ছবি: সংগৃহীত।
গার্ডেনরিচকাণ্ডের ১৫ দিনের মাথায় আবার বাড়ি ভেঙে পড়ল কলকাতায়। এ বার ঘটনাস্থল উত্তর কলকাতার বৌবাজারে। মঙ্গলবার সকালে বৌবাজারের রামকানাই অধিকারী লেনের একটি পুরনো বাড়ির দেওয়াল সমেত ঘরের একাংশ আচমকা হুড়মুড়িয়ে ভেঙে পড়ে। ক্ষতিগ্রস্ত বাড়ির ক্ষুব্ধ বাসিন্দাদের অভিযোগ, নিয়ম না মেনে পাশের বাড়ির প্রোমোটারির জন্যই মূল্য দিতে হল তাঁদের।
ঠিক ১৫ দিন আগে, গত ১৭ মার্চ রাতে দক্ষিণ কলকাতার গার্ডেনরিচ এলাকায় ভেঙে পড়েছিল একটি নির্মীয়মাণ বহুতল। সেই ঘটনায় ১২ জনের মৃত্যু হয়। দিন কয়েক আগে দমদমের কাছে বিরাটিরও একটি বাড়ির কার্নিস ভেঙে মারা যান এক জন। আর এ বার উত্তর কলকাতার বৌবাজারেও ভেঙে পড়ল বাড়ি। এলাকাবাসীর অভিযোগ, পুরনো ওই বাড়ির লাগোয়া বাড়িতে প্রোমোটারির কাজ চলছিল। ভাঙা হচ্ছিল সেই বাড়িটি। কাজ চলাকালীনই মিস্ত্রিরা তাঁদের বাড়ির দেওয়ালেও আঘাত করেন। অভিযোগ, তাতেই দেওয়াল সমেত ঘর হুড়মুড়িয়ে ভেঙে পড়ে।
ওই বাড়ির বাসিন্দা এক মহিলা জানিয়েছেন, ঘটনাটি যখন ঘটে তখন তিনি রান্না করছিলেন। তাঁর কথায়, ‘‘হঠাৎই থরথর করে কেঁপে ওঠে গোটা বাড়ি। দেখি গ্যাসের আগুনও দপ দপ করে নিভে গেল। তার পরেই বিরাট আওয়াজ।’’ ওই মহিলাই জানিয়েছেন, তিনি এই ঘটনার কিছু ক্ষণ আগেই মিস্ত্রিদের বাড়ির দেওয়াল নিয়ে সতর্ক করেছিলেন। তাঁর কথায়, ‘‘ওদের বলেছিলাম, পুরনো বাড়ি টানাটানি করবে না। তার পরও শোনেনি। আওয়াজ পেয়ে দৌড়ে গিয়ে দেখি। ঘর শুদ্ধু ভেঙে পড়েছে।’’
মঙ্গলবার সকালে এই ঘটনার কিছু ক্ষণের মধ্যেই এলাকায় পৌঁছে যায় পুলিশ। পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, বাড়িটি ভেঙে পড়লেও কেউ আহত হননি। তবে কিছু ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। সূত্রের খবর, ভেঙে পড়া বাড়িটি বহু পুরনো আমলের। যদিও বাসিন্দাদের দাবি, পুরনো হলেও এই বাড়ি নিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণ করা হয়। তাই বাড়িটি ভঙ্গুর ছিল না। বাড়ির পাশে নিয়ম না মেনে বাড়ি ভাঙার কাজ চলছে বলেই কাণ্ডটি ঘটেছে।
এমনকি, বাসিন্দারা এমনও জানিয়েছেন বিষয়টি তাঁরা বার বার স্থানীয় কাউন্সিলরকে জানিয়েছেন। কিন্তু তার পরও বাড়ি ভাঙার ব্যাপারে কোনও সাবধানতা অবলম্বন করা হয়নি।
এই ঘটনায় আনন্দবাজার অনলাইনের তরফে ফোন করা হয়েছিল এলাকার কাউন্সিলর বিশ্বরূপ দে-কে। তিনি অবশ্য বলেন, ‘‘বাড়ি বানানোর অনেক নিয়ম আছে। কিন্তু বাড়ি ভাঙার কিছু নিয়ম আছে কি?’’ তাঁর কথায়, বৌবাজারের ওই এলাকার বাড়িটি ভেঙে একটি চার তলা বাড়ি তৈরির পরিকল্পনা করা হয়েছিল। বিশ্বরূপ সে বিষয়ে জানতেনও। তিনি বলেন, ‘‘কাজ শুরু হওয়ার পর এলাকার মানুষ আমার কাছে অভিযোগ জানায়। আমি আমার দায়িত্বের বাইরে গিয়ে প্রোমোটার এবং বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলি। বৈঠকও করি। কিন্তু বাড়ি ভাঙার ক্ষেত্রে কোনও নিয়ম মানা হয়নি, তা জানতে হবে। আপাতত আমি বিষয়টি পুরসভা কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছে। তাঁরা গোটা বিষয়টি খতিয়ে দেখছেন। যাঁদের বাড়ি ভেঙেছে তাঁদের দিকটিও খতিয়ে দেখা হবে।’’