বেতন কাঠামো পুনর্বিন্যাস, অনৈতিক বদলির নির্দেশিকা প্রত্যাহার-সহ বিভিন্ন দাবি নিয়ে গত ন’দিন ধরে অনশন চালাচ্ছে নার্সদের সংগঠন ‘নার্সেস ইউনিটি’। এসএসকেএম হাসপাতালে চলছে সেই অনশন-বিক্ষোভ। সোমবার ওই হাসপাতাল থেকে বেরিয়ে শহরের রাস্তায় মিছিল করলেন সংগঠনের সদস্যরা। এমনকি, এক্সাইড মোড়ে রাস্তার উপরেই বসে পড়েন বিক্ষোভকারীরা। বৃত্তাকারে ঘিরে রাখেন রাস্তা। এর ফলে রবীন্দ্র সদন চত্বরে বেশ কিছু ক্ষণ যানজট তৈরি হয়। পরে ফের মিছিল নিয়ে হাসপাতালে ফিরে যান তাঁরা।
যদিও তাঁরা কোনও অবরোধ করেননি বলেই দাবি করে নার্সেস ইউনিটি-র সম্পাদক ভাস্বতী মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘দাবিগুলি নিয়ে শান্তিপূর্ণ ভাবে মিছিল করেছি। এক্সাইড মোড়ে গোল হয়ে সকলে দাঁড়িয়ে নিজেদের দাবির কথাগুলি বলেছি। এক জন বক্তব্য রেখেছেন, তার পরে পুনরায় মিছিল করে অনশন মঞ্চে ফিরে এসেছি।’’ সূত্রের খবর, অতিমারি পরিস্থিতিতে হাসপাতাল চত্বরে জমায়েত করে বিক্ষোভে কোভিড-বিধি ভাঙা হচ্ছে বলে কলকাতা হাই কোর্টে একটি জনস্বার্থ মামলা দায়ের হয়েছে। ভাস্বতীর দাবি, ‘‘কোভিড-বিধি লঙ্ঘন করা হচ্ছে না। এর আগেও যখন অবস্থান-বিক্ষোভ করেছিলাম, তখন একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা মামলা দায়ের করেছিল। এ বারও করেছে। আমাদের তরফেও আইনজীবী নিয়োগ করে আদালতে সমস্ত বিষয় জানাব।’’
বেতন কাঠামো পুনর্বিন্যাসের দাবিতে গত ২৬ জুলাই প্রথম এসএসকেএম হাসপাতাল চত্বরে শুরু হয়েছিল অবস্থান-বিক্ষোভ। গত ৭ অগস্ট বিক্ষোভকারীদের প্রতিনিধিদের সঙ্গে আলোচনায় বসেছিলেন স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য। বিক্ষোভকারীদের দাবি, তিন-চার মাসের মধ্যে সমস্যার সমাধানের প্রতিশ্রুতি পেয়ে তাঁরা আন্দোলন প্রত্যাহার করে নিয়েছিলেন। কিন্তু তার পরেও কিছু হয়নি। ভাস্বতীদের অভিযোগ, বেতন কাঠামো পুনর্বিন্যাসের দাবি পূরণ হওয়ার আগেই উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ভাবে বিভিন্ন হাসপাতাল থেকে ৩৫ জন নার্সের বদলির নির্দেশিকা জারি করে স্বাস্থ্য দফতর। তার মধ্যে আন্দোলনের নেতৃত্ব দেওয়া, এসএসকেএমে কর্তব্যরত ১১ জন নার্সও রয়েছেন। এর পরেই বদলির নির্দেশিকা প্রত্যাহারের দাবিতে পিজি-র নার্সিং সুপার মনীষা ঘোষকে ঘেরাও করে বিক্ষোভ শুরু হয়। প্রায় ৪৬ ঘণ্টা ঘেরাও থাকার পরে গত ১৫ নভেম্বর ওই সুপারকে বার করে নিয়ে যান কয়েক জন নার্সিং ইন-চার্জ।
সূত্রের খবর, বাড়ি ফেরার কয়েক দিন পর থেকে জ্বর-কাশিতে আক্রান্ত হন মনীষা। তাঁর করোনা পরীক্ষার রিপোর্ট পজ়িটিভ আসে।
অভিযোগ, ঘেরাও থেকেই তিনি সংক্রমিত হয়েছেন। ভাস্বতী বলেন, ‘‘এই অভিযোগ ভিত্তিহীন। নার্সিং সুপারের ঘরের বাইরে আমরা ছিলাম। ঘরে কয়েক জন আধিকারিক ছিলেন। তাই আমাদের থেকে ওঁর সংক্রমিত হওয়া সম্ভব নয়।’’ নার্সিং সুপার ঘেরাও মুক্ত হওয়ার পরেই বেতন কাঠামো পুনর্বিন্যাসের দাবিতে শুরু হয় অনশন-বিক্ষোভ। রাজ্য স্বাস্থ্য দফতরের এক কর্তার কথায়, ‘‘চাকরিতে নিয়ম অনুসারেই বদলি করা হয়েছে। বেতন কাঠামো পুনর্বিন্যাস নিয়ে আলোচনা তো হয়েছে। সময় মতো নিশ্চয় ব্যবস্থা হবে। কিন্তু এ ভাবে রাস্তা অবরোধ, বিক্ষোভ ঠিক নয়।’’