Sanitary Napkin

ক্যাবে ন্যাপকিন রেখে প্রচারে শহরের প্যাডম্যান

অ্যাপ ক্যাবের মধ্যে স্যানিটারি ন্যাপকিন রাখার কাজে উদ্যোগী হয়েছেন ‘কলকাতার প্যাডম্যান’ শোভন মুখোপাধ্যায়।

Advertisement

স্বাতী মল্লিক

কলকাতা শেষ আপডেট: ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০২১ ০৬:২৬
Share:

প্রতীকী ছবি।

অফিসের কাজেই মাঝরাতের বিমানে মুম্বই যাওয়ার কথা ছিল তরুণীর। বাড়ি থেকে অ্যাপ ক্যাবে চেপে বিমানবন্দর যাওয়ার পথে হঠাৎ তিনি বুঝতে পারেন, সেখানে পৌঁছনোর আগেই কোনও গণশৌচাগারে ক্যাব দাঁড় করাতে হবে তাঁকে। তারও আগে দাঁড়াতে হবে কোনও ওষুধের দোকানে। কারণ, হঠাৎ করেই শুরু হয়েছে ঋতুস্রাব! এমন পরিস্থিতির জন্য আগেভাগে প্রস্তুত না থাকায় সে দিন পথে বেরিয়ে রীতিমতো বিপদে পড়েছিলেন ওই তরুণী। সেই সঙ্গে ছিল এক রাশ অস্বস্তি।

Advertisement

এমন পরিস্থিতি কী ভাবে সামাল দেবেন মেয়েরা? কী ভাবে চটজলদি সমাধান হবে ন্যাপকিন-সমস্যার? সেই কথা ভেবেই এ বার অ্যাপ ক্যাবের মধ্যে স্যানিটারি ন্যাপকিন রাখার কাজে উদ্যোগী হয়েছেন ‘কলকাতার প্যাডম্যান’ শোভন মুখোপাধ্যায়। শহরের একাধিক গণশৌচাগারে ন্যাপকিন রাখার ব্যবস্থা করে এবং ন্যাপকিন নিয়ে প্রচার চালিয়ে ইতিমধ্যেই নজর কেড়েছেন বাঁশদ্রোণীর ওই যুবক। তবে এ বার শুধু গণশৌচাগারেই নয়, চলন্ত অ্যাপ ক্যাবের মধ্যেও যাতে প্রয়োজনে সাহায্য পেতে পারেন মহিলা যাত্রীরা, সেই ব্যবস্থাই করছেন তিনি। ইতিমধ্যে শহরের তিনটি ক্যাবমালিকদের সম্মতিতে ক্যাবের মধ্যে ন্যাপকিন রাখার ব্যবস্থা করা হয়েছে। আগামী এপ্রিলের মধ্যে শহরের একশোটি ক্যাবে ন্যাপকিন রেখে সাহায্য এবং প্রচার চালানোই আপাতত প্রধান লক্ষ্য শোভনের। বলছেন, ‘‘রাস্তায় বেরিয়ে যাতে সহজেই যাতে মহিলারা ন্যাপকিন পেতে পারেন, সেই ব্যবস্থা করতে এই উদ্যোগ। সেইসঙ্গে এর মাধ্যমে ন্যাপকিন নিয়ে সচেতনতা প্রচারও সম্ভব। এমনকি, গাড়িচালক এবং যাত্রীদের একাংশের মধ্যে এ নিয়ে যে গোঁড়ামি রয়েছে, তার গোড়ায় আঘাত করা যাবে।’’

ঋতুস্রাব নিয়ে সঙ্কোচ কাটানোর বার্তা নিয়ে এর আগে অস্কার জয় করেছে এ দেশের তথ্যচিত্র ‘পিরিয়ড: এন্ড অব সেনটেন্স’। কর্মক্ষেত্রে মহিলাদের ‘পিরিয়ড লিভ’ দেওয়ার ঘোষণা করেছে শহরের এক বেসরকারি সংস্থা। ছুতমার্গ কাটাতে ন্যাপকিন নিয়ে প্রচার চালিয়েছিলেন যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ুয়ারাও। কিন্তু আজও এ নিয়ে গোঁড়ামি ভাব কাটেনি। তাই প্রথমে বিভিন্ন অ্যাপ ক্যাব সংস্থার সঙ্গে কথা বলতে গেলেও সে ভাবে সাড়া পাননি শোভন। এতে অবশ্য দমে যাননি তিনি। তাঁর কথায়, ‘‘আগে মেট্রোর শৌচাগারে ন্যাপকিন রাখার প্রস্তাব দিলেও উৎসাহ দেখাননি কর্তৃপক্ষ। এখনও শহরের সব গণশৌচাগারে ন্যাপকিন রাখার অনুমতি পাইনি। তাই না শুনতে আমি অভ্যস্ত।’’ হতোদ্যম না হয়ে সোনারপুরের বাসিন্দা, গাড়ির মালিক অভ্র ভদ্রের গাড়ি দিয়েই উদ্যোগের সূচনা করে ফেলেছেন তিনি।

Advertisement

দীনবন্ধু অ্যান্ড্রুজ় কলেজের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র অভ্র অনলাইন ক্লাসের ফাঁকে ফাঁকে বিভিন্ন অ্যাপ ক্যাব সংস্থার হয়ে নিজের গাড়ি চালিয়ে থাকেন। শোভনের উদ্যোগের কথা শুনে নিজেই ক্যাবে ন্যাপকিন রাখার প্রস্তাব দেন। বছর কুড়ির অভ্র বলছেন, ‘‘গাড়ি নিয়ে দূরে যেতে হয় আমায়, রাতেও গাড়ি চালাতে হয়। মেয়েরা যে এমন অসুবিধায় পড়তে পারেন, তা বুঝি। তাই মনে হয়েছিল যে, ন্যাপকিন শৌচাগারে রাখা গেলে গাড়িতে কেন রাখা যাবে না?’’ তবে শুধু নিজের গাড়িতেই নয়, বন্ধুবান্ধব-পরিচিত চালকদের গাড়িতেও ন্যাপকিন রাখার বিষয়ে শোভনের সঙ্গে কাঁধ মিলিয়ে প্রচার চালাচ্ছেন অভ্র। সেই সঙ্গে যাত্রীদের একাংশের প্রশ্নের সম্মুখীনও হয়েছেন। অভ্রের কথায়, ‘‘ক্যাবে ন্যাপকিন রাখায় আমার কোনও লভ্যাংশ আছে কি না, প্রথম দিনেই জানতে চেয়েছিলেন এক পুরুষ যাত্রী। তবে তাতে খারাপ লাগেনি। এক শিক্ষিকার থেকে প্রশংসা পেয়েছি। এক কলেজছাত্রীও নিজের অভিজ্ঞতা ভাগ করে নিয়ে বলেছেন, ‘ভরসা পেলাম’। এগুলোই তো পাওনা।’’

আর শোভন বলছেন, ‘‘ক্যাবে রাখা ন্যাপকিন মহিলা যাত্রীদের কাজে লাগুক না-লাগুক, লোকে যে এটা দেখে প্যাড নিয়ে কথা বলছেন, সেটাই আশার কথা।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement