ভগ্ন স্বাস্থ্যের কারণে টালা সেতু দিয়ে এখন ভারী যান চলাচল নিষিদ্ধ।—ফাইল চিত্র।
উড়ালপুলের যা পরিসর তাতে একসঙ্গে দু’দিকের গাড়ি যাতায়াত করতে পারে অনায়াসে। এমনই মত অনেকের। তবু উত্তর কলকাতার বাগবাজার সংলগ্ন খালধারের কাছের লকগেট উড়ালপুল দিয়ে সময় ভাগ করে একমুখী গাড়ি চলত এত দিন। গত রবিবার ভোর থেকে বন্ধ হয়ে গেল সেই বিভাজনও। সেখান দিয়ে শুধুই বাগবাজার থেকে উত্তরমুখী গাড়ি চলাচল শুরু করেছে। লালবাজার সূত্রের খবর, আপাতত এই সিদ্ধান্তই বজায় থাকবে।
ভগ্ন স্বাস্থ্যের কারণে টালা সেতু দিয়ে এখন ভারী যান চলাচল নিষিদ্ধ। প্রশ্ন, এমন পরিস্থিতিতে টালা সেতুর সমান্তরালে যাওয়া গুরুত্বপূর্ণ লকগেট উড়ালপুল দিয়ে গাড়িগুলিকেও কেন কেবল একমুখীই করা হল? স্থানীয়দের দাবি, লকগেট উড়ালপুল দিয়ে যদি দু’দিকেই গাড়ি যেত, তবে ওই এলাকার যান চলাচলের গতি অনেক বাড়ত।
উত্তর কলকাতার বাগবাজার মোড় থেকে কিছুটা এগিয়েই খালের রাস্তার পাশ থেকে শুরু হয়েছে লকগেট উড়ালপুল। এর অন্য প্রান্ত বিটি রোডের চিড়িয়ামোড়ের একটু আগে গিয়ে পড়ছে। পুজোর আগে ওই উড়ালপুল দিয়ে দুপুর একটা পর্যন্ত বিটি রোড থেকে বাগবাজারের দিকে গাড়ি যেত। দুপুর একটার পর থেকে উল্টে যেত গাড়ি চলাচলের মুখ। গত রবিবার ভোর থেকে শুধুই বাগবাজার থেকে উত্তরমুখী গাড়ি যাচ্ছে।
কেন ওই উড়ালপুল দিয়ে সব সময়ের জন্য একমুখী যান চলাচলের সিদ্ধান্ত নেওয়া হল? স্থানীয়দের মতে, ওই উড়ালপুলে দু’দিকেই গাড়ি চলাচলের মতো জায়গা রয়েছে। তাঁদের মতে, নাগেরবাজার উড়ালপুল তেমন চওড়া নয়। তা সত্ত্বেও যখন সেখান দিয়ে একই সময়ে দ্বিমুখী গাড়ি যাচ্ছে, তা হলে লকগেট উড়ালপুল দিয়ে কেন সে ভাবে গাড়ি যাবে না? ইঞ্জিনিয়ারদের মতে, লকগেটে রয়েছে দু’টি বাঁক। সে কারণেই দু’দিকে গাড়ি চলাচল নিষিদ্ধ করা হয়েছে বলে মত প্রকাশ করছেন তাঁরা। কিন্তু ‘মা’ থেকে শুরু করে শহরের বেশিরভাগ উড়ালপুলেই রয়েছে কমবেশি বাঁক। তাই বাঁকের কারণে দু’দিকের গাড়ি চলাচল বন্ধ রাখতে হচ্ছে, এই ব্যাখ্যার যুক্তি পাচ্ছেন না অনেকেই।
পুলিশকর্তাদের ব্যাখ্যা, লকগেট উড়ালপুলে দু’দিকের যান চলাচল নিষিদ্ধ করার যথেষ্ট কারণ রয়েছে। এক পুলিশকর্তার মতে, ওই উড়ালপুলের রাস্তা ঢেউ খেলানো। এই ঢেউ খেলানো রাস্তার জন্যই উল্টো দিক থেকে আসা গাড়ি অনেক সময়ই চালক দেখতে পান না। ফলে উড়ালপুলে কোনও গাড়ি অন্য গাড়িকে ওভারটেক করতে গেলে উল্টো দিক থেকে আসা গাড়ির সঙ্গে মুখোমুখি সংঘর্ষের আশঙ্কা রয়েছে। উড়ালপুলের সামনে কর্তব্যরত এক পুলিশ অফিসারের মত, ‘‘উড়ালপুলটি এমন ভাবে তৈরি করা হয়েছে যা একসঙ্গে দ্বিমুখী গাড়ি চলাচলের জন্য কোনও ভাবেই উপযুক্ত নয়। এখন ওই উড়ালপুলে সেই ব্যবস্থা চালু করতে গেলে ডিভাইডার হিসাবে রাস্তার মাঝে ছোটো রেলিং দিতে হবে। যাতে উড়ালপুলে কোনও গাড়ি ওভারটেক করতে না পারে।’’ প্রশ্ন উঠেছে, উড়ালপুল তৈরির সময়ে কেন এই ঢেউ খেলানো রাস্তার বিষয়টি খতিয়ে দেখা হয়নি? এত গুরুত্বপূর্ণ উড়ালপুল দিয়ে তা হলে কি কোনও দিনই দ্বিমুখী গাড়ি যেতে পারবে না?
লকগেট উড়ালপুল দেখাশোনা করার দায়িত্বে রয়েছে হুগলি রিভার ব্রিজ কমিশনার্স বা এইআরবিসি। এইচআরবিসি-র চেয়ারম্যান শুভেন্দু অধিকারী বলেন, ‘‘মাঝেরহাট সেতু ভেঙে পড়ার পরে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশে সব সেতুর স্বাস্থ্য পরীক্ষা হচ্ছে। লকগেট উড়ালপুল দিয়ে নিরাপত্তার কারণেই হয়তো ওখানে যান চলাচল একমুখী করা হয়েছে। ভবিষ্যতে কী ভাবে গাড়ি চলবে তা বিশেষজ্ঞ কমিটিই বলতে পারবে।’’