—প্রতীকী ছবি।
গোটা দেশ এখন নতুন নাগরিকত্বের আইন নিয়ে তোলপাড়। কে নাগরিক, কে শরণার্থী, কে অবৈধ অনুপ্রবেশকারী, এ সব নিয়েই চুলচেরা বিশ্লেষণ ও তর্ক চলছে। সরকারের মনোভাব স্পষ্ট, অনুপ্রবেশকারীরা ঘুসপেটিয়, তারা উইপোকার মতো দেশকে ভিতর থেকে কুরে কুরে ধ্বংস করে দিচ্ছে। শুধু আমাদের দেশেই নয়, ইউরোপ আমেরিকার বহু দেশই এখন শরণার্থীদের আশ্রয় দিতে অনাগ্রহী। সীমান্তে বেড়া দিয়ে, চেকপোষ্ট বসিয়ে নজরদারি কড়া করে শরণার্থীদের ঠেকানোর সবরকম চেষ্টা বাড়ছে। এর বিরুদ্ধে প্রতিবাদও থেমে নেই। এমনই একটি প্রতিবাদী আন্দোলনের কথা সম্প্রতি কলকাতায় শুনিয়ে গেলেন গ্রিসের সিটি প্লাজা আন্দোলনের অন্যতমা নেত্রী ওলগা লাফাজানি।
গ্রিসের থেসালি বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস, পুরাতত্ত্ব ও সামাজিক নৃতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপিকা ওলগা ছাত্রীজীবন থেকেই সক্রিয় রাজনৈতিক কর্মী এবং সে দেশে নতুন করে মাথাচাড়া দেওয়া ফ্যাসিবাদী শক্তির বিরোধিতায় সক্রিয়। শরণার্থীদের নিয়ে রাষ্ট্র ও সমাজের একটা বড় অংশের বিরূপ মনোভাবের বিরুদ্ধে জনমত গঠন করতে নেমে তিনি ও তাঁর সঙ্গীরা এই সিটি প্লাজা আন্দোলনের জন্ম দেন, যা ইউরোপ ও বিশ্বের অন্যত্র ব্যাপক সাড়া জাগায়। ক্যালকাটা রিসার্চ গ্রুপ (সি আর জি) এর উদ্যোগে ও রোজা লুক্সেমবার্গ স্টিফটুং এর সহায়তায় সম্প্রতি যে পাঁচদিন ব্যাপী সম্মেলন হয়ে গেল, সেখানেই অংশ নিতে এসেছিলেন তিনি। এর মূল উদ্দেশ্যই ছিল শরণার্থী ও অভিবাসী মানুষদের নিরাপত্তার ব্যাপারে বিশ্বজুড়ে কী ধরনের ব্যবস্থা রয়েছে তা খতিয়ে দেখা ও আলোচনার মাধ্যমে নতুন দিশা দেখানোর চেষ্টা করা। সেখানে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে ওলগা যে গ্রিসের সিটি প্লাজা আন্দোলনের কথা বলবেন, তার চাইতে ভালে আর কী হতে পারে!
স্লাইড, ছবি ও ভিডিও সহযোগে ওলগা দেখান, রাজধানী আথেন্সের কেন্দ্রস্থলে অবস্থিত সিটি প্লাজা একটি হোটেল যা ২০১৪ সালের আর্থিক মন্দার জেরে বন্ধ হয়ে পড়ে ছিল। এ দিকে সীমান্তে শরণার্থীরা আসতে শুরু করে সিরিয়া, আফ্রিকার বিভিন্ন দেশ থেকে।এমনকি ইউরোপের তুরস্ক থেকেও। সরকার এদের ডিটেনশন সেন্টারে নিয়ে যেতে বদ্ধপরিকর। এই অবস্থায় ওলগারা ওই সিটি প্লাজা জবরদখল করে সেখানে বেশ কিছু শরণার্থীর থাকার ব্যবস্থা করেন। এই ঘটনায় অনেকে এই কলকাতায় ও আশপাশের বহু অব্যবহৃত বা খালি বাগানবাড়িতে উদ্বাস্তুদের জবরদখল কলোনি তৈরির ঘটনার ছায়া দেখলে অবাক হওয়ার কিছু নেই। কারণ, আশ্রয়ের খোঁজে মরিয়া শরণার্থীরাও দেশে দেশে একই রকম মরিয়া। কিন্তু এখানে ব্যতিক্রমী ঘটনা হল, ওলগারা শরণার্থী নন, তবু তাঁরাই উদ্যোগী হয়ে ওই শরণার্থীদের ডেকে এনে সিটি প্লাজা দখল করে তাদের আশ্রয়ের ব্যবস্থা করেছেন। রাষ্ট্র ও সমাজের প্রতিকূলতার বিরুদ্ধে লড়েছেন। সেই সঙ্গে শরণার্থীদের খাওয়ার ব্যবস্থা, তাদের জীবনযাপনের ক্ষেত্রে মর্যাদা ফিরিয়ে দেওয়ার কাজটুকু করেছেন। ওলগা জানিয়েছেন, তাঁদের সিটি প্লাজা আন্দোলনের খবর ইউরোপে ছড়িয়ে পড়ার পরে বহু দেশের মানুষ অর্থ দিয়ে সাহায্য করেছেন। গ্রিসের মানুষরাও এসেছেন।
আরও পড়ুন:রাষ্ট্রপুঞ্জ গণভোট করাক ভারতে: মন্তব্য মমতার, তীব্র নিন্দায় বিজেপি
আরও পড়ুন:কলকাতা সমেত ১১ জেলায় শৈত্যপ্রবাহের সতর্কতা, হাড়কাঁপানো ঠান্ডা থাকবে রাজ্য জুড়ে
শুধুই আথেন্সে নয়, এই আন্দোলনের ঢেউ ছড়িয়ে পড়ে গ্রিসের অন্য শহরেও, গ্রিসের মানুষ এবার বেশি করে পাশে দাঁড়াতে শুরু করেন শরণার্থীদের পাশে। এর সঙ্গেই মিলিয়ে দেখা যেতে পারে গ্রিসে তুলনায় বামপন্থী মনোভাবাপন্ন সরকারের ক্ষমতায় ফেরা ও শরণার্থীদের সম্পর্কে নমনীয় দৃষ্টিভঙ্গি গ্রহণের বিষয়টিকে। গ্রিসের একটি শহরের মেয়র তো প্রকাশ্যেই দাবি করলেন, শরণার্থীরা মোটেই দেশের বোঝা নন, তাঁরাও সম্পদ হতে পারেন। বস্তুত, সিআরজি-র গোটা কনফারেন্স জুড়ে বার বার এ কথাই প্রতিধ্বনিত হয়েছে ইথিওপিয়া থেকে আসা গবেষক ইয়রদানোস সইফু, শ্রীলঙ্কার জীবন ত্যাগরাজা, বাংলাদেশের মেঘনা গুহঠাকুরতা, আফগানিস্থানের মুজিব আহমদ আজিজি ও ওরজালা নেমাত এবং প্যালেস্তাইনের লুসি নুসিবের মতো অনেকের কথায়।