গার্ডেনরিচের ভেঙে পড়া বহুতলের সামনে উদ্ধারকাজ চলছে। —নিজস্ব চিত্র।
গার্ডেনরিচে নির্মীয়মাণ বহুতল ভেঙে পড়ার ঘটনায় আরও এক জনকে গ্রেফতার করল কলকাতা পুলিশ। উত্তর দিনাজপুরের ইসলামপুর থেকে জমির মালিককে গ্রেফতার করা হয়েছে। এই নিয়ে গার্ডেনরিচের ঘটনায় ধৃতের সংখ্যা বেড়ে হল চার জন।
বৃহস্পতিবার পুলিশ যাঁকে গ্রেফতার করেছে, তাঁর নাম দিলনওয়াজ ওরফে রাজা। পুলিশ সূত্রে খবর, যে জমির উপর গার্ডেনরিচের ওই বহুতলটি তৈরি হচ্ছিল, সেটির অন্যতম মালিক এই দিলনওয়াজ। ঘটনার পর থেকে তিনি বেপাত্তা ছিলেন। কলকাতা পুলিশের একটি দল তাঁকে খুঁজতে ইসলামপুরে গিয়েছিল। বৃহস্পতিবার সেখান থেকেই গ্রেফতার করা হয় তাঁকে।
এর আগে গার্ডেনরিচের ঘটনায় জমির আরও এক মালিককে গ্রেফতার করেছিল পুলিশ। তাঁর নাম মহম্মজ সরফরাজ ওরফে পাপ্পু। এ ছাড়া, নির্মীয়মাণ বহুতলের প্রোমোটার মহম্মদ ওয়াসিম ওরফে ওয়াসিক এবং রাজমিস্ত্রি শেখ রিপনকেও গ্রেফতার করা হয়েছে। রিপন নিজে নির্মাণকাজের দায়িত্বে ছিলেন। পাশাপাশি, অন্যান্য শ্রমিকদের দেখাশোনার দায়িত্বও ছিল তাঁর উপরে।
গত ১৭ মার্চ রাতে গার্ডেনরিচের নির্মীয়মাণ পাঁচ তলা বহুতল ভেঙে পড়ে পাশের ঝুপড়ির উপর। সেই ঘটনায় এখনও পর্যন্ত ১৩ জনের মৃত্যু হয়েছে। ঘটনার পর থেকে নড়েচড়ে বসেছে কলকাতা পুরসভা। বিস্তর সমালোচনার মুখে পড়তে হয়েছে পুর প্রশাসনকেও। যে এলাকায় ওই বহুতল ভেঙে পড়েছে, পুরমন্ত্রী তথা কলকাতার মেয়র ফিরহাদ হাকিম সেখানকার বিধায়ক। তিনি নিজেই স্বীকার করে নিয়েছেন, বহুতলটি বেআইনি ভাবে তৈরি করা হচ্ছিল। ঘটনায় পুরসভার তরফে তিন জন ইঞ্জিনিয়ারকে শোকজ় করা হয়েছে। তাঁদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় তদন্তও শুরু হয়েছে। তদন্তে নেমে কলকাতা পুলিশ ওই বহুতল নির্মাণের ক্ষেত্রে কী কী ত্রুটি ছিল, তা জানতে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশেষজ্ঞদের নিয়োগ করেছে। গার্ডেনরিচের ঘটনার পর শহরের বুকে বেআইনি নির্মাণ নিয়ে ‘কেএমসি ওয়ার্ক ডায়েরি’ নামের একটি বিশেষ অ্যাপ তৈরির সিদ্ধান্ত নিয়েছে কলকাতা পুরপ্রশাসন। সেই অ্যাপ অবশ্য পুরসভার ব্যবহারের জন্যই। পুরসভা সূত্রে খবর, এই অ্যাপের সাহায্যে কলকাতা পুর এলাকায় বেআইনি নির্মাণ সংক্রান্ত যাবতীয় তথ্য এবং ছবি তুলে ওই অ্যাপে আপলোড করা হবে। অ্যাপে যে তথ্য এবং ছবি থাকবে, তা জোগান দিতে হবে পুরসভার ইঞ্জিনিয়ারদেরই। প্রতিদিন অফিস শুরুর সময় হাজিরা দিয়ে নিজ নিজ এলাকায় নির্মীয়মাণ বহুতল পরিদর্শনে বেরোবেন ইঞ্জিনিয়ারেরা। প্রতিটি নির্মাণস্থল ঘুরে দেখবেন। বেআইনি নির্মাণ নজরে পড়লেই দ্রুত সেই সংক্রান্ত তথ্য এবং ছবি আপলোড করতে হবে অ্যাপে।