dengue death

ডেঙ্গিতে আরও এক জনের মৃত্যু, ন’মাসে আক্রান্ত ২০ হাজার

চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে ২৮ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত মোট আক্রান্তের সংখ্যা ২০ হাজার ৩৩। গত এক সপ্তাহে নতুন করে ৪৭৪৪ জন আক্রান্ত হয়েছেন।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২২ ০৭:৫০
Share:

শুভ ব্রহ্ম ছবি সংগৃহীত

রাজ্যে ডেঙ্গি আক্রান্তের মোট সংখ্যা পৌঁছে গেল ২০ হাজারে! বৃহস্পতিবার মশাবাহিত ওই রোগ সংক্রান্ত ৩৯তম সপ্তাহের রিপোর্ট প্রকাশিত হয়েছে। স্বাস্থ্য দফতরের সেই অভ্যন্তরীণ রিপোর্টে দেখা যাচ্ছে, চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে ২৮ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত মোট আক্রান্তের সংখ্যা ২০ হাজার ৩৩। গত এক সপ্তাহে নতুন করে ৪৭৪৪ জন আক্রান্ত হয়েছেন। আক্রান্তের সংখ্যা যেমন বাড়ছে, তেমনই এই রোগে মৃত্যু-মিছিল থামারও কোনও লক্ষণ নেই।

Advertisement

গত বুধবার শহরে ফের ডেঙ্গিতে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু হয়েছে এক যুবকের। তাঁর নাম শুভ ব্রহ্ম (২৪)। ওই যুবক কলকাতা পুরসভার ১১৪ নম্বর ওয়ার্ডের পূর্ব পুটিয়ারির যে এলাকার বাসিন্দা, তার ঠিক পাশেই ১১৫ নম্বর ওয়ার্ডের পশ্চিম পুটিয়ারিতে মঙ্গলবার ডেঙ্গিতে মৃত্যু হয়েছিল এক বৃদ্ধার। সে দিন বাগুইআটির বাসিন্দা এক মহিলাও ডেঙ্গিতে মারা যান বলে জানা যাচ্ছে। সব মিলিয়ে চলতি বছরে এখনও পর্যন্ত রাজ্যে ডেঙ্গিতে মোট মৃতের সংখ্যা ২৫। যার মধ্যে শুধু কলকাতা পুর এলাকার বাসিন্দাই ১১ জন।

পূর্ব পুটিয়ারির বিষ্ণুপল্লির বাসিন্দা শুভ এম আর বাঙুর হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন। তাঁর ডেথ সার্টিফিকেটে ‘ডেঙ্গি শক সিন্ড্রোম’-এর উল্লেখ রয়েছে। শুভ বাবা-মায়ের একমাত্র সন্তান। একটি বেসরকারি সংস্থায় কাজ করতেন। সোমবার তাঁর জ্বর আসে। অবস্থার অবনতি হওয়ায় মঙ্গলবার রাতে এম আর বাঙুরে নিয়ে যাওয়া হয়। পরিবারের অভিযোগ, রাত দশটা নাগাদ শুভকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে শুধু ম্যালেরিয়া ও কোভিড পরীক্ষা করানো হয়। দু’টি পরীক্ষার রিপোর্টই নেগেটিভ আসায় রাত তিনটে নাগাদ হাসপাতাল থেকে তাঁকে ছেড়ে দেওয়া হয়।

Advertisement

শুভর জেঠতুতো দাদা সুব্রত ব্রহ্মের অভিযোগ, ‘‘আমরা চিকিৎসকদের ডেঙ্গি পরীক্ষার জন্য অনুরোধ করি। কিন্তু তাঁরা বলেন, ডেঙ্গি পরীক্ষা সকালে হয়। তাই বুধবার সকালে ফের যেতে বলা হয়। ওই রাতে ভাই দাঁড়াতেও পারছিল না। তা সত্ত্বেও ওকে ভর্তি না নিয়ে হাসপাতাল ছেড়ে দেয়। বুধবার সকাল ৯টা নাগাদ ওকে ফের হাসপাতালে ডেঙ্গি পরীক্ষার জন্য নিয়ে যাওয়া হয়।’’ সুব্রত জানান, শুভর শারীরিক অবস্থার আরও অবনতি হওয়ায় তাঁকে হাসপাতালে ভর্তি নেওয়া হয়। বিকেলে ডেঙ্গি পরীক্ষার রিপোর্ট পজ়িটিভ আসে। তাঁকে আইসিইউ-তে স্থানান্তরিত করা হয়। সেখানেই সন্ধ্যা সাতটা নাগাদ তিনি মারা যান।

মৃতের পরিবারের অভিযোগ সম্পর্কে এম আর বাঙুর কর্তৃপক্ষ বলেন, ‘‘হাসপাতালে রাতে ডেঙ্গি পরীক্ষার ব্যবস্থা নেই। সকালে সেই পরীক্ষা হয়। তাই রোগীকে বুধবার সকালে আসতে বলা হয়েছিল। সেই মতোই স্লিপে লিখে দেওয়া হয়।’’ সঙ্কটজনক হওয়া সত্ত্বেও রোগীকে মঙ্গলবার গভীর রাতে হাসপাতাল ছেড়ে দিল কেন? কর্তৃপক্ষের বক্তব্য, ‘‘এ নিয়ে রোগীর পরিবার লিখিত কোনও অভিযোগ করেনি। তা সত্ত্বেও পুরো বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে।’’

১১৪ নম্বর ওয়ার্ডের পূর্ব পুটিয়ারির বিষ্ণুপল্লির ঘরে ঘরে মানুষ ডেঙ্গিতে আক্রান্ত। লাগোয়া ১১৫ নম্বর ওয়ার্ডকে পুরসভা আগেই ‘অতিশয় ডেঙ্গিপ্রবণ’ বলে চিহ্নিত করেছে। সেই ওয়ার্ডে ইতিমধ্যেই তিন জনের মৃত্যু হয়েছে। বাসিন্দাদের অভিযোগ, টালিনালার এক দিকে ১১৪, অন্য দিকে ১১৫ নম্বর ওয়ার্ড। টালিনালা সাফাই হয় না বলেই এলাকায় ডেঙ্গির প্রকোপ বাড়ছে।

১১৪ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর বিশ্বজিৎ মণ্ডলের সাফাই, ‘‘সাধারণ মানুষই সচেতন নন। বাড়িতে জমা জলে লার্ভা মিলছে। পুরসভার তরফে নোটিস দেওয়া হচ্ছে। এলাকায় সাফাইকাজ নিয়মিত হয়।’’

অন্য দিকে, বিধাননগর পুরসভার বাগুইআটির কৃষ্ণপুর রাজবংশীপাড়ার বাসিন্দা অর্পিতা মণ্ডলকে ২৬ সেপ্টেম্বর বেলেঘাটা আইডি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল। পরের দিন তাঁর মৃত্যু হয়। ডেথ সার্টিফিকেটে সেপ্টিসেমিয়ার সঙ্গে ডেঙ্গির উল্লেখ রয়েছে। ৩৯তম সপ্তাহের রিপোর্টে দেখা যাচ্ছে, গত এক সপ্তাহে সব থেকে বেশি মানুষ আক্রান্ত হয়েছেন উত্তর ২৪ পরগনায়। সেখানে নতুন করে ১০১৮ জন আক্রান্ত হয়ে সংক্রমিতের মোট সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৩৬৫৭। তার পরেই কলকাতা। গত এক সপ্তাহে নতুন করে আক্রান্ত হয়েছেন ৬২১ জন। এখন মোট আক্রান্তের সংখ্যা ২১৪৬। হাওড়ায় গত এক সপ্তাহে ৫৫৯ জন আক্রান্ত হয়ে রোগীর মোট সংখ্যা ২৭৬৪। উদ্বেগে রয়েছে মুর্শিদাবাদ, হুগলি, দার্জিলিং, জলপাইগুড়িও। প্রতিটি জেলাতেই রোগীর সংখ্যা বাড়ছে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement