বিশ্বজিৎ চৌধুরী।
রাস্তায় ফেলে এক ব্যক্তিকে বেধড়ক মারধর ও ভারী কিছু দিয়ে মুখ থেঁতলে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছিল। সেই ঘটনার পাঁচ দিন পরে, বুধবার হাসপাতালে মৃত্যু হল নিগৃহীত ওই ব্যক্তির। খাস কলকাতার চেতলায় একাদশীর দিনের ওই ঘটনার তদন্তে নেমে পুলিশ মঙ্গলবার গ্রেফতার করে অভিযুক্তকে। যদিও ভোরে রাস্তায় ফেলে কাউকে মারধর করা হলেও তা কেন পুলিশের নজরে এল না, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে।
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, মৃতের নাম বিশ্বজিৎ চৌধুরী (৪৭)। তদন্তে নেমে চেতলা থেকেই সৌরভ দাস নামে এক যুবককে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। স্থানীয় সূত্রের খবর, চেতলা রোডের বাসিন্দা বিশ্বজিৎ পেশায় একটি বেসরকারি সংস্থার গাড়িচালক। তিনি নিয়মিত মদ্যপান করতেন। বাড়িতে আছেন তাঁর স্ত্রী এবং ছেলে। মেয়ের কয়েক বছর আগে বিয়ে হয়ে গিয়েছে। পরিবার সূত্রের খবর, একাদশীর ভোরে বাড়ি থেকে চা খেতে বেরিয়েছিলেন বিশ্বজিৎ। কিন্তু কিছু পরে বাড়ির অদূরেই রাস্তার পাশে তাঁকে রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখা যায়। তাঁর জামা-প্যান্ট ছেঁড়া ছিল, মুখে ভারী কিছু দিয়ে আঘাতের চিহ্ন ছিল। স্থানীয়েরা পুলিশে খবর দেওয়ার পাশাপাশি তাঁকে উদ্ধার করে এসএসকেএমে ভর্তি করেন। সে দিনই চেতলা থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করে পরিবার।
প্রাথমিক ভাবে পুলিশ অভিযোগ দায়ের করলেও প্রথমে সেটিকে দুর্ঘটনা বলে চালানোর চেষ্টা করে বলে দাবি করেছে বিশ্বজিতের পরিবার। যদিও তা মানতে চাননি পরিবারের লোকজন। এর পরে প্রতিবেশীরা দল বেঁধে থানায় গেলে ঘটনার তদন্ত শুরু করে পুলিশ। ঘটনাস্থলের আশপাশের সিসি ক্যামেরার ফুটেজ খতিয়ে দেখতেই বিশ্বজিৎকে মারধরের দৃশ্য সামনে আসে। ফুটেজে দেখা যায়, এক যুবক তাঁকে মাটিতে ফেলে, ভারী কিছু দিয়ে মারধর করছে। এর পরে বিশ্বজিতের পকেট থেকে কিছু বার করে নিয়ে ঘটনাস্থল থেকে চম্পট দেয় অভিযুক্ত। সেই ফুটেজের সূত্র ধরেই গ্রেফতার করা হয় সৌরভকে।
অন্য দিকে, হাসপাতালে চিকিৎসাধীন বিশ্বজিতের অবস্থার অবনতি হতে থাকে। তাঁকে সিসিইউয়ে স্থানান্তরিত করা হয়। বুধবার বিকেলে সেখানেই মৃত্যু হয় তাঁর। এর পরেই পুলিশের বিরুদ্ধে গাফিলতির অভিযোগ তোলেন তাঁর পরিবারের সদস্যেরা। বৃহস্পতিবার মৃতের মেয়ে মৌসুমী দাস চৌধুরী বলেন, ‘‘পুলিশ কোনও সহযোগিতা করেনি। দীর্ঘক্ষণ রাস্তায় পড়ে থাকলেও পুলিশ আসেনি। এমনকি এটাকে দুর্ঘটনা বলে চালিয়ে দেওয়ার চেষ্টাও করেছিল।’’ পুলিশ যদিও গাফিলতির অভিযোগ মানতে চায়নি। এক পুলিশকর্তা বলেন, ‘‘অভিযোগ পাওয়ার পরে সঙ্গে সঙ্গে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।’’
কিন্তু এই মারধরের কারণ কী? বিশ্বজিতের পরিবারের দাবি, পুজোর সময়ে কাজের জায়গা থেকেবোনাস বাবদ টাকা পেয়েছিলেন। সেই টাকা হাতিয়ে নিতেই এই ঘটনা। মৌসুমী বলেন, ‘‘প্রতি বছর বাবা বোনাস পেতেন। বেতনের টাকা বাড়িতে রাখলেও ওই টাকা বাবা নিজের কাছেই রেখেছিলেন।’’ পুলিশ সমস্ত অভিযোগ খতিয়ে দেখছে।
তদন্তে নেমে পুলিশ জানতে পেরেছে, অভিযুক্ত বিশ্বজিতের পূর্ব পরিচিত। ঘটনার দিন ভোরে তাঁরা একসঙ্গে বসে মদ্যপান করেছিলেন। সেখানেই কোনও বিষয় নিয়ে বচসা শুরু হয়। তার জেরেই সম্ভবত ওই ঘটনা। তবে কী নিয়ে বচসা, এবং শুধু বচসার জেরেই মারধর, নাকি এর পিছনে রয়েছে পুরনো কোনও শত্রুতা, তা খতিয়ে দেখছেন তদন্তকারীরা।