Parking Fees

পার্কিং ফি বৃদ্ধির পরও তা প্রত্যাহার করায় আরও বেশি ঘাটতির আশঙ্কা কলকাতা পুরসভায়

করোনা-পর্বে কর আদায়ের নিরিখে পুরসভার অন্যান্য বিভাগের তুলনায় পার্কিং বিভাগ সব থেকে কম আয় করেছিল। ২০২০ সালের আগে প্রতি বছর গড়ে পার্কিং বাবদ আদায় হত প্রায় ১৮ কোটি টাকা।

Advertisement

মেহবুব কাদের চৌধুরী

কলকাতা শেষ আপডেট: ১৩ এপ্রিল ২০২৩ ০৬:৫৬
Share:

২০২০ সালের আগে প্রতি বছর গড়ে পার্কিং বাবদ আদায় হত প্রায় ১৮ কোটি টাকা। ফাইল ছবি।

পার্কিং-ফি বাড়ানোর ফলে আয় বাড়বে এবং আয় বাড়লে কোষাগারের ‘ভাঁড়ে মা ভবানী’ দশা কিছুটা হলেও ঘুচবে, এমনটাই মনে করেছিলেন কলকাতা পুরসভার কর্তারা। সেই মতো সারা বছরে পার্কিং থেকে কত আয় হতে পারে, সেই সমস্ত হিসাবনিকাশ করতেও শুরু করেছিলেন তাঁরা। কিন্তু, উপরমহলের চাপে সেই বর্ধিত পার্কিং-ফি প্রত্যাহৃত হওয়ায় হতাশ পুরসভার পার্কিং বিভাগের আধিকারিকেরা। তাঁরা বলছেন, চলতি অর্থবর্ষে আয় বাড়ানোর ক্ষেত্রে আর কোনও দিশা দেখতে পাচ্ছেন না তাঁরা।

Advertisement

গত ১৭ মার্চ ২০২৩-’২৪ অর্থবর্ষের পুর বাজেট বিবৃতিতে মেয়র ফিরহাদ হাকিম পার্কিং-ফি বাবদ আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা রেখেছিলেন ১০০ কোটি টাকা। তা ঠিক হয়েছিল বর্ধিত হারে পার্কিং-ফির কথা মাথায় রেখেই। পুরসভার এক শীর্ষ কর্তার কথায়, ‘‘বর্ধিত ফি প্রত্যাহার করায় পুনরায় মেয়র পরিষদের বৈঠক ও পুর অধিবেশনের মধ্যে দিয়ে বাজেট বিবৃতি সংশোধন করতে হবে। পুর বাজেটে ঘাটতির পরিমাণ আরও বাড়ার আশঙ্কা প্রবল হল।’’

করোনা-পর্বে কর আদায়ের নিরিখে পুরসভার অন্যান্য বিভাগের তুলনায় পার্কিং বিভাগ সব থেকে কম আয় করেছিল। ২০২০ সালের আগে প্রতি বছর গড়ে পার্কিং বাবদ আদায় হত প্রায় ১৮ কোটি টাকা। সেখানে ২০২০-’২১ অর্থবছরে আদায় হয়েছিল মাত্র ন’কোটি টাকা। এর পরে ২০২১-’২২ অর্থবছরে আদায় হয় ১১ কোটি টাকা। ২০২২-’২৩ অর্থবছরে সেই আয় বেড়ে হয় ২০ কোটি টাকা। অর্থাৎ, চলতি অর্থবছরে পার্কিং-ফি বাবদ আদায় গত অর্থবছরের পাঁচ গুণ বেশি হতে পারে ভেবে তেমনই লক্ষ্যমাত্রা রেখেছিলেন মেয়র। কিন্তু, পার্কিং-ফি প্রত্যাহার করায় বাজেট বিবৃতিও দ্রুত সংশোধন করতে হবে। পার্কিং বিভাগ সূত্রের খবর, আর্থিক সঙ্কট থেকে বেরিয়ে আসতেই ফি বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন পুর কর্তৃপক্ষ। চলতি অর্থবর্ষে পার্কিং লটের সংখ্যা বাড়ানোরও পরিকল্পনা রয়েছে পার্কিং বিভাগের। তবে, শেষমেশ পার্কিং-ফি না বাড়ায় পার্কিং লট বাড়ানোর খরচ কোথা থেকে আসবে, তা নিয়ে চিন্তায় পড়েছেন আধিকারিকদের একাংশ। পার্কিং বিভাগের এক আধিকারিকের কথায়, ‘‘পার্কিং লট বাড়ানোর খরচ পার্কিং-ফি আদায় থেকে আসবে, এমনটাই ভাবা হয়েছিল। এখন ওই বিপুল টাকা কোথা থেকে জোগাড় হবে, জানি না। সবটাই অনিশ্চিত হয়ে পড়ল।’’

Advertisement

বর্ধিত পার্কিং-ফি প্রত্যাহার করায় ওই বিভাগের আয় বৃদ্ধির বিষয়টিও যে অনিশ্চিত হয়ে পড়ল, বার বারই সেই আক্ষেপ করছেন পুরসভার আধিকারিকেরা। পুরসভার কোষাগারের অবস্থা এমনিতেই সঙ্গিন। তাই আয় বাড়াতে বিভিন্ন বিভাগকে সক্রিয় হতে আগেই নির্দেশ দিয়েছিলেন মেয়র। পুর কর্তৃপক্ষের আশা ছিল, পার্কিং-ফি বাড়ায় আয়ও যথেষ্ট বাড়বে। কিন্তু, তা না হওয়ায় হতাশ বিভাগের কর্মী ও আধিকারিকেরা। ইতিমধ্যেই অনলাইনে পার্কিং-ফি আদায় করতে উদ্যোগী হয়েছে পুর প্রশাসন। যদিও নগদহীন আদায় নিয়ে অনেকের ক্ষোভ রয়েছে। এ নিয়ে পুরসভায় অনেক অভিযোগও আসছে। কারণ, নাগরিকদের একাংশ এখনও অনলাইন লেনদেনে স্বচ্ছন্দ নন।

অনলাইনে পার্কিং-ফি আদায় করতে পার্কিং সংস্থার কর্মীদের ‘ই-পস’ যন্ত্র দিয়েছে পুরসভা। মেয়র পারিষদ (পার্কিং) দেবাশিস কুমার গত মাসে বাজেট আলোচনায় জানিয়েছিলেন, কয়েক মাসের মধ্যেই শহরের সমস্ত পার্কিং লটে অনলাইনে ফি আদায় চালু হয়ে যাবে। যদিও প্রশ্ন উঠেছে, বর্ধিত পার্কিং-ফির পরে অনলাইনে পার্কিং-ফি আদায়ের পরিকল্পনাও বুমেরাং হয়ে যাবে না তো পুর কর্তৃপক্ষের কাছে? মেয়র পারিষদ (পার্কিং) বুধবার বলেন, ‘‘হতেই পারে। তবে, অনলাইনে পার্কিং-ফি আদায় নিয়ে কোনও অভিযোগ আমার কাছে আসেনি। এলে নিশ্চয়ই খতিয়ে দেখব।’’ গত মাসে বাজেট বিবৃতিতে মেয়র জানিয়েছিলেন, ২০২৩-’২৪ অর্থবছরে ঘাটতির পরিমাণ দাঁড়াবে ২১৭১.৯৬ কোটি টাকা। বর্ধিত পার্কিং-ফি প্রত্যাহার হওয়ায় সেই ঘাটতির পরিমাণ আরও বেড়ে গেল বলে মনে করছেন পুরসভার অর্থ বিভাগের আধিকারিকেরা।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement