রাধে চৌরাসিয়া। —নিজস্ব চিত্র।
সাত বছর কোনও খোঁজ না মেলায় ভারতীয় সেনাবাহিনীর নিয়ম অনুযায়ী একটি পুতুল দাহ করে তাঁর অন্ত্যেষ্টি সম্পন্ন করা হয়েছিল। এ দিকে, কলকাতার কাছে ব্য়ারাকপুরে সেনা এলাকার আশপাশেই দেখা মিলত এক বৃদ্ধ ভবঘুরের। মুখ ভর্তি দাড়ি-গোঁফ, মুখে হিন্দি বুলি। অল্পেই রেগে যেতেন, তবে কেউ খাবার দিলে তাঁর উদ্দেশে স্যালুট জানাতে ভুলতেন না। স্যালুটে ছিল সেনাকর্মীর আদবকায়দার ছোঁয়া। আর সেই কায়দাই তাঁকে দীর্ঘ ২৪ বছর পরে পরিবারের কাছে ফেরাতে সাহায্য করল।
সত্যজিৎ রায়ের গল্পে এক অভিজাত পরিবারের ছেলে স্মৃতি হারিয়ে ফটিকচাঁদ নামে এক জাগলারের সহযোগী হয়ে ময়দানে খেলা দেখাত। স্মৃতি হারিয়ে রাধে চৌরাসিয়া নামে ওই বৃদ্ধও ব্যারাকপুরে পথবাসী হয়ে দিন কাটাচ্ছিলেন। খাবার না জুটলে আঁস্তাকুড় ঘেঁটে উচ্ছিষ্টও কুড়িয়ে খেতেন বর্তমানে ৮০ বছরে পা দিতে যাওয়া রাধে।
দীর্ঘ ২৪ বছর পরে বাবার খোঁজ পেয়ে আবেগপ্রবণ তাঁর ছেলে রাজকুমার চৌরাসিয়া। তিনি জানান, ১৯৯৯ সালে রাধে অসমের তেজপুরে সেনাবাহিনীর এমইএস বিভাগে কর্মরত ছিলেন। বাড়ি ছিল উত্তরপ্রদেশের গোরক্ষপুরের পাশে দেউড়িয়া জেলায়। রাজকুমার তখন ১৫ বছরের কিশোর। তিনি বলেন, ‘‘তখন তো টেলিফোনের ব্যবহার ততটা ছিল না। বাবা ছুটিতে আসার আগে চিঠি পাঠাতেন। ওই বছর জানুয়ারিতে বাবা আসবেন বলে চিঠি এল। কিন্তু বাবা এলেন না। আমরা ভাবলাম, হয়তো ছুটি বাতিল হয়ে গিয়েছে। পরে দফতর থেকে চিঠি এল যে, বাবা ছুটি নিয়ে তার পরে আর কাজে যোগ দেননি। কোথাও বাবার খোঁজ মেলেনি। সাত বছর কাটার পরে সেনাবাহিনীর নিয়ম মেনে একটা পুতুলকে বাবা ভেবে তাঁর পারলৌকিক কাজও করেছি।’’ বর্তমানে বিহারে কৃষি দফতরের কর্মী রাজকুমার। তিনি জানান, তাঁর মা জীবিত থাকলে খুব খুশি হতেন। স্বামীর দেহ না দেখলেও বছর ১৭ আগে মাকে মেনে নিতে হয়েছিল যে, তিনি জীবিত নেই। রাজকুমার বলেন, ‘‘বাবা জীবিত থাকলেও মা শেষ জীবনে তাঁর মৃত্যুশোক বয়ে বেড়িয়েছেন।’’
একটি হ্যাম রেডিয়ো সংগঠনের সম্পাদক অম্বরীশ নাগ বিশ্বাস বলেন, ‘‘বৃদ্ধকে খাবার দেওয়ার সময়ে আমি তাঁর সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করতাম। এক দিন দেউড়িয়া জেলার কথা বললেন উনি। ইন্টারনেটে খুঁজে দেখলাম, জেলার নামটা ঠিক। পরে জানতে পারি, মেয়ের নাম অনিতা, উনি ডাকতেন সীতা। তবে সব চেয়ে বড় ক্লু ছিল, সেনাদের মতো ওঁর স্যালুট করার কায়দা।’’ ওই সংগঠন জানাচ্ছে, বৃদ্ধের স্যালুট করার তথ্য আর জেলার নাম তাঁদের উত্তরপ্রদেশের সদস্যদের পাঠানোর পরে রাধের পরিচয় উদ্ধার হয়।