অভিযুক্ত সাঁতারের প্রশিক্ষক এই সুরজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের জন্য অপমানিত অন্য সাঁতারু সুরজিৎ।—ফাইল চিত্র।
নামেও এসে যায়।
হাড়ে হাড়ে তা টের পাচ্ছেন দক্ষিণ এশীয় ফেডারেশন গেমসে ভারতে প্রথম সোনা এনে দেওয়া সাঁতারু সুরজিৎ ঘোষ। পদবি আলাদা হলেও ঘটনাচক্রে যৌন হেনস্থার অভিযোগে ধৃত এক সাঁতার প্রশিক্ষকের সঙ্গে তাঁর নাম, পেশা এবং বাড়ির এলাকা মিলে গিয়েছে। তার জেরেই প্রাক্তন সাঁতারু সুরজিৎবাবুর জীবন জেরবার হয়ে গিয়েছে। পরিচিত থেকে শুরু করে সোশ্যাল মিডিয়া— কটূক্তি ও গঞ্জনা ধেয়ে আসছে ৫১ বছরের ওই প্রাক্তন সাঁতারুর উদ্দেশে। আন্তর্জাতিক ও জাতীয় স্তরে একাধিক পদক ও পুরস্কার পেয়েছেন সুরজিৎ ঘোষ।
সম্প্রতি ছাত্রীকে যৌন হেনস্থার অভিযোগে গ্রেফতার হয়েছেন সাঁতারের প্রশিক্ষক সুরজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়। তিনি সাঁতারু সুরজিৎবাবুর থেকে অন্তত ১১ বছরের ছোট। ৫১ বছর বয়সী সাঁতারু সুরজিৎবাবু এবং ওই অভিযুক্ত সাঁতার প্রশিক্ষক— দু’জনেই বালির বাসিন্দা। সেখানকার কৈলাস ব্যানার্জি লেনের বাসিন্দা প্রৌঢ় সুরজিৎবাবুর দাবি, ‘‘নির্যাতিতা ছাত্রীটি সোশ্যাল মিডিয়ায় নিজের পোস্টে অভিযুক্তকে সুরজিৎ স্যর বলে উল্লেখ করেছেন। আর লোকে আমায় সেই অভিযুক্ত ভেবে গালাগালি করছেন। কারণ অনেকে আমাকে শুধুমাত্র সাঁতারু সুরজিৎ বলেই চেনেন।’’
পরিস্থিতি এমনই যে ‘আমি সে নই’ বলে একটি ভিডিয়ো তৈরি করে সেটি সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করে অসম্মানের হাত থেকে বাঁচতে চাইছেন প্রাক্তন সাঁতারু।
সেপ্টেম্বরের শুরুতে বালি নিশ্চিন্দার বাসিন্দা তথা গোয়ার সাঁতারের প্রশিক্ষক সুরজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রথম যৌন হেনস্থার অভিযোগ তোলেন হুগলির বাসিন্দা এক নাবালিকা ছাত্রী। পরে দিল্লি থেকে ওই প্রশিক্ষককে গ্রেফতার করে গোয়ার পুলিশ। প্রৌঢ় সাঁতারু সুরজিৎবাবু বলেন, ‘‘ঘটনাটি প্রকাশ্যে আসতেই হোয়াটসঅ্যাপ-সহ অন্যান্য সোশ্যাল মিডিয়ায় আমায় কটূক্তি করা শুরু হয়। দিন-রাত সেই ভুল শোধরাতে গিয়ে আমার প্রাণান্তকর অবস্থা। এক জন শুধরে নিলেও অন্য জন একই ভুল করছেন। সামাজিক সম্মানও নষ্ট হচ্ছে।’’
পূর্ব রেলের কর্মী ওই সাঁতারুর দাবি, ১৯৮৫ সালে দক্ষিণ এশীয় ফেডারেশন গেমসে ১৬ বছর বয়সে তিনি সোনা পেয়েছিলেন। কিন্তু কয়েকটি সংবাদমাধ্যমে সেই কৃতিত্ব অভিযুক্তের বলে লেখা হয়েছে। তিনি বলেন ‘‘ওই সময়ে ধৃত সুরজিতের বয়সই ছিল মাত্র ছয় বছর। বালির যে সাঁতার প্রশিক্ষণকেন্দ্রের সঙ্গে আমি যুক্ত ছিলাম, সেখানেই চার বছর বয়সে ভর্তি হয়েছিলেন ধৃত সুরজিৎ। দীর্ঘদিন সেখানে অনুশীলনের পরে অন্যত্র চলে যান ওই যুবক। তার পর থেকে আমার সঙ্গে ওঁর কোনও যোগাযোগ ছিল না।’’