Kolkata

WB municipal election 2022: ‘শান্তিপূর্ণ ভোটে’ বুথের বাইরে কাদের আনাগোনা!

ইএম বাইপাস লাগোয়া বিদ্যাধর বালিকা বিদ্যালয়ের সামনে দুই প্রবীণের এই কথোপকথনই যেন শনিবার দিনভর ঘুরে-ফিরে এল বিধাননগরের ভোটে।

Advertisement

নীলোৎপল বিশ্বাস

কলকাতা শেষ আপডেট: ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০২২ ০৮:০৫
Share:

হাতিয়াড়ায় ভুয়ো ভোটারের অভিযোগ তুলে বাম প্রার্থী-সমর্থকদের পথ অবরোধ। ছবি: স্নেহাশিস ভট্টাচার্য

বিধাননগরে ভোট কেমন হল? ওরা যেমন করাল! ওরা কারা? ‘ঠিক চেনা গেল না’!

Advertisement

ইএম বাইপাস লাগোয়া বিদ্যাধর বালিকা বিদ্যালয়ের সামনে দুই প্রবীণের এই কথোপকথনই যেন শনিবার দিনভর ঘুরে-ফিরে এল বিধাননগরের ভোটে। কোথাও সকাল থেকে বুথের সামনে ভিড় করে দাঁড়িয়ে থাকলেন অচেনা লোকজন। কোথাও আবার তাঁরাই পথ দেখিয়ে অটো, ট্যাক্সি ভরিয়ে ‘ভোটার’ নিয়ে এলেন। তাঁদের কারও কারও সঙ্গে সচিত্র পরিচয়পত্র নেই জানা সত্ত্বেও সাহস জুগিয়ে বললেন, ‘‘ঢুকে ভোটটা দে না! কিচ্ছু লাগবে না। আমরা বাইরে আছি তো, বুঝে নেব!’’ একটা সময়ের পরে এঁদেরই আবার লোক ধরে ধরে বলতে শোনা গেল, ‘‘কাকিমা, ভোট পড়ে গিয়েছে, বাড়ি যান।’’ কাউকে কাউকে আবার এ-ও বলা হল, ‘‘আমরা ভোটটা ম্যানেজ করে দেব, আপনার ভিতরে যাওয়ার দরকার নেই!’’ দিনভর যা দেখে অনেকেরই প্রশ্ন, ‘‘২০১৫ সালের তুলনায় পরিবেশ শান্তিপূর্ণ হলেও এ বারও নিজের ভোট নিজে দেওয়া গেল কি?’’

এমন কিছু যে ঘটতে পারে, সেই আশঙ্কা অবশ্য ছিল আগেই। অনেকেরই দাবি, মনোনয়ন জমা দেওয়ার দিনেও প্রার্থীর সঙ্গে বহিরাগতদের ভিড় ছিল চোখে পড়ার মতো। এ দিন সকাল সকাল সেই চিত্রই সিএফ, এই, বিএফ, এফডি-র মতো ব্লকগুলিতে তো বটেই, একাধিক আবাসনের বুথেও দেখা গিয়েছে বলে অভিযোগ। সব চেয়ে বেশি অভিযোগ এসেছে ৩৯ নম্বর ওয়ার্ডের বুথগুলি থেকে। তার একটির সামনে গিয়ে দেখা যায়, কার্যত এলাকা ঘিরে রেখেছে কয়েকশো যুবক। তাদেরই কয়েক জন বুথের বাইরে দাঁড়ানো এক বিরোধী প্রার্থীকে হঠাৎ মারধর করতে শুরু করে বলে প্রত্যক্ষদর্শীদের দাবি। ঘটনাস্থলে ওই প্রার্থীর নির্বাচনী এজেন্ট এলে তাঁকেও মারধর করা হয় বলে অভিযোগ। পুলিশ তখনকার মতো এলাকা ফাঁকা করে দিলেও কিছু ক্ষণ পরেই আবার তারা ফিরে আসে বুথের সামনে। বেলা সাড়ে ১২টা থেকে কার্যত তাদেরই ওই বুথের ভোট পরিচালনা করতে দেখা যায় বলে অভিযোগ স্থানীয়দের একাংশের। তাদেরই এক জন বলল, ‘‘দাদাকে কথা দেওয়া আছে। সব ভাল ভাবে মিটিয়ে ফিরতে হবে। আমরা আমাদের কাজ করছি, তেমন ঝামেলা কিন্তু কোথাও নেই।’’

Advertisement

৩১ নম্বর ওয়ার্ডে গিয়ে আবার দেখা গেল, মোটরবাইকে সওয়ার লোকজনের দাপট। ঘন ঘন এলাকায় টহল দিচ্ছে তারা। ওই ওয়ার্ডের এক প্রার্থী বুথের কাছে যেতেই তাদের কয়েক জনকে বলতে শোনা যায়, ‘‘আপনার আসার দরকার ছিল না। সকাল থেকে সব সামলে রেখেছি। বিকেলের পরে হিসেব মিলিয়ে নেবেন। যেমনটা বলেছিলেন, সব তেমন হয়েছে।’’ খুশি হয়ে ফেরার পথে প্রার্থীকে বলতেও শোনা যায়, ‘‘কথা রেখেছিস যখন, খেয়ে ফিরিস। রাতের ট্রেন তো?’’ ট্রেন! কোথা থেকে এলেন? বিধাননগরের বাসিন্দা নন? উত্তর মেলেনি প্রার্থী বা তাঁর বুথ সামলানো ব্যক্তি, কারও কাছেই।

একই ভাবে উত্তর মেলেনি ৩০ নম্বর ওয়ার্ডের ভগবতী বালিকা বিদ্যালয়ের সামনেও। দত্তাবাদ এলাকার এক পরিচিত রাজনৈতিক কর্মীকে দলবল নিয়ে ঘুরতে দেখা যায় ওই স্কুলের কাছে। বাইপাস লাগোয়া দত্তাবাদ ছেড়ে ভোটের দিন এত দূরে কেষ্টপুর খালের কাছের স্কুলের সামনে কেন? কোনও উত্তর দেননি ওই নেতা। এক সঙ্গী শুধু বলেন, ‘‘দাদার কাজ আছে।’’ বাগুইআটি, জ্যাংড়া, হাতিয়াড়ার বিধাননগর পুর এলাকায় একই ভাবে দলবল নিয়ে ঘুরতে দেখা যায় দক্ষিণ দমদম পুরসভার এক তৃণমূল নেত্রীর স্বামীকে। বিধাননগরের ভোটে কী কাজ? এ ক্ষেত্রেও উত্তর মেলেনি।

বিধাননগরের বিধায়ক তথা রাজ্যের মন্ত্রী সুজিত বসু বলেন, ‘‘কে কোথায় গিয়েছিল, বলতে পারব না। আমি কোথাও যাইনি। আমার চেনা কোনও প্রার্থীর এমন অবস্থা হয়নি যে বাইরে থেকে লোক আনতে হবে।’’ বিধাননগর পুরসভার প্রাক্তন মেয়র তথা এ বারের ভোটের তৃণমূল প্রার্থী সব্যসাচী দত্তের দাবি, ‘‘বহিরাগত কোথায়? সবই তো চেনা-জানা, নিজেদের লোক।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement