন্তা বেড়েছে। কেউ কেউ অবশ্য বাড়ির ডেস্কটপ থেকেও ক্লাস করছে। কিন্তু এখন ডেস্কটপ খুবই কম বাড়িতে রয়েছে, তাই মূল ভরসা সেই মোবাইল বা ল্যাপটপ।
মূলত নিচু ক্লাসের পড়ুয়াদের ক্ষেত্রেই এই সমস্যা তীব্র। অভিভাবকেরা জানাচ্ছেন, উঁচু ক্লাসের পড়ুয়াদের অনেকেরই নিজস্ব স্মার্টফোন থাকে। কিন্তু সঙ্গতি থাকলেও অনেক অভিভাবক নিচু ক্লাসের পড়ুয়াদের হাতে স্মার্টফোন দিতে চান না। অথচ এখন বাধ্য হয়েই সেটা করতে হচ্ছে। এই পরিস্থিতিতে বহু নিম্ন-মধ্যবিত্ত পরিবারের অভিভাবক স্মার্টফোন কেনার টাকা জোগাতে হিমশিম খাচ্ছেন। সম্প্রতি কেরলের মলপ্পুরমে এক দলিত কিশোরী স্মার্টফোনের অভাবে অনলাইন ক্লাস করতে না-পেরে হতাশায় আত্মহত্যা করে বলে খবর। আবার কোনও কোনও ক্ষেত্রে কাজের ক্ষতি করে হলেও সন্তানকে নিজের স্মার্টফোন দিয়ে ক্লাস করার সুযোগ করে দিচ্ছেন অভিভাবকেরা।
দমদম ক্যান্টনমেন্টের বিবেকানন্দ পল্লির বাসিন্দা বিপুলকুমার পাল পেশায় ইলেক্ট্রিশিয়ান। তাঁর মেয়ে পল্লবী নবম শ্রেণিতে পড়ে। পল্লবীর স্কুলে অনলাইনে ক্লাস হচ্ছে, গৃহশিক্ষকও অনলাইনেই পড়াচ্ছেন। বিপুলবাবু বলেন, “আমার ফোন দিয়েই মেয়ে অনলাইন ক্লাস করে। সকালে ওর স্কুলের ক্লাস শেষ হলে তবে কাজে যাই। তাতে দেরি হয়ে যায়। বিকেলে মেয়ের টিউশনের ক্লাস থাকায় কাজ ফেলেই ফিরতে হয়। তাতে ক্ষতিও হচ্ছে।” বিপুলবাবু জানান, লকডাউনের সময়ে উপার্জন হয়নি। এখন তাই নতুন স্মার্টফোন কেনার সামর্থ্যও তাঁর নেই। তবু ধার নিয়ে কেনার চেষ্টা করছেন।
বাগুইআটির সুস্মিতা হাজরার দুই মেয়ে অষ্টম ও নবম শ্রেণির ছাত্রী। দু’জনের প্রায় একই সময়ে অনলাইন ক্লাস হচ্ছে। সুস্মিতাদেবী বলেন, “সম্প্রতি স্বামী কাজে যাচ্ছেন। একটা স্মার্টফোন নিয়ে তিনি অফিসে চলে গেলে বাড়িতে থাকে আমার ফোনটা। সেটা দিয়ে দুই মেয়ে একসঙ্গে কী করে ক্লাস করবে? আরও একটা স্মার্টফোন কেনার সামর্থ্য নেই।’’ একই সমস্যা পার্ক সার্কাসের বাসিন্দা, তথ্যপ্রযুক্তি কর্মী অনির্বাণ সরকারেরও। নিয়মিত অফিসে যাওয়া শুরু করার পরে কাজের ফাঁকে তাঁর মোবাইলে আসছে ছেলের স্কুলের হোমটাস্ক। সেটা আবার ছেলেকে বলে দিতে হচ্ছে। অনির্বাণ অবশ্য পরিস্থিতির গুরুত্ব বুঝে ছেলেকে ফোন কিনে দিতে চান।
মোবাইল বিক্রেতারা বলছেন, অনলাইনে ক্লাস করতে একটু বেশি ক্ষমতাসম্পন্ন মোবাইল দরকার। বাজারে তার দাম প্রায় ১৫ হাজার টাকা। সকলের পক্ষে তেমন দামি ফোন কেনা সম্ভবও নয়। লকডাউন-পর্বে পাইকারি বাজার ও সংস্থার ডেলিভারি বন্ধ ছিল। এখন দোকান খুললেও পর্যাপ্ত জোগান নেই। ফলে কেউ ফোন চাইলেই যে চট করে পাবেন, তারও নিশ্চয়তা নেই।