চরণদাসী মণ্ডল
ঘরের ভিতরে কোমর সমান জলে চৌকির উপরে বসে রয়েছেন নব্বই বছরের বৃদ্ধা। আর বেশিক্ষণ ঘরে থাকলে চৌকিও ভেসে যেতে পারে। এই অবস্থায় দক্ষিণ দমদমের মানসীপাড়ার জলমগ্ন পরিস্থিতি থেকে বৃদ্ধাকে উদ্ধার করলেন স্থানীয় কয়েক জন যুবক। বৃদ্ধার অভিযোগ, পিছনের বাড়িতেই স্ত্রী, ছেলে-মেয়েকে নিয়ে ছোট ছেলের সংসার। ভারী বৃষ্টিতে মা কী অবস্থায় রয়েছেন তা খোঁজ নেওয়ার প্রয়োজন বোধ করেননি সন্তান!
বৃহস্পতিবার রাতের ভারী বৃষ্টিতে সোনাই খাল উপচে জলমগ্ন হয়ে পড়ে দক্ষিণ দমদমের মানসীপাড়া। শুক্রবার দুপুরে চরণদাসী মণ্ডলকে উদ্ধার করেন স্থানীয় একটি ক্লাবের কয়েকজন যুবক। কাঁঠালতলার ওই ক্লাবের এক সদস্য তপু বিশ্বাস বলেন, ‘‘বৃদ্ধা জানান, ছেলের ঘর উঁচু জমিতে। মা জলের মধ্যে কেমন আছে, তা একবার দেখতেও আসেনি। ঘরের মধ্যে থাকা যাচ্ছে না। খিদেও পেয়েছে।’’
এ কথা শুনে বৃদ্ধাকে ক্লাবে নিয়ে আসার সিদ্ধান্ত হয়। আসার সময়ে প্রতিবেশীদের জানানো হয়, ছেলে এলে তাঁকে যেন কাঁঠালপাড়ার ক্লাবে পাঠানো হয়। সেখানেই বৃদ্ধা আপাতত থাকবেন। স্থানীয় যুবকদের দাবি, রবিবার দুপুর পর্যন্ত মায়ের খোঁজ নেননি ছেলে। বৃদ্ধা বলেন, ‘‘বাড়ি দানপত্র করে দিয়েছি বলে পর হয়ে গিয়েছি! কষ্ট করে আমিই তো ওদের মানুষ করেছি, লেখাপড়া শিখিয়েছি। মায়ের সঙ্গে এই ব্যবহার!’’
তাঁর বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ প্রসঙ্গে সম্পত্তিজনিত কারণই সামনে এনেছেন ছোট ছেলে পরিতোষ মণ্ডল। তাঁর অভিযোগ, ‘‘মা মিথ্যা অপবাদ দেন। দাদাকে সব দিয়ে আমাকে নিঃস্ব করে দিয়েছেন! আমার সঙ্গে উনি থাকতে চান না।’’ উল্টো দিকে বড় ছেলে শৈলেন মণ্ডলের বক্তব্য, ‘‘সম্পত্তি নেওয়ার পরে মায়ের খরচ দেওয়ার কথা ছোট ভাইয়েরও। কিন্তু ওরা তা করে না।’’
আর মা বলছেন, ‘‘ছেলেদের কোনও ক্ষতি যেন না হয়। আর ক’দিনই বা বাঁচব!’’