প্রতীকী ছবি।
করোনা সংক্রমণে শীর্ষে। তার সঙ্গে ধীরে হলেও প্রাদুর্ভাব ছড়াতে শুরু করেছে ডেঙ্গি এবং ম্যালেরিয়া। রোগের ত্র্যহস্পর্শ প্রসঙ্গে কলকাতা পুরসভার স্বাস্থ্য আধিকারিকদের একাংশের বক্তব্য, কোভিড পরিস্থিতি একাধিক চ্যালেঞ্জের মুখে দাঁড় করিয়ে দিয়েছে কলকাতা পুরসভার স্বাস্থ্য পরিকাঠামোকে। সেই সমস্যাগুলির দ্রুত সমাধান না করতে পারলে ভবিষ্যতে উদ্বেগের যথেষ্ট কারণ রয়েছে বলে জানাচ্ছেন তাঁরা।
কলকাতা পুরসভা সূত্রের খবর, ২০১৯ সালের ২৮ জুন পর্যন্ত ভাইভ্যাক্স এবং ফ্যালসিপেরাম ম্যালেরিয়ায় আক্রান্তের সংখ্যা ছিল যথাক্রমে ১৩৮৭ এবং ৩৮। দু’ধরনের ম্যালেরিয়ায় আক্রান্ত হয়েছেন, এমন রোগীর সংখ্যা ছিল পাঁচ। এ বছর ওই সময়ের মধ্যে ভাইভ্যাক্স ম্যালেরিয়ায় আক্রান্ত হয়েছেন ৩১৬ জন। ফ্যালসিপেরাম ম্যালেরিয়ায় আক্রান্তের সংখ্যা ২৩। দু’ধরনের ম্যালেরিয়ার শিকার, এমন এক জন রোগীরই সন্ধান মিলেছে এখনও পর্যন্ত। গত বছরের ২৮ জুন পর্যন্ত কলকাতা পুর এলাকায় যেখানে ডেঙ্গিতে আক্রান্ত হয়েছিলেন ১৩২ জন, এ বার এখনও পর্যন্ত সেই সংখ্যা ৯৭।
গত বছরের তুলনায় ডেঙ্গি-ম্যালেরিয়ার এই পরিসংখ্যান আপাতদৃষ্টিতে স্বস্তিদায়ক হলেও নিশ্চিন্ত হতে পারছেন না পুর স্বাস্থ্য আধিকারিকেরা। তাঁদের বক্তব্য, কোভিড সংক্রমণ ঘিরে সমাজের বিভিন্ন স্তরে যে ছুতমার্গ রয়েছে, তার পরিপ্রেক্ষিতে সাধারণ মানুষের একটা বড় অংশের মধ্যে জ্বর লুকনোর প্রবণতা তৈরি হয়েছে। পাশাপাশি, করোনা খুব বেশি গুরুত্ব পাওয়ায় অন্য বছরের মতো এ বার ডেঙ্গি-ম্যালেরিয়া নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচি গতি হারিয়েছে বলে অভিযোগ।
স্বাস্থ্য আধিকারিকেরা জানাচ্ছেন, আগের মতো জ্বর হলেই মানুষ ডেঙ্গি বা ম্যালেরিয়ার পরীক্ষা করানোর জন্য পুর স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলিতে আসছেন না। এ-ও অভিযোগ, বাড়ি বাড়ি নজরদারির কাজে অনেক ক্ষেত্রে পুর স্বাস্থ্যকর্মীদের বাধা দেওয়া হচ্ছে। কোথাও আবার বাড়িতে ঢুকে মশার লার্ভা নিধন, জমা জল চিহ্নিত করার প্রশ্নে পুর স্বাস্থ্যকর্মীরাই দ্বিধা বোধ করছেন। স্বাস্থ্য দফতরের আধিকারিকদের আশঙ্কা, এই পরিস্থিতিতে আপাত স্বস্তিদায়ক পরিসংখ্যানই বর্ষার হাত ধরে দ্রুত অস্বস্তির কারণ হয়ে উঠতে পারে। বিশেষত যেখানে জুলাইয়ের শেষে বা অগস্টের গোড়ায় কোভিড-ডেঙ্গির যুগলবন্দি স্বাস্থ্য পরিকাঠামোর উপরে চাপ বাড়াতে পারে বলে পূর্বাভাস দিয়ে রেখেছেন জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞেরা।
ঘটনাচক্রে, শুক্রবারই কলকাতা পুরসভার এক মেডিক্যাল অফিসার করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন বলে খবর। তিনি যে স্বাস্থ্যকেন্দ্রের দায়িত্বে ছিলেন, এর পরে সেটি চালানো নিয়েই সাময়িক সঙ্কট তৈরি হয়েছে।
পুরসভা সূত্রের খবর, শহর কলকাতায় কোভিড সংক্রমণ শুরুর পরে এখনও পর্যন্ত ৫৭ জন চিকিৎসক কাজে আসা বন্ধ করে দিয়েছেন। চুক্তিভিত্তিক ৪৪ জন মেডিক্যাল অফিসার নিয়োগ সংক্রান্ত বিজ্ঞপ্তি জারি হলেও তাতে বিশেষ সাড়া মেলেনি। যার প্রেক্ষিতে কোনও চিকিৎসক করোনা আক্রান্তের সংস্পর্শে এলেও তাঁকে কোয়রান্টিনে পাঠাতে সমস্যা হচ্ছে। সম্প্রতি ৯১ নম্বর ওয়ার্ডে এ ধরনের একটি ঘটনায় জটিলতা তৈরি হওয়ার কথা জানা গিয়েছে। পুরসভা সূত্রের খবর, জাতীয় স্বাস্থ্য মিশন (এনইউএইচএম) প্রকল্পে পূর্ণ এবং আংশিক সময়ের মিলিয়ে ষাটোর্ধ্ব চিকিৎসক রয়েছেন ১৬৭ জন। পুর চিকিৎসকদের একাংশের বক্তব্য, সংক্রমণের মাত্রাবৃদ্ধির সঙ্গে বয়সজনিত কারণে যদি চিকিৎসকেরা কাজে আসা বন্ধ করে দেন তা হলে জটিলতা আরও বাড়বে।
এ ব্যাপারে পুরসভার চিকিৎসক-সংগঠনের সভাপতি মানস সোম বলেন, ‘‘পুরসভার চিকিৎসকদের বেতন অনেক কম। তার উপরে স্নাতকোত্তর পড়ার সুযোগ নেই। রাজ্য স্বাস্থ্য দফতরের এক জন হাউসস্টাফ এনইউএইচএম-এর মেডিক্যাল অফিসারের সমতুল বেতন পান। কিন্তু সেই তুলনায় তাঁদের কাজের চাপ অনেক বেশি। গত বছর সব পুর স্বাস্থ্যকেন্দ্র মিলিয়ে রোগীর সংখ্যা ছিল ২৫ লক্ষ। পুরসভায় নতুন চিকিৎসকদের কাজে আগ্রহী না-হওয়ার এটাও কারণ হতে পারে।’’
পুর স্বাস্থ্য দফতরের দায়িত্বপ্রাপ্ত তথা পুরসভার প্রশাসকমণ্ডলীর সদস্য অতীন ঘোষ জানান, লকডাউন-পর্বেও ১৪৪টি স্বাস্থ্যকেন্দ্রের মাধ্যমে লক্ষাধিক মানুষকে পরিষেবা দেওয়া হয়েছে। প্রায় সব ওয়ার্ডে দু’জন করে চিকিৎসক রয়েছেন। ট্রেন বন্ধ থাকার জন্য কয়েক জন চিকিৎসক কাজে যোগ দিতে না-পারায় কয়েকটি ওয়ার্ডে এক জন করে চিকিৎসক রয়েছেন ঠিকই। তবে চিকিৎসকের ঘাটতি নেই। অতীনবাবুর কথায়, ‘‘চুক্তিভিত্তিক পদে থাকা চিকিৎসকেরা ভাল জায়গায় সুযোগ পেলে অনেক সময়ে চলে যান। সে ক্ষেত্রে জাতীয় স্বাস্থ্য মিশন প্রকল্পে প্রতি মাসে চিকিৎসক নিয়োগের জন্য ইন্টারভিউ হয়।’’