একজোট: আড্ডায় এ শহরের তরুণীরা। রবিবার, পার্ক স্ট্রিটে। নিজস্ব চিত্র
জীবনের প্রথম গোপন ইচ্ছে কী ছিল? হস্তমৈথুন সম্পর্কে প্রথম কবে জানলেন? একই লিঙ্গের কাউকে কখনও পছন্দ হয়েছে? সঙ্গী ছাড়া আর কাউকে কখনও ভাল লেগেছে?
মেয়েদের গোপন ইচ্ছে, যৌন সংসর্গ, আত্মতৃপ্তি নিয়ে খোলামেলা আড্ডায় চিরকুটে লেখা ছিল এই প্রশ্নগুলিই। যা পড়ে উপস্থিত জনা কুড়ি কলেজছাত্রীর কেউ হেসে কুটোপাটি, কেউ লজ্জায় লাল। কারও স্বীকারোক্তি, বিয়ের আগে যৌন সম্পর্কের কথায় আগে নাক কুঁচকোতেন তিনি। কেউ আবার অকপটে বলছেন, নিজের গোপন ইচ্ছে নিয়ে লজ্জিত নন। এ ভাবেই রাখঢাক না করে মেয়েদের ‘ফ্যান্টাসি’ এবং যৌনতা নিয়ে এ শহরে প্রথম প্রকাশ্যে কথা বলার সুযোগ করে দিল ‘ওহ্ মাই হৃতিক’।
ধরেই নেওয়া হয়, এ দেশে মেয়েদের গোপন যৌন ইচ্ছে বা আত্মতৃপ্তির ভাবনা সামাজিক ভাবে নিষিদ্ধ, কলঙ্কস্বরূপ। কিন্তু গোপনীয়তা দূর করে এ নিয়ে যে স্বাভাবিক আলোচনার প্রয়োজন আছে, তা বুঝেছিলেন মুম্বইয়ের পাঁচ কলেজছাত্রী— কৃতী কুলশ্রেষ্ঠা, সুপর্ণা দত্ত, বৈশালী মানেক, কেভিকা সিঙ্গলা এবং মানসী জৈন। তাই গত ৬ মার্চ সোশ্যাল মিডিয়ায় তাঁরা তৈরি করেন কথা বলার প্ল্যাটফর্ম— ‘ওহ্ মাই হৃতিক’, যেখানে সমালোচনা ও বাঁকা মন্তব্যকে দূরে সরিয়ে নিজেদের ইচ্ছে-আনন্দ-অভিজ্ঞতাকে ভাগ করে নিতে পারেন মেয়েরা। তবে শুধু এটুকুই নয়। নীরবতা ভাঙতে দিল্লি-জয়পুর-মুম্বইয়ে মেয়েদের সঙ্গেও মুখোমুখি কথা বলেছেন এই তরুণীরা। রবিবার তাঁদের গন্তব্য ছিল কলকাতা।
কেন কলকাতা? এ শহরেরই মেয়ে সুপর্ণার কথায়, ‘‘অনেক মেয়ে তাঁদের গোপন ইচ্ছে নিয়ে অবসাদ এবং উৎকণ্ঠায় ভোগেন। সামাজিক ও পারিবারিক শিক্ষার প্রভাবে ভাবতে শুরু করেন, হয়তো তাঁরই কোনও সমস্যা আছে। আসলে আমাদের এমন ভাবেই বড় করা হয়। কলকাতাও এর ব্যতিক্রম নয়। তাই এ নিয়ে কথা বলে এ শহরের ১৮ থেকে ২৪ বছর বয়সি মেয়েদের কাছে প্রসঙ্গটি স্বাভাবিক করে তোলাই আমাদের লক্ষ্য।’’ রবিবারের ঘরোয়া আড্ডায় উপস্থিত বৈশালী জানাচ্ছেন, এ নিয়ে নিজেকে বা অন্যদের ‘খারাপ’, ‘চরিত্রহীন’ ভাবা বন্ধ করার মানসিকতা বদলে দিতেই তাঁদের এই প্রয়াস। বৈশালীর সাফ কথা— ‘‘নারীর ক্ষমতায়ন, নারীশিক্ষা নিয়ে এত কথা হলে এ নিয়েই বা নয় কেন! এটাও তো মেয়েদের প্রয়োজনের মধ্যেই পড়ে।’’
মুম্বইয়ের কলেজ ক্যান্টিনে আড্ডা থেকে এই প্ল্যাটফর্ম তৈরির ভাবনার সূত্রপাত। বছর উনিশের কৃতী-সুপর্ণারা জানাচ্ছেন, কলেজে এক ছাত্রী হস্তমৈথুনের অভিজ্ঞতা বলতে শুরু করেছিলেন। দেখা যায়, বাকিরা বেশ অস্বস্তিতে পড়ছেন। তার পরেই সোশ্যাল মিডিয়ায় শুরু হয় ‘ওহ্ মাই হৃতিক’। ইতিমধ্যেই ইনস্টাগ্রামে ফলোয়ারের সংখ্যা আট হাজার ছাড়িয়েছে। কেন হৃতিক? কৃতীর কথায়, ‘‘হৃতিক রোশন অনেকেরই স্বপ্নের পুরুষ। তাই গড-এর বদলে বলিউডের গ্রিক গড-এর নাম বেছে নিয়েছি।’’
আর এ শহরের তরুণীরা? সেন্ট জেভিয়ার্সের তৃতীয় বর্ষের ছাত্রী, পটনার দিয়া মজুমদার বন্ধুদের নিয়ে এসেছিলেন এই আড্ডায়। বলছেন, ‘‘পটনার মতো ছোট শহরে সমকামী কথাটা পর্যন্ত শুনতে পাই না। গোপন ইচ্ছে নিয়ে কথা বলা তো অনেক দূর! তাই ছোট শহরগুলির মানসিকতা বদলাতে সেখানে এমন অনেক আলোচনার প্রয়োজন আছে।’’ সিকিমের মেয়ে, জেভিয়ার্সের ছাত্রী অ্যানাস্টেসিয়া বমজানের প্রতিক্রিয়া, ‘‘স্কুলে ও বাড়িতে যৌন শিক্ষার প্রয়োজন। সেটা সম্ভব না হলে এই সঙ্কীর্ণ মানসিকতা থেকে মুক্তি নেই।’’
তবে দিনের শেষে সকলের এক কথা— ‘ছেলেরা তাদের যৌন ইচ্ছে-চাহিদা নিয়ে কথা বলতে পারলে, আমরাই বা পারব না কেন?’