এই সেই পেঁপে।
বছর তিনেক আগে ২০১৯-এর নভেম্বরে গরুর দুধে সোনার খোঁজ দিয়েছিলেন রাজ্য বিজেপির তৎকালীন সভাপতি দিলীপ ঘোষ। তা নিয়ে জোর চর্চা হয়েছিল রাজ্য রাজনীতিতে। আর গরু পাচার তদন্ত নিয়ে যখন বাংলার রাজনীতিতে ঘটনার ঘনঘটা, তখনই কলকাতার এক গাছে ফলেছে গরুর মুখের মতো দেখতে পেঁপে। জন্মাষ্টমীর সকালে সেই পেঁপে গাছ থেকে পাড়ার পরে অবাক গৃহকর্তা সরাসরি যোগাযোগ করেছেন। ছবি পাঠিয়ে দাবি করেছেন, মন দিয়ে দেখলে গরুর মুখের আদল স্পষ্ট এই ‘গো-মুখ’ পেঁপেটিতে।
দুধ, ননি, মাখন প্রিয় কৃষ্ণের জন্মতিথি জন্মাষ্টমীর সকালে এমন পেঁপে দেখে উচ্ছ্বসিত বেলেঘাটার বাসিন্দা সুজয়কুমার দত্ত। তিনি বললেন, ‘‘অনেক দিন ধরেই লক্ষ করে দেখেছি পেঁপেটিকে সাধারণ দেখতে নয়। গাছের বাকি পেঁপের থেকে একেবারে আলাদা। গাছ থেকে পাড়ার পরে স্পষ্ট যে, এটিতে পরিষ্কার গরুর মুখের আদল। দুটো শিংও রয়েছে।’’ তাঁর আরও দাবি, ‘‘ভাল করে দেখলে নাক, চোখ, মুখও দেখা যাচ্ছে।’’
মূলত উত্তর কলকাতার জোড়াবাগানের বাসিন্দা হলেও বছর ১৩ আগে বেলেঘাটার জোড়ামন্দির এলাকায় একটি ফ্ল্যাট কেনেন সুজয়। নিজের জমি নেই। ‘সূর্য রেসিডেন্সি’র বাসিন্দা সুজয় আবাসনের এক ফালি জমিতে নানা রকম ফুল গাছ লাগান। জুঁই, টগর, জবার মাঝে একটাই ফল গাছ। সেই পেঁপে গাছেই অবাক করা ফল ফলেছে। সুজয় জানান, ‘‘আমারই এক প্রতিবেশী মিনতি রায় এই গাছটা আমায় দিয়েছিলেন। খুব ভাল পেঁপে হয়। দারুণ স্বাদ। কিন্তু বীজ কম। এ বারও খান দশেক পেঁপে হয়েছে। সবগুলি সাধারণ দেখতে হলেও এটির রূপ গোমাতার মতো।’’ ইলেট্রনিক্স ইঞ্জিনিয়ার সুজিত সরকারি, বেসরকারি অনেক চাকরি করার পরে নিজের ব্যবসা করতেন। এখন ছেলেমেয়েরা বাইরে। স্ত্রী আর গাছপালা নিয়ে থাকেন বেলেঘাটায়। তবে এই ফলটি নিয়ে তিনি কী করবেন ভেবে পাচ্ছেন না। খেতেও মন চাইছে না। জন্মাষ্টমীর দিনে পাওয়া ‘গোমুখ’ পেঁপে তাই তিনি স্থানীয় একটি রাধকৃষ্ণ মন্দিরে ‘নিবেদন’ করবেন বলে ঠিক করেছেন।
তবে কোনও ফলের এমন রূপ হতেই পারে বলে জানিয়েছেন প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন অধ্যাপক মানসরঞ্জন মজুমদার। তিনি বলেন, ‘‘অনেক সময় সমান ভাবে কোষ বিভাজন হয় না। সেই কারণেই নানা রকম রূপ নিয়ে নেয় ফল। এটা দেখে অবাক হওয়ার মতো কিছু নেই।’’ তাঁর সংযোজন, ‘‘এমন ফল দেখে কেউ হনুমান, কেউ গণেশ বা কেউ গরুর আদল দেখতে পারেন। কিন্তু সাধারণ পেঁপের থেকে এটি কোনও অংশেই আলাদা নয়। রূপের বদল হয়েছে কোষ বিভাজনে সমতা না থাকার কারণে।’’ এমন ফল খাওয়ার ক্ষেত্রেও কোনও বাধা বা ভয়ের কিছু নেই বলেই জানিয়েছে মানসরঞ্জন।