নিরাপত্তার দাবিতে সরকারি হাসপাতালে জুনিয়র ডাক্তারদের কর্মবিরতি নতুন কিছু নয়। এ বার সেই পথে হাঁটতে শুরু করল বেসরকারি হাসপাতালও। আউটডোর পরিষেবা বন্ধ রেখে দিনভর অসংখ্য রোগীকে চরম ভোগান্তির মধ্যে ফেললেন কর্মবিরতিতে যোগ দেওয়া চিকিৎসকেরা। দূর-দূরান্ত থেকে এসেও ফিরে যেতে হল বহু রোগীকে। স্বাস্থ্য ভবন সূত্রে জানা গিয়েছে, ভবিষ্যতে এমন ঘটনার পুনরাবৃত্তি বন্ধ করতে ধর্মঘটে যোগ দেওয়া প্রতিটি হাসপাতালকে কারণ দর্শানোর নোটিস পাঠিয়েছে তারা। জানতে চাওয়া হয়েছে, এর পরেও কেন তাদের লাইসেন্স বাতিল করা হবে না?
এ দিকে, সিএমআরআই হাসপাতালের যে ঘটনার প্রেক্ষিতে এই কর্মবিরতি, তাতে তিন জন অভিযুক্তকে গ্রেফতার করা হয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
কর্মক্ষেত্রে হেনস্থার প্রতিবাদে এ দিন শহরের যে ৫০টি বেসরকারি হাসপাতাল আউটডোর পরিষেবা বন্ধ রেখেছিল, তাদের দাবি, সকালেই রোগীদের ফোনে আউটডোর বন্ধ থাকার খবর জানিয়ে দেওয়া হয়েছিল। তবু ভোগান্তি যে এড়ানো গেল না, বিভিন্ন হাসপাতালে ঘুরতেই ধরা পড়ল সেই ছবি।
নিউ ইয়র্ক থেকে এসেছেন রেবা লাহিড়ী। সল্টলেকের বেসরকারি হাসপাতালে ডাক্তারের সঙ্গে অ্যাপয়েন্টমেন্ট শনিবার বিকেলে। হাসপাতালে পৌঁছলে তাঁকে কর্মীরা জানান, চিকিৎসকেরা রোগী দেখছেন না। ওই প্রৌঢ়া কর্মীদের বলেন, ‘‘এই অবস্থা জানলে একা আসতাম না। ডাক্তার না দেখিয়ে ফিরব না।’’ তখন হাসপাতালের কর্মীরা তাঁকে জরুরি বিভাগে নিয়ে যান।
কয়েক সপ্তাহ আগে সময় নিলেও পরিষেবা না পেয়ে এ দিন বাড়ি ফিরতে হল লক্ষ্মীকান্তপুরের রণিতা বে়ড়াকে। বছর পঁচিশের তরুণী বাইপাসের এক বেসরকারি হাসপাতালে চর্মরোগ বিশেষজ্ঞের সময় পেয়েছিলেন তিন সপ্তাহ পরে। সেই মতো এ দিন সকালে চলে আসেন। কিন্তু বহির্বিভাগ বন্ধ থাকায় ফিরে যেতে হয়।
কয়েকটি বেসরকারি হাসপাতাল বাদে শনিবার উত্তর থেকে দক্ষিণ, শহরের বেশির ভাগ বেসরকারি হাসপাতালে ছবিটা ছিল এমনই।
বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় সিএমআরআই-এর চিকিৎসকেরা পরিষেবা বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। সিরাজ খান নামে এক রোগীর চিকিৎসার বিল মেটানো নিয়ে সেখানে সমস্যা তৈরি হয়েছিল। অভিযোগ, স্থানীয় এক কংগ্রেস নেতা টাকা না নিয়েই রোগীকে ছেড়ে দিতে হাসপাতালকে চাপ দিতে থাকেন। হেনস্থা করা হয় চিকিৎসক ও কর্মীদেরও। পুলিশে অভিযোগ জানানো হলেও ফল না মেলায় চিকিৎসকেরা কর্মবিরতির সিদ্ধান্ত নেন।
সিরাজের ভাই রাহুল এ দিন বলেন, ‘‘গরিব মানুষের সঙ্গে ভাল ব্যবহার করতে জানেন না ওঁরা। হাসপাতালের কর্মীরা আমাদের ধাক্কা দিয়ে বার করে দিয়েছিলেন।’’ সিএমআরআই অবশ্য এই অভিযোগ অস্বীকার করেছে।
চিকিৎসকদের সংগঠন ‘ইউনাইটেড ডক্টর্স ভয়েস অব বেঙ্গল’ এ দিন জানায়, সম্মানের সঙ্গে কাজ করতেই এই প্রতিবাদ। কর্মক্ষেত্রে নিরাপত্তার অধিকার সকলের রয়েছে। সেই অধিকারের জন্যই এই লড়াই।
বিভিন্ন সময়ে ছোট-বড় নানা ঘটনায় সরকারি হাসপাতালের জুনিয়র ডাক্তাররা যখন কাজ বন্ধ রেখেছেন, তখন প্রশ্ন উঠেছে, ডাক্তারির মতো পেশায় প্রতিবাদের এমন পন্থা নীতিগত ভাবে কতটা ঠিক? এ দিন বেসরকারি ডাক্তারদের বিরুদ্ধেও সেই একই প্রশ্ন তুলেছে বিভিন্ন মহল। আন্দোলনকারীরা অবশ্য দাবি করেছেন, প্রশাসনের উপরে চাপ সৃষ্টি করতেই তাঁদের এই সিদ্ধান্ত। তাঁদের উপরে হামলার ঘটনায় দোষীরা পার পেয়ে যাচ্ছে, গ্রেফতার হলেও পরের দিনই ছাড়া পেয়ে যাচ্ছে, তাতে প্রতিবাদের এই রাস্তা তাঁরা বাধ্য হয়েই বেছে নিয়েছেন।